খাদিজার জামিন শুনানি মুলতবিতে ক্ষোভ ৩১ সংগঠনের

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ১০ মাসেরও বেশি সময় ধরে কারাবন্দী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরার হাইকোর্টের জামিনাদেশ চেম্বার আদালত স্থগিত করায় এবং ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের আপিল শুনানি আপিল বিভাগ চার মাস মুলতুবি করায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ জানিয়েছে ‘প্রতিবাদী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো’।
শুক্রবার ৩১টি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা এক যৌথ বিবৃতিতে এ উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করলাম যে- বিনা বিচারে প্রায় এক বছর সময়কাল কারাবন্দি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরাকে হাইকোর্ট জামিন দেয়ার পর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই জামিনাদেশ স্থগিত করেন চেম্বার আদালত এবং ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে খাদিজার আপিল শুনানি আপিল বিভাগ চার মাস মুলতুবি করেছেন। জনগণের স্বাধীন মতপ্রকাশ সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার। কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো একটি নিবর্তনমূলক আইনে একজন নারী শিক্ষার্থী দীর্ঘ সময় ধরে কারাবন্দি থাকার পর হাইকোর্টের জামিনাদেশ পুনরায় চেম্বার আদালত কর্তৃক স্থগিত করা এবং সেই স্থগিতাদেশ খাদিজা কর্তৃক প্রত্যাহারের আপিল শুনানি আপিল বিভাগ কর্তৃক চার মাস মুলতুবি করার ফলে খাদিজাকে বিনা বিচারে আরও চার মাস কারাবন্দি থাকতে হবে। আমরা মনে করি, এইরূপ আদেশ জনগণের ন্যায়বিচার পাওয়ার পরিপন্থী।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘একজন শিক্ষার্থীর জীবনে যেখানে প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান, সেখানে খাদিজার মতো একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর বিনা বিচারে এক বছরের অধিক সময় আদালতের আদেশের ফলে কারাগারে বন্দি থাকতে দেখে দেশের কোটি কোটি জনগণের মতো আমরাও হতবাক, উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ।’
বিবৃতিতে প্রতিবাদী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর নেতারা বলেন, ‘আমরা অবিলম্বে জনগণের স্বাধীন মতপ্রকাশের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার পরিপন্থী নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল এবং ওই আইনে আটক খাদিজাসহ সব বন্দির মুক্তি দাবি করছি।’
বিবৃতিদাতা ৩১ সংগঠনের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, গণসংস্কৃতি কেন্দ্র, সংহতি সংস্কৃতি সংসদ, সমাজ অনুশীলন কেন্দ্র, বাংলাদেশ গণশিল্পী সংস্থা, সাংস্কৃতিক ইউনিয়ন, রাজু বিতর্ক অঙ্গন, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ভাগ্যকুল পাঠাগার ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, সমগীত সংস্কৃতি প্রাঙ্গণ, প্রগতি লেখক সংঘ, গণসংস্কৃতি পরিষদ, স্বদেশ চিন্তা সংঘ, বাংলাদেশ থিয়েটার, তীরন্দাজ, রণেশ দাশগুপ্ত চলচ্চিত্র সংসদ, এই বাংলায়, ঢাকা ড্রামা, বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চ, বিবর্তন নাট্যগোষ্ঠী-সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ মূকাভিনয় ফেডারেশন, ধাবমান সাহিত্য আন্দোলন, থিয়েটার ’৫২, সমাজতান্ত্রিক বুদ্ধিজীবী সংঘ, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী পরিষদ, শহীদ আসাদ পরিষদ, মাদল, বটতলা-এ পারফরমেন্স স্পেস, সমাজ চিন্তা ফোরাম ও চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।
প্রসঙ্গত, খাদিজা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। অনলাইনে সরকারবিরোধী বক্তব্য প্রচারসহ দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের অভিযোগে ২০২০ সালের অক্টোবরে খাদিজা ও অবসরপ্রাপ্ত মেজর দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পৃথক দুটি মামলা হয়। একটি মামলা রাজধানীর কলাবাগান থানায়, অপরটি নিউমার্কেট থানায়। দুটি মামলার বাদীই পুলিশ। গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর খাদিজাকে গ্রেপ্তার করে নিউমার্কেট থানা-পুলিশ। তখন থেকে তিনি কারাগারে।
এমএল/এমজে