সরকার ও ড্যাফোডিলের সহযোগিতায় কোর্ট অটোমেশন সিস্টেম

বাংলাদেশে বিচারব্যবস্থার ডিজিটাল রূপান্তরে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত ভবনের জগন্নাথ-সোহেল স্মৃতি মিলনায়তনে প্রথমবারের মতো সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ই-ফ্যামিলি কোর্ট কার্যক্রম উদ্বোধন করেছে। জাতীয় পর্যায়ের এই যুগান্তকারী ডিজিটাল রূপান্তরের মূল প্রযুক্তিগত সহযোগী হিসেবে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সেন্টার ফর সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ইমার্জিং টেক এবং ড্যাফোডিল সফটওয়্যার লিমিটেড (ডিএসএল) দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল কোর্ট ম্যানেজমেন্ট ও কেস অটোমেশন সলিউশন তৈরি করেছে।
বাস্তবায়ন ও নতুন বিচারিক সংস্কার সরকার ঘোষিত এই ই-ফ্যামিলি কোর্ট প্ল্যাটফর্মটি ২৪ নভেম্বর থেকে ঢাকা পারিবারিক আদালত-৫ এ চালু হয়েছে এবং আগামী ৩০ নভেম্বর থেকে চট্টগ্রাম পারিবারিক আদালত-১ এ চালু হচ্ছে। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পারিবারিক মামলার অনলাইন দাখিল, নথি ব্যবস্থাপনা এবং সীমিত পর্যায়ে অনলাইন শুনানির সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা বিচারপ্রার্থীদের সময়, ব্যয় ও ভোগান্তি কমিয়ে একটি কার্যকর ও আধুনিক বিচারসেবার পথ গড়ে দিচ্ছে।
উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর ড. আসিফ নজরুল, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা; সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা; ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী; ড. মো. সবুর খান, প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির; প্রফেসর ড. এম. আর. কবির, উপাচার্য, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি; প্রফেসর ড. শেইখ রাশেদ হায়দার নূরী, বিভাগীয় প্রধান, সিএসইসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, সিএসসি বিভাগের শিক্ষার্থী, সরকারি প্রতিনিধি এবং শিক্ষাবিদ।
আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল প্রধান অতিথি হিসেবে এই যুগান্তকারী কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। মূল প্রযুক্তিগত সহযোগী ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সেন্টার ফর সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ইমার্জিং টেক এবং ড্যাফোডিল সফটওয়্যার লিমিটেড যৌথভাবে দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল কোর্ট ম্যানেজমেন্ট ও কেস অটোমেশন সলিউশন তৈরি করেছে।
অতিথিদের বক্তব্য অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, ই-জুডিশিয়ারি ও ই-রেজিস্ট্রেশন প্রকল্প আমরা শুরু করে দিয়ে যাব। আশা করি, প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আইনজীবীরা আরও বেশি সেবা দিতে পারবেন এবং সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এই পেপারলেস সিস্টেমের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, এটি পরিবেশ সুরক্ষায় ভূমিকা রাখবে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (আইসিটি) ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব উল্লেখ করেন, এই ডিজিটাল কার্যক্রম আইনজীবীদের কর্মদক্ষতা বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান তার বক্তব্যে বলেন, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়নকে এগিয়ে নেওয়ার যে অঙ্গীকার আমরা দীর্ঘদিন ধরে লালন করে আসছি– এই উদ্যোগ তারই বাস্তবপ্রমাণ। আমরা বিশ্বাস করি, বাস্তব জনসেবামূলক সমস্যার সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। ই-ফ্যামিলি কোর্ট এবং অটোমেশন সলিউশন হলো এক উজ্জ্বল উদাহরণ– যেখানে একাডেমিক দক্ষতা ও সরকারি অগ্রাধিকার একসঙ্গে যুক্ত হয়ে রূপান্তরমূলক, বিস্তৃত এবং টেকসই জাতীয় প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের অনেক বড় সমস্যা এখনকার তরুণ প্রজন্ম– বিশেষ করে আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করেই সমাধান করা সম্ভব। তরুণরা চাইলে প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও সামাজিক উদ্যোগ একত্রে ব্যবহার করে দেশের সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জগুলোরও সমাধান করে দেখাতে পারে। যদি আমরা তুরাগ নদীকে পরিষ্কার করতে পারি, তবে সেই একই শক্তি ও সক্ষমতা দিয়ে ঢাকাকেও হংকং-এর মতো আধুনিক, পরিচ্ছন্ন ও স্মার্ট শহরে রূপান্তর করা সম্ভব। ভবিষ্যতে আমরা চাইলে ঢাকাকে একটি কার্যকর, প্রযুক্তিনির্ভর ও সুপরিকল্পিত নগর মডেলে উন্নীত করতে পারব– এ ব্যাপারে তরুণদের ভূমিকা হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত উপদেষ্টামণ্ডলী ও বক্তারা জাতীয় পর্যায়ের এই যুগান্তকারী ডিজিটাল রূপান্তর উদ্যোগে সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিকে গভীরভাবে সাধুবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
প্রযুক্তির ব্যবহার নতুন এই অটোমেশন সিস্টেম ও ই-কোর্ট কার্যক্রমের ফলে বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীরা নিম্নোক্ত সুবিধাসমূহ পাবেন–
২৪/৭ অনলাইন রেজিস্ট্রেশন: সপ্তাহের ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা যেকোনো সময় মামলার রেজিস্ট্রেশন এবং অনলাইন শিডিউলিংয়ের সুবিধা।
ঘরে বসেই বিচারসেবা: বিচারপ্রার্থীরা ঘরে বসেই মামলার ফাইলিং এবং ফি পেমেন্ট সম্পন্ন করতে পারবেন, যা যাতায়াত খরচ ও ভোগান্তি কমাবে।
স্বচ্ছতা ও দুর্নীতি হ্রাস: সম্পূর্ণ ডিজিটাল প্রক্রিয়ার ফলে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য এবং দুর্নীতি উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাবে।
পেপারলেস নথি ব্যবস্থাপনা: সনাতন কাগজের নথির পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব ডিজিটাল নথি বা ‘পেপারলেস সিস্টেম’ প্রবর্তন।
লিগ্যাল এইড ইন্টিগ্রেশন: পারিবারিক বিরোধ দ্রুত মীমাংসার জন্য লিগ্যাল এইড ও আদালতের সমন্বিত ডিজিটাল ব্যবস্থা।
অনলাইন শুনানি: সীমিত পরিসরে অনলাইনে শুনানির সুযোগ, যা বিচারিক কার্যক্রমে গতিশীলতা আনবে।
আইনজীবীদের কর্মদক্ষতা: ডিজিটাল ডেটাবেজ এবং দ্রুত কেস ট্র্যাকিং সুবিধার ফলে আইনজীবীরা মক্কেলদের আরও দ্রুত সেবা দিতে পারবেন।
কোনো সরকারি অনুদান ছাড়াই তৈরি এই উচ্চমানের সফটওয়্যারটি ইতোমধ্যে বিচার বিভাগ, আইন মন্ত্রণালয় ও সুপ্রিম কোর্টের ২৫০-৩০০ জন কর্মকর্তার মধ্যে সফলভাবে পরীক্ষামূলক চালানো হয়েছে।
এ উদ্যোগ শুধু বিচারব্যবস্থাকেই নয়, সমগ্র জাতির ডিজিটাল গভর্নেন্স কাঠামোকে আরও দৃঢ় ও কার্যকর করে তুলবে। বিশ্ববিদ্যালয়-সরকার-প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সমন্বয়ের এই মডেলের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রশাসনিক সেবা হবে দ্রুত, স্বচ্ছ, পেপারলেস এবং নাগরিকবান্ধব। ভবিষ্যতে এটি শুধু মামলার ত্বরান্বিত নিষ্পত্তি নিশ্চিত করবে না, বরং জনগণের জন্য সম্যক তথ্য অ্যাক্সেস, প্রশাসনিক জট কমানো এবং সরকারি সেবার মান বৃদ্ধি করবে। এই উদ্ভাবনী পদক্ষেপ বাংলাদেশের ডিজিটাল বাংলাদেশ কল্পনাকে বাস্তব রূপ দিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে স্বীকৃত হবে।
এসএসএইচ
