যবিপ্রবিতে সংঘর্ষ, ছাত্রীকে উত্ত্যক্তের অভিযোগে দোকানদার গ্রেপ্তার

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে মোনায়েম নামে এক দোকানদারকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথবাহিনী। বুধবার (২৬ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. ওমর ফারুক বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। এরপর দুপুরে অভিযান চালিয়ে দোকানদার মোনায়েম হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি যশোর সদর উপজেলার ছাতিয়ানতলা গ্রামের মৃত হারুন অর রশিদের ছেলে।
যশোর কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসনাত বলেন, গত সোমবার (২৪ নভেম্বর) রাতে যবিপ্রবির এক নারী শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের সামনে আমবটতলা মোড়ে মোনায়েম টেলিকম নামে একটি ইলেকট্রনিক্স দোকানে যান। দোকানদার এক পর্যায়ে ওই শিক্ষার্থীকে উত্ত্যক্ত করেন। পরে ক্ষিপ্ত হয়ে যবিপ্রবির কয়েকজন শিক্ষার্থী সেখানে গেলে মোনায়েম তাদের হুমকি দেন। এরপর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় দোকানদারদের সংঘর্ষ বাধে।
তিনি জানান, এ ঘটনায় আজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শ্লীলতাহানির মামলা করে। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত দোকানদার মোনায়েম হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। বিকেলে আদালতে সোপর্দ করলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এই সংঘর্ষে ২ জন সাংবাদিকসহ ২৭ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এম আর খান মেডিকেল সেন্টার, যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল ও চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকটস্থ আমবটতলা বাজার এলাকায় সংঘর্ষ শুরু হয়।
এ বিষয়ে কেমিকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সাব্বির বলেন, আমাদের এক জুনিয়র ছাত্রীকে একজন দোকানদার অশালীন ভাষায় যৌন হয়রানি করেন। বিষয়টি জানার পর আমরা কয়েকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করি। তখন ছাত্রীটি কান্না করে জানায়, দোকানদার তার সঙ্গে অসভ্যভাবে কথা বলেছেন। আমরা তাকে অনুরোধ করি আমাদের ছোট বোনের কাছে ক্ষমা চাইতে। কিন্তু ক্ষমা না চেয়ে তিনি বাজার কমিটির কয়েকজনকে ডেকে এনে আমাদের মারধর করেন। এতে আমি, আমার জুনিয়র এবং ব্যাচমেট সবাই আহত হই। কোনোভাবে জীবন বাঁচাতে আমরা সেখান থেকে পালিয়ে আসি। এরপর তাৎক্ষণিকভাবে প্রক্টর এবং ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালককে ফোনে জানাই।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংবাদ সংগ্রহের সময় ছোড়া ইটপাটকেলে আহত হন ডেইলি ক্যাম্পাসের সাংবাদিক জহুরুল ইসলাম ও রাইজিংবিডির ইমদাদুল ইসলাম। উত্তেজিত জনতা সাংবাদিকদের ফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে এবং একপর্যায়ে সাংবাদিক সাব্বির হোসেনের সাইকেল পুড়িয়ে দেয়।
এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল বডি চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে সংঘর্ষ আরও ব্যাপক আকার ধারণ করে। রাত ৯টার দিকে সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশের যৌথবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষসহ আরও অনেকে আহতদের দেখতে মেডিকেল সেন্টারে যান। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সময়মতো ঘটনাস্থলে না আসায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা উপাচার্য ও প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগের দাবিতে তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন।
এ বিষয়ে প্রক্টর ড. মো. ওমর ফারুক বলেন, এক ছাত্রীকে ইভটিজিংকে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষ হয়েছে। আমরা শিক্ষকরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছি, কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আসতে দেরি করায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। সংঘর্ষে আমাদের বহু শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা ভিসি স্যারকে অবরুদ্ধ করে ৬ দফা দাবি তোলে। পরে সব দাবি পূরণের আশ্বাস দেওয়া হয় এবং আসামিকে গ্রেপ্তার নিশ্চিত করা হয়।
ঘটনা প্রসঙ্গে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মজিদ বলেন, সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে আমি বিষয়টি জানতে পারি। জানার সঙ্গে সঙ্গে এসপি, জিওসি, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা বিষয়টি শুনলেও পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো তাৎক্ষণিক সহযোগিতা পাইনি। পুলিশ সময়মতো হস্তক্ষেপ করলে সংঘর্ষ এত বড় হতো না। দুঃখজনকভাবে দেরিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারেনি। তাদের এমন দায়িত্বহীনতায় আমরা হতাশ। এতে দেশের সার্বিক নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।
তিনি আরও বলেন, আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসায় আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছি। পাশাপাশি ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাজার কমিটির সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসব, যাতে এমন আচরণের পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
রেজওয়ান বাপ্পী/এআরবি