৬ ঘণ্টা পর রেলপথ অবরোধ প্রত্যাহার, রাজশাহী থেকে ট্রেন চলাচল শুরু

টানা ছয় ঘণ্টা পর রেলপথ অবরোধ তুলে নেওয়ায় রাজশাহীর সঙ্গে সারাদেশের ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। রোববার (২৩ নভেম্বর) রাত ৮টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বিসিএস প্রিলিমিনারি পাস করা শিক্ষার্থীরা এই অবরোধ তুলে নেন। এর আগে দুপুর আড়াইটা থেকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় রেলওয়ে স্টেশনে অবস্থান নেন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা রেললাইনে বসে বিভিন্ন স্লোগান দেন এবং রেললাইনের ওপর টায়ার জ্বালান। তাদের সঙ্গে কথা বলতে বিকেলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের কর্মকর্তারা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে যান। তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বললেও তখন শিক্ষার্থীরা অবরোধ প্রত্যাহার করেনি। পরে কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল থেকে ফিরে যান।
এরপর রাত ৮টার দিকে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেন। এ সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিসিএস প্রিলিমিনারি পাস করা শিক্ষার্থী মাহবুব আলম। তিনি বলেন, আমাদের দাবি যৌক্তিক ছিল। কিন্তু পিএসসি তাদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় আমরা কঠোর অবস্থানে যেতে বাধ্য হয়েছিলাম। গতকাল এবং আজ আমরা রেল অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছি। এতে ট্রেন আটকে থাকায় জনদুর্ভোগ হচ্ছিল। আমরা সেটা আর বাড়াতে চাই না। তাই আজকের মতো কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হলো।
এদিকে, ৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে রেলপথ অবরোধের কারণে ছয় ঘণ্টায় রাজশাহী থেকে বিভিন্ন রুটে চলাচল করা নয়টি ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় হয়েছে।
রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শনিবার (২২ নভেম্বর) শিক্ষার্থীরা দীর্ঘক্ষণ রেলপথ অবরোধ করে রেখেছিল। এর ফলে সেদিনও ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় ঘটে। পরদিন রোববারও (২৩ নভেম্বর) শিক্ষার্থীরা রেললাইনে অবস্থান নিয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখে। এতে যে সিডিউল বিপর্যয় হয়েছে।
অন্যদিকে, হঠাৎ ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েন। কেউ দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে টিকিট জমা দিয়ে টাকা ফেরত নেন। কেউ বিকল্প হিসেবে বাসে যাত্রা করেন। আবার কেউ ট্রেন ছাড়ার অপেক্ষায় সিটেই বসে থাকেন।
রাজশাহীতে বোনের বাসায় বেড়াতে আসা সুলতানুর রহমান বলেন, তাদের বাড়ি ঢাকার কমলাপুর এলাকায়, তাই তিনি যাতায়াতে বেশিরভাগ সময় ট্রেন ব্যবহার করেন। তিনি বলেন, শনিবার যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু একই কারণে যেতে পারিনি। স্টেশনে এসে আবার বোনের বাসায় ফিরে গেছি। ভাবলাম, রোববার যাব। কিন্তু স্টেশনে এসে দেখি একই অবস্থা, ট্রেন ছাড়ার কোনো নিশ্চয়তা নেই। সোমবার বাসায় জরুরি কাজ আছে, তাই আর বোনের বাসায় ফিরছি না। ট্রেন যখনই ছাড়ুক, ঢাকা যেতেই হবে।
রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা জানায়, কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস রাজশাহী থেকে দুপুর আড়াইটা সময়ে ছাড়ার কথা থাকলেও ছাড়তে পারেনি। রাজশাহী-ফরিদপুর রুটের টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেসও বিকেল সাড়ে ৩টায় ছাড়তে পারেনি। রাজশাহী-ঢাকা রুটে চলাচলকারী আন্তঃনগর পদ্মা এক্সপ্রেসও স্টেশনে অবস্থান করছে। এটি বিকেল চারটায় ছাড়ার কথা ছিল। বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে রাজশাহী-পাবনা রুটের ঢালারচর এক্সপ্রেস ছাড়ার কথা থাকলেও তা নির্ধারিত সময়ে ছাড়তে পারেনি। এছাড়া আন্তঃনগর বনলতা এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে এসে হরিয়ান স্টেশনে আটকে আছে।
অপরদিকে, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের দৌলতপুর স্টেশনেও একই দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। সেখানে চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১০ ট্রেনটি দৌলতপুর স্টেশনে আটকে আছে। সুন্দরবন এক্সপ্রেসও দৌলতপুর স্টেশনে অবস্থান করছে। এছাড়া রাজশাহী-খুলনা রুটের সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস খুলনা স্টেশনে এবং ১৬ মহানন্দা এক্সপ্রেস নোয়াপাড়া স্টেশনে বিলম্বে অবস্থান করছে।
এ বিষয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সহকারী চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট আব্দুল আওয়াল বলেন, শিক্ষার্থীরা রেলপথ অবরোধ তুলে নিয়েছে। বিভিন্ন স্টেশনে আটকে থাকা ট্রেনগুলো পর্যায়ক্রমে ছাড়বে। তবে কোনো ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়নি। শনিবার ও রোববার যে সিডিউল বিপর্যয় হয়েছে, তা ঠিক করতে কমপক্ষে ৫ দিন সময় লাগবে। যদি সাপ্তাহিক ছুটি না থাকতো, তাহলে আরও বেশি সময় প্রয়োজন হতো।
শাহিনুল আশিক/এআরবি