মেহেরপুরে হঠাৎ ঝড়-বৃষ্টিতে নুয়ে পড়েছে ৩২ হাজার হেক্টরের ফসল

মেহেরপুরে বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে হঠাৎ বয়ে যাওয়া বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ায় উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে গম, মসুর ও তামাকখেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলার চাষিরা। উঠতি বয়সী ও অপরিপক্ব এসব ফসল নিয়ে আশাহত কৃষকরা।
জানা যায়, সেদিন রাতে ঝোড়ো হাওয়ার পর বৃষ্টি শুরু হয়। ঘণ্টাব্যাপী ঝড়বৃষ্টিতে অপরিপক্ব গম মাটিতে নুয়ে পড়ে ও মসুরখেতের ফুল ঝরে যায়। এ ছাড়া তামাকপাতা ছিঁড়ে গেছে এবং কলাবাগানের কলাগাছ ভেঙে ও উপড়ে গেছে।
তবে চাষিরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে জানালেও কৃষি অফিস বলছে, ক্ষতির আশঙ্কা কম।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় বারি গম-৩৩, বারি গম-৩২ ও বারি গম-২৬ জাত আবাদ হয়েছে মোট সাড়ে ১২ হাজার হেক্টর জমিতে। ভুট্টার আবাদ হয়েছে ১৩ হাজার ৮৩০ হেক্টর ও মসুর আবাদ হয়েছে ৭ হাজার ৮৫ হেক্টর জমিতে। চাষিদের আবাদি জমির গম এখন দানা বাঁধার সময়। তা ছাড়া তামাকপাতা স্যাকার এখন মোক্ষম সময়। পাশাপাশি আলু পচে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ সময়টি ফসলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে জানান কৃষকরা।
সদর উপজেলা বুড়িপোতা গ্রামের কলাচাষি মোরতুজা জানান, এক বিঘা জমিতে কলা আবাদ করেছিলেন। প্রতিটি গাছেই কাঁধি হয়েছে। হঠাৎ বৃহস্পতিবার রাতে ঝড়ের আঘাতে আমার কলা-বাগানের অধিকাংশ গাছ মাঝখান থেকে ভেঙে গেছে। এ ঝড়ে অন্তত অর্ধলাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
মুজিবনগরের শাকিল আহম্মেদ বলেন, আমি দুই বিঘা জমিতে গম ও এক বিঘা জমিতে মসুর আবাদ করেছি। গতকালের বৃষ্টি ও আর ঝড়ে গম মাটিতে পড়ে গেছে। মসুরখেতের ফুল ঝরে গেছে। আমার দুটি আবাদেই চরম ফলন বিপর্যয় হবে। আমার জমির আশপাশের কয়েক শ বিঘা জমির গম মাটিতে নুয়ে পড়েছে।
গাংনী উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের গমচাষি আব্দুল জলিল বলেন, আমি দুই বিঘা জমিতে বারি-৩৩ জাতের গম আবাদ করেছি। এই গম আমার সংসারের একমাত্র খাদ্যশস্য। প্রতিবছর গমের আবাদের ওপর নির্ভর করেই আমার পরিবারের ভরণপোষণ আসে। রাতে ঝড়-বৃষ্টি থামার পর মাঠে গিয়েছিলাম। দেখি দুই বিঘা জমির সব গম মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। এখন গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা ছাড়া কোনো উপায় দেখছি না।

গ্রামের বেগুনচাষি ইদ্রিস আলী ইদু বলেন, আমার ২৫ কাঠা জমিতে বেগুন আবাদ করেছি। বৃষ্টি ও ঝড়ে অনেক বেগুনগাছ দুমড়েমুচড়ে গেছে। ভুট্টাচাষি হাবিবুর রহমান জানান, তার এক বিঘা জমিতে ভুট্ট ছিল। সব গাছ বাতাসে মাটিতে মিশে গেছে।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক এ কে এম কামরুজ্জামান বলেন, হঠাৎ বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ায় উঠতি বয়সী ফসল গম, ভুট্টা ও মসুরের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। গেল রাতে ২৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে। এতে ভয়ের কিছু নেই। রাতে ঝড়বৃষ্টি হলেও সকালে রোদ উঠেছে। পড়ে যাওয়া ফসল অনেকটাই রোদ হলে উঠে দাঁড়াবে।
তবে কয়েক দিন পরে বোঝা যাবে কৃষকদের ক্ষতির বিষয়টি। বিভিন্ন মাঠে আমাদের লোকজনকে পাঠানো হয়েছে। ক্ষতি কমাতে চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
আকতারুজ্জামান/এনএ