প্রদর্শনী থেকে ছবি সরানো নিয়ে যা বলল ঢাবি শিবির

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত '৩৬ জুলাই' কর্মসূচির মাধ্যমে বিচারহীনতা, রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড ও তথাকথিত বিচারের নামে প্রতিহিংসামূলক শাসনের চিত্র জনসমক্ষে তুলে ধরার উদ্যোগে ফুঁসে উঠেছে শাহবাগ ঘরানার তথাকথিত বাম ছাত্র সংগঠনগুলো। তাদের মদদপুষ্ট একটি মব পরিকল্পিতভাবে আক্রমণ চালিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার শান্তিপূর্ণ প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক কর্মসূচিতে। ফ্যাসিবাদী অপশাসনের মুখোশ উন্মোচন করা শিবিরের এই আয়োজনকে ধামাচাপা দিতেই এই আক্রমণ সংঘটিত হয়েছে বলে দাবি করেছে সংগঠনটি।
এছাড়া প্রদর্শনী থেকে ছবি সরিয়ে নেওয়ার কারণও জানিয়েছে তারা।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রচার সম্পাদক মোঃ সাজ্জাদ হোসাইন খাঁন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব অভিযোগ তুলে ধরা হয়।
এতে বলা হয়, ‘৩৬ জুলাই’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনামলে সংঘটিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, ও কথিত যুদ্ধাপরাধ বিচারের নামে পরিচালিত রাষ্ট্রীয় প্রতিহিংসার তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরা হচ্ছিল। আমরা দেখিয়েছি—কীভাবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার একটি ভুয়া ও পাতানো বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূলের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। এটি ছিল ফ্যাসিবাদের নির্মম ইতিহাস ও অন্যায় কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আমাদের সাংস্কৃতিক প্রতিবাদের অংশ।
তবে এই সত্যের মুখোমুখি হতে না পেরে কিছু বামপন্থি ছাত্রসংগঠন মব তৈরি করে কর্মসূচিতে হামলা চালায় এবং অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়।
সংগঠনটি আরও বলেছে, বিশেষ করে শাহবাগ ঘরানার তথাকথিত বাম চেতনাধারীরা আমাদের বক্তব্যে অস্বস্তি বোধ করেছে। কারণ, ২০১৩ সালে তারাই বিচারকে গণদাবির নামে জনরোষে পরিণত করে, শাহবাগকে রায় ঘোষণার মঞ্চ বানায় এবং মব জাস্টিসকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়।
এই শাহবাগ ঘরানা গুম, ক্রসফায়ার, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতির বীজ রোপণ করেছে। তারা কখনোই আইনের শাসনে বিশ্বাস করেনি, বরং আইনকে মাথা নত করতে বাধ্য করেছে। নিজেদের বিরুদ্ধে আইনগত চ্যালেঞ্জের সাহস দেখায়নি, বরং প্রতিপক্ষকে 'রাজাকার' তকমা দিয়ে স্তব্ধ করাই ছিল তাদের রাজনীতি। — যোগ করে শিবির।
নিজেদের প্রদর্শনী থেকে দেলোয়ার হোসেইন সাঈদী, নিজামীসহ কয়েকজন নেতা ও বিএনপি নেতা সাকা চৌধুরীর ছবি সরিয়ে নেওয়ার প্রসঙ্গে শিবির বলেছে, বাম সংগঠনগুলোর বাধা ও উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রশিবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং ক্যাম্পাসের সার্বিক শৃঙ্খলার কথা বিবেচনায় নিয়ে প্রদর্শনীর কিছু নির্দিষ্ট উপকরণ সরিয়ে নিতে অনুরোধ জানায়। শিবির প্রশাসনের অনুরোধকে সম্মান জানিয়েছে এবং সহযোগিতা করেছে, যা রাজনৈতিক পরিপক্বতা ও দায়িত্বশীলতার পরিচায়ক।
ঢাবি শিবিরের জানায় — বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি সম্মান রেখেই আমরা প্রদর্শনীর নির্দিষ্ট অংশ সরিয়ে নিতে সম্মত হই। প্রশাসনের অনুরোধে এই কাজটি প্রক্টর অফিসের তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হয়েছে।
তারা আরও বলেছে, যারা ৩৬ জুলাই উদযাপনকে বিতর্কিত করতে চায়, তারা আসলে নতুন ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা ও বিচারিক হত্যাকাণ্ডকে বৈধতা দিতেই এসব করছে। সেই সঙ্গে তাদের উদ্দেশ্য হলো আসন্ন ডাকসু নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ ও প্রতিহত করা।
বিবৃতিতে ছাত্রশিবির জানায়, বিচারহীনতা, গুম ও মব সংস্কৃতির সূচনা হয়েছিল শাহবাগ থেকে।এই বাম চক্রই দেশে বিভাজনের রাজনীতিকে প্রতিষ্ঠা করেছে। আর আজ তারা ইতিহাসের প্রান্তরে পরাজিত হয়েছে।
গণমাধ্যমে কিছু বামপন্থি কর্মীকে ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’ হিসেবে উপস্থাপন করার অপচেষ্টারও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে ছাত্রশিবির। তারা বলেছে, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। মূলত বাম ঘরানার জনবিচ্ছিন্ন কিছু গোষ্ঠীই এই হামলার পেছনে রয়েছে।
অতীতের প্রসঙ্গ টেনে সংগঠনটি বলেছে, ১৯৭৩ সালে বাকশালের মাধ্যমে দেশে একদলীয় ফ্যাসিবাদী শাসনের বীজ বপন করেছিল বাম রাজনীতির বড় একটি অংশ। ২০০৯ সালে সেই বীজকে পুনরায় লালন-পালন করেছে শেখ হাসিনার সরকার। এই দীর্ঘ ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধেই ‘৩৬ জুলাই’ কর্মসূচি এক ধরনের প্রতীকী প্রতিবাদ।
সংগঠনটি শিক্ষক, প্রশাসন, শিক্ষার্থী ও সকল রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের প্রতি শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচির সফল সম্পন্নতায় সহযোগিতা কামনা করেছে।
এসএআর/এমটিআই