গুলিতে আহত রাবি শিক্ষার্থী, আনা হয়েছে ঢাকায়
শিক্ষার্থীদের অসহযোগ আন্দোলনে সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে পাবনায় চলমান আন্দোলনে অংশ নিয়ে চোখে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী দ্বীপ মাহবুব। বিক্ষোভে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গুলি চালান বলে অভিযোগ উঠেছে।
রোববার (৪ আগস্ট) বেলা ১২টায় জেলার এডওয়ার্ড কলেজের সামনে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে গুলি চালানোর এ অভিযোগ উঠে।
চোখে গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থী দ্বীপকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে রেফার করেন।
আরও পড়ুন
এদিন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে শহরে প্রবেশ করলে পুলিশ তাদের আটকে দেন। এসময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবু সাঈদ খানের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা শহরে দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। পরে আন্দোলন প্রতিহত করতে রাজপথে মিছিল বের করেন।
অভিযোগ উঠেছে, এ সময় আওয়ামী লীগ নেতা আবু সাঈদ খান শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি চালান। ঘটনাস্থলেই ২ শিক্ষার্থী নিহত হন। হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয় একজনের। এছাড়া গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন রাবি শিক্ষার্থী দ্বীপ মাহবুব। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, আহত অবস্থায় প্রথমে তাকে পাবনা হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অপারেশন করে গুলিবিদ্ধ চোখটি ফেলে দেওয়া হয়। গুলি চোখ দিয়ে ঢুকে ব্রেনে প্রবেশ করায় গুলি অপসারণ করা সম্ভব না হওয়ায় জরুরি ভিত্তিতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় তাকে। পরে রামেকের নিউরো সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হলে অবস্থা গুরুতর দেখে ঢাকা মেডিকেল কলেজে রেফার করেন কর্তব্যরত সেখান থাকা চিকিৎসকরা।
এদিকে, গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পেয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশ শিক্ষক তাকে দেখতে ছুটে যান রাজশাহীর মেডিকেল কলেজে। পরে তাকে রাত ৮টায় অ্যাম্বুলেন্স যোগে ঢামেকে পাঠানো হয়।
এসময় হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন আইবিএ অধ্যাপক ড. শরিফুল ইসলাম, অধ্যাপক ডক্টর মোহা: হাছানাত আলী, সহযোগী অধ্যাপক মো. আতিকুল ইসলাম, ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আমজাদ হোসেন, কৃষি অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আলিম, বায়োক্যামেস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক ড. আমিরুল ইসলাম, মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ফরিদুল ইসলাম ও
আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. ইফতেখারুল আলম মাসউদ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দ্বীপের বড় ভাই মজিদ বলেন, আমার ভাই গুরুতর আহত। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে তাকে ঢাকায় নিয়ে যেতে বলেছে। আমরা ইতোমধ্যে রওয়ানা দিয়েছি। সবাই আমার ভাইয়ের জন্য দোয়া করবেন।
অধ্যাপক ড. মো. ফরিদুল ইসলাম বলেন, এ দৃশ্য চোখে দেখা যায় না। মনে হয় সরকার শুধু তাকে নয় পুরো বাংলাদেশের চোখে গুলি করে অন্ধ করে রাখতে চায়। দ্বীপ আগের মতোই আমাদের মাঝে আবারও ফিরে আসুক সেই প্রত্যাশা রাখছি।
অধ্যাপক ড. মোহা. হাছানাত আলী বলেন, এমনটা কখনোই কাম্য না। স্বাধীন দেশে অধিকারের কথা বলতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হতে হয়। চিরদিনের জন্য আমার শিক্ষার্থীর একটি চোখের আলো নিভে গেল। এ আন্দোলনে আর কত রক্ত আমাদের দেখতে হবে। একজন পিতা হিসেবে এ রক্ত আর নিতে পারছি না। আমি দ্বীপের জন্য আল্লাহ ছাত্র সমাজের কাছে দোয়া চাই, সে আবারও আমাদের মাঝে স্বাভাবিকভাবে ফিরে আসুক সেই প্রত্যাশা করছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক্তার রাজিত বলেন, তার মাথার কান বরাবর বুলেটটি প্রবেশ করেছে। যাতে ব্রেনে আঘাত লেগেছে। তার খুব যন্ত্রণা হচ্ছিল তবে ওষুধ দেওয়ায় হয়তো কিছুটা কমেছে। অবস্থা গুরুতর দেখায় তাকে ঢাকায় রেফার করা হয়।
জুবায়ের জিসান/এমএসএ