১৮ বছর ধরে বাঁশের সাঁকো দিয়ে সেতু পারাপার
০৪ মার্চ ২০২২, ১১:৪০ এএম

দুই পাশে বাঁশের সাঁকো। আর মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে সেতু। এভাবেই ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে ১০ গ্রামের প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ। তবে এক দুই বছর নয়, ১৮ বছর ধরে চলছে তাদের এই দুর্ভোগ।
জানা গেছে, নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের চাকুয়া বিলে নব্বইয়ের দশকে নির্মাণ করা হয় সেতুটি। কিন্তু ২০০৪ সালের বন্যায় সেতুর দুই পাশের মাটি সরে যায়। তারপর পার হয়েছে ১৮টি বছর। সেতুর দুই পাশের মাটি আর ভরাট করা হয়নি।
দেখা গেছে, ফকিরের বাজার থেকে তেঘুড়িয়া সড়কের চাকুয়া বিলের মাঝখানে সেতু থাকলেও দুই পাশে কোনো মাটি নেই। এ অবস্থায় পারাপারের জন্য সেতুটির দুই পাশেই বাঁশের সাঁকো তৈরি করেছেন স্থানীয়রা। সেতুর পূর্ব পাশে রয়েছে যাওয়াইল, শিমুলিয়া, নকদাপাড়া, চাকুয়া, হাপানিয়া, কৈলাটি গ্রাম এবং পশ্চিম পাশে ফকিরের বাজারসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম রয়েছে। এসব গ্রামের মানুষ প্রতিনিয়ত এই সেতু পার হয়ে জেলা সদর, হাসপাতাল, ইউনিয়ন পরিষদ ও হাট-বাজারে যাতায়াত করেন।
কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, আমরা ছোটবেলা থেকে চাকুয়া বিলের এই সেতুতে বাঁশের সাঁকো দেখে আসছি। এটা আমাদের কাছে মনে হয় যেন সেতুর ওপর বাঁশের সাঁকো। এটাতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তবে অনেক সময়ই এই রাস্তা দিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে যাওয়ার সময় পানিতে পড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। আমাদের ইউনিয়নের চেয়ারম্যান যদি চাইতেন তাহলে এতদিনে সেতুর দুই পাশে মাটি ভরাট হয়ে যেত। কিন্তু তারা তা না করে লিজ দিয়ে দেন। যারা লিজ নেন তারা আমাদের এলাকাবাসীর কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করেন। এতে তারা লাভবান হলেও কষ্ট হচ্ছে আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের।
পথচারী মোজাম্মেল হক বলেন, আমার বাড়ি কলমাকান্দা উপজেলার কৈলাটি ইউনিয়নে। তবু আমি রায়পুর ইউনিয়নের ফকিরের বাজারে নিয়মিত যাওয়া আসা করি। কারণ এটি একটি বিখ্যাত বাজার। তাই এলাকার অন্যরাও এখানে বাজার করতে আসেন।
সাঁকো দিয়ে সেতু পার হতে কেমন দুর্ভোগ পোহাতে হয় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুর্ভোগ তো অবশ্যই পোহাতে হয়। কিন্তু কিছুই করার নেই। এভাবেই ঝুঁকি নিয়ে আমাদের চলাচল করতে হচ্ছে। স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ইচ্ছা করলে সেতুর দুই পাশে মাটি ভরাট করে জনগণের দুর্ভোগ কমাতে পারতেন। তারা তা করেননি। লাভের আশায় তারা এই স্থানটা লিজ দিয়ে দেন। এতে আমাদের দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, সেতুর এমন দুর্দশার কারণে এলাকার কৃষকদের কৃষিপণ্য নিয়ে প্রায় ১২ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়। এতে তাদের ব্যয় ও ভোগান্তি বাড়ে এবং কোমলমতি শিক্ষার্থী, শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থ লোকজন তো এ রাস্তা দিয়ে চরম ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন।
ফকিরের বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল হালিম জানান, স্থানীয়রা সেতু দিয়ে পণ্য পরিবহন করত। কিন্তু সেতুর দুই পাশের মাটি সরে যাওয়ায় গ্রাম থেকে শহরে ধান, চাল ও কৃষিপণ্য পরিবহন করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় এলাকার ১০টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
স্থানীয় রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান রাজু বলেন, সেতুটি পারাপার করতে আগে লিজের মাধ্যমে বাঁশের সাঁকো তৈরির অনুমতি দেওয়া হতো। নিজের টাকায় সাঁকো করে এবার আমি তা উন্মুক্ত করে দিয়েছি। এত বছর ধরে সেতুটি এ অবস্থায় পড়ে আছে অথচ সেটা এলজিইডি দেখে না। সেতুর দুই পাশে মাটি ভরাটের জন্য আমি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলব।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) বারহাট্টা উপজেলা প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, ফকিরের বাজার থেকে তেঘুড়িয়া পর্যন্ত সাত কিলোমিটার রাস্তা কাঁচা। এক কিলোমিটার রাস্তার টেন্ডার হয়েছে। আর বাকিটাও দ্রুত হবে। চাকুয়া সেতুসহ একই রাস্তায় আরও একটি সেতুকে ‘প্রোগ্রাম ফর সাপোটিং রুরাল ব্রীজেস’ প্রকল্পের আওতায় দেওয়া হয়েছে। এতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। তবে আশা করি দ্রুতই এটির কাজ শুরু হবে।
জিয়াউর রহমান/এসপি