উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে কুয়েট শিক্ষার্থীদের কফিন মিছিল

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কফিন মিছিল বের করেছেন। বুধবার (২৩ এপ্রিল) সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারের সামনে থেকে মিছিলটি বের হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্বার বাংলার পাদদেশের সামনে দিয়ে মিছিলটি প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেয়। সেখানে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
এ সময় ‘আমার ভাই মরছে, ভিসি কেন হাসছে’, ‘আমার ভাই শয্যায়, ভিসি কেন ক্ষমতায়’, ‘দেখ ভিসি চোখ খুলে, আমরা গুটিকয়েক নারে’, ‘এক-দুই-তিন-চার, ভিসি তুই গদি ছাড়’, ‘আমার ভাই অনশনে, ভিসি কেন নিজ আসনে’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা।
এরপর স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারের সামনে গিয়ে মিছিলটি শেষ করেন তারা। কফিন মিছিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন।

এদিকে, কুয়েটের ৩৭ শিক্ষার্থীর সাময়িক বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ছাড়া সভায় আজ বিকেলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ৪ মে থেকে চালু করা হবে। বুধবার (২৩ এপ্রিল) কুয়েট সিন্ডিকেটের ১০২তম (জরুরি) সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৪ এপ্রিল অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ১০১তম (জরুরি) সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক আগামী ৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চালু করা এবং ২ মে আবাসিক হলসমূহ খোলার বিষয়ে বলা হয়। বুধবার (২৩ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ১০২তম (জরুরি) সভার সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলসমূহ ২ মে-এর পরিবর্তে আজ ২৩ এপ্রিল বিকেলে খোলা হবে। আর অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ৪ মে থেকে চালু করা হবে।
আরও পড়ুন
অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার নয়
শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরারের সঙ্গে আলোচনার পরও আমরণ অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার করেনি আন্দোলনরত কুয়েট শিক্ষার্থীরা। বুধবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা কুয়েটে আসেন এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেন।
এ সময় শিক্ষা উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের দাবি শোনেন এবং তাদের অনশন ভেঙে আইনের ওপর আস্থা রাখার অনুরোধ করেন। শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, তদন্ত কমিটি করা হয়েছে, কমিটি দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে। সেই অনুযায়ী জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা হবে।
তিনি এ সময় অসুস্থ শিক্ষার্থীদের দ্রুত চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন। তবে শিক্ষার্থীরা উপদেষ্টার আশ্বাসে আশ্বস্ত না হয়ে কুয়েট উপাচার্যকে অপসারণ না করা পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তিন সদস্যের কমিটি এসে সকাল থেকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলছেন।
এদিকে দুপুরে কুয়েটের প্রশাসনিক ভবনের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে কুয়েট শিক্ষক সমিতির নেতারা বলেন, চাপ দিয়ে উপাচার্যকে অপসারণ করা হলে তা মেনে নেওয়া হবে না। অন্যথায় অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখার হুঁশিয়ারি দেন তারা। এ ছাড়া শিক্ষা উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বললেও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা না বলায় হতাশা প্রকাশ করেন শিক্ষকরা। সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
এর আগে, গত ১৪ এপ্রিল রাতে জরুরি সিন্ডিকেট সভায় বিগত ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়। পাশাপাশি তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির কাছে প্রেরণের নির্দেশ প্রদান করা হয়।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক আহত হন। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব অ্যাকাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। ওই দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
মোহাম্মদ মিলন/এএমকে