৪১তম বিসিএসে পশুসম্পদে প্রথম বাকৃবির ফেরদৌস

স্বপ্ন ছিল প্রকৌশলী হওয়ার। কিন্তু সেই স্বপ্নের পথে ভাগ্য সাই দিল না। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পদার্থবিজ্ঞানে জিপিএ-৫ না পাওয়ায় থেমে যেতে হয় সেখানেই।
তবে দমে যাননি ফেরদৌস হাসান ফারুক। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে হয়েছেন বিসিএস ক্যাডার। শুধু কি তাই! সম্প্রতি প্রকাশিত ৪১তম বিসিএসে পশুসম্পদ (এ.এইচ) ক্যাডারে প্রথম হয়েছেন তিনি। অধ্যবসায়, চেষ্টা, আর সফলতা অর্জনের ক্ষুধা যে মানুষকে কত দূর নিয়ে যায়, তা আবারও করে দেখালেন ফেরদৌস।
প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ না হওয়ায় ২০১২-১৩ বর্ষে ভর্তি হন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে পশুপালন অনুষদ থেকে স্নাতক ও পশুবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন তিনি।
২০১৭ সালে স্নাতক শেষ করে বিসিএসের পড়া শুরু করেন। কিন্তু সেখানেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় শারীরিক অসুস্থতা। ৩৮ ও ৪০তম বিসিএস প্রিলিতে অকৃতকার্যও হন। এরপর ২০২০ সালে যখন করোনা মহামারি শুরু হয়, ঘরবন্দি সেই সময়ে তখন পুরোদস্তুর প্রস্তুতি সেরে ফেলেন। যার ফলশ্রুতিতে ৪১তম বিসিএসে প্রিলি, লিখিত পরীক্ষা পাস করে মৌখিক পরীক্ষা শেষে ফাইনাল ফলাফলে পশুসম্পদ (এ.এইচ) ক্যাডারে প্রথম স্থান অর্জন করেন ফেরদৌস।
তবে বিসিএস যাত্রাটা বড় ভাইদের থেকে প্রেরণা বা দেখানো পথ থেকেই শুরু হয়। ফেরদৌস বলেন, ২০১৩ সালে বাকৃবিতে ভর্তি হয়ে শহীদ নাজমুল আহসান হলে ওঠি। তখন থেকেই দেখি বিভিন্ন সময় বিসিএসের রেজাল্ট দেয় আর বাকৃবি থেকে অমার রুমমেট ও ফ্লোরমেট বড় ভাইয়েরা বিভিন্ন ক্যাডারপ্রাপ্ত হন। তখন থেকে মনে মনে একটা সুপ্ত বাসনা তৈরি হতে থাকে। আর মনে হয় বাকৃবি তো ক্যাডার তৈরির আতুরঘর, সবাই যদি পারে আমিও পারব ইনশাআল্লাহ।
বিসিএসের লড়াইয়ের মতোই ফেরদৌসের জীবনের গল্পটাও সংগ্রামের। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবাকে হারান। এরপর সংসারের দায়িত্ব তুলে নেন মা। মায়ের স্বপ্ন ছিল তার দুই ছেলে মেয়ে যেন বড় হয়ে মানুষের মতো মানুষ হয় এবং সমাজ ও দেশের একজন হয়ে উঠতে পারে। প্রত্যন্ত গ্রামে বাড়ি হওয়ায় খালাতো ভাইয়ের পরামর্শে লালমনিরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন ফেরদৌস। লালমনিরহাট থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে তিনি আবার গ্রামে ফিরে আসেন। ৪১তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার সময় একমাত্র বোনের বিয়েতেও যাওয়া সম্ভব হয়নি। ফাইনাল রেজাল্টের দিন বোন আর মায়ের সঙ্গে ছিলেন। রেজাল্ট দেখে খুশিতে কান্না করেন ফেলেন তার মা।
নিজের সফলতার পেছনে মায়ের অবদান উল্লেখ করে তিনি বলেন, নানা প্রতিকূলতা ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমার মা আমাকে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। আজ প্রথম হয়ে মনে হয় আমার মা প্রথম হয়েছে। তিনি একজন অপরাজিতা। কৃতজ্ঞতা সেই মহান আল্লাহর ও সেই সব মানুষগুলোর প্রতি যারা এতোটা পথ আসতে সাহায্য করেছে।
যারা বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন দেখেন সেইসব অনুজদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বিসিএসে সফল হতে প্রয়োজন একটা সুন্দর প্রস্তুতি এবং নিয়মিত পড়াশোনা করা। প্রিলি ও লিখিত একসঙ্গে প্রস্ততি নিলে খুব ভালো হয়। একেকজনের কৌশল একেক রকম তাই নিজের একটা স্বকীয় কৌশল তৈরি করে এগোতে হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ কাউকে ফেরাবেন না।
মুসাদ্দিকুল ইসলাম তানভীর/এমএএস