পিরোজপুরে নদী ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বাজার-সড়ক-মসজিদ

পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার আমড়াজুড়ি ইউনিয়নে সন্ধ্যা, গাবখান ও কচা নদীর মোহনায় স্বরূপকাঠি ও কাউখালী উপজেলার সংযোগস্থল আমড়াঝুড়ি ফেরিঘাট এলাকায় নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছে। এতে উভয় পাড়ের প্রায় দুই শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বসতবাড়ি, কৃষিজমিসহ মসজিদ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে বসতবাড়ি, আবাদি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য স্থাপনা।
দুই উপজেলা বাসিন্দাদের যাতায়াতের সহজ পথ আমড়াঝুড়ি ফেরিঘাট যা এখন ভাঙনের কবলে পড়ে অস্তিত্ব সংকটে। ইতোমধ্যে বাজার সংলগ্ন কাউখালী-শেখেরহাট সড়কের একাংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, আমড়াজুড়ি বাজারের পশ্চিম দিকে প্রায় ১০০০ মিটার এলাকা সন্ধ্যা নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছে। নদী ভাঙনের কারণে বেশ কয়েকটি দোকান একাধিকবার সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। নদীভাঙনে আমড়াজুড়ি বাজার মসজিদটির একাংশ ধ্বসে গিয়ে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বাজারের পাশে কাউখালী-শেখেরহাট সড়কের এক কিলোমিটারের বেশি অংশ ভেঙে নদীতে বিলীন হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে অস্থায়ী ভিক্তিতে প্রায় ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নদীতে জিও ব্যাগ ফেলে বাঁধ নির্মান চলমান থাকলেও তা ভাঙন ঠেকাতে সক্ষম হচ্ছে না। গত এক বছরে দুই পাড়ের দুই শতাধিক দোকান নদীভাঙনের কবলে পড়েছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে বাজারের প্রায় ৭০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আমড়াজুড়ি ফেরিঘাট থেকে প্রতিদিন একটি ফেরি পিরোজপুর সদর থেকে কাউখালী হয়ে নেছারাবাদ উপজেলায় চলাচল করে। এই ফেরিঘাট এলাকায় পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে সন্ধ্যা নদী ভাঙছে। প্রতিবছর ভাঙনের কবলে পড়ছে আমড়াজুড়ি ফেরিঘাট বাজার। বাজারের একাধিক দোকান নদীভাঙনের কবলে পড়ায় বেশ কয়েকবার সরিয়ে নিতে হয়েছে। কাউখালী-শেখেরহাট সড়কের একাংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় উপজেলার পূর্ব আমড়াজুড়ি, মাগুড়া গ্রাম এবং এর সীমানা ঘেঁষা ঝালকাঠি জেলার শেখেরহাট গ্রামের মানুষ যাতায়াতে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নদীভাঙন রোধে কর্তৃপক্ষ এখনো কোনো টেকসই পদক্ষেপ নেয়নি। তাদের দাবি, গত এক বছরে পিরোজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে ভাঙন প্রতিরোধের উদ্যোগ নিলেও তাতে বাস্তব কোনো সুফল মিলেনি। জিও ব্যাগসহ সাময়িক প্রতিরোধমূলক এসব কাজ বিশাল নদীর মোহনায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না বলে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
আমড়াজুড়ি বাজারের ব্যবসায়ী মো. শাহিন বলেন, আমড়াজুড়ি ফেরিঘাট এলাকা সন্ধ্যা ও গাবখান খালের মোহনা হওয়ায় প্রতিবছর নদীভাঙনের ঘটনা ঘটছে। কয়েক বছর ধরে ভাঙন বেশি হচ্ছে। এক বছরে নদীভাঙনের কারণে আমার দোকান তিনবার সরিয়ে নিতে হয়েছে। এবছরও আমার দোকান ঝুঁকিতে রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ইকবাল হোসেন তালুকদার বলেন, এই নদী ভাঙনের কারণে কয়েক মাস পরপর দোকানপাট সরিয়ে নিতে হচ্ছে। নদীতে পাইলিং করে বালুর বস্তা ফেলেও নদীভাঙন রোধ করা যাচ্ছে না। এখানে টেকসই নদী রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও নদী শাসনের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে নদীভাঙন ঠেকানো সম্ভব হবে না।
বিলীনের পথে পূর্ব আমড়াঝুড়ি বাজার মসজিদের ইমাম গাজী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে আমাদের মসজিদের একাংশ নদীতে বিলীন হয়ে গিয়েছে। ছয় মাস আগেও মসজিদে নামাজ পড়া যেত কিন্তু হঠাৎ মসজিদের সামনের দেয়াল ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে যায়। আগে চার কাতার নামাজের জায়গা থাকলেও এখন দুই কাতার জায়গায় নামাজ পড়তে হচ্ছে তাও শঙ্কা নিয়ে। আমি কর্তৃপক্ষের কাছে এখানে টেকসই নদী রক্ষা বাঁধ নির্মাণের অনুরোধ করি।
পিরোজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী আবু জাফর মো. রাশেদ খান বলেন, ফেরিঘাটের দুই প্রান্তে প্রায় ১৫০০ মিটার স্থায়ী বাঁধের জন্য আমরা স্টাডি করছি এবং বর্তমানে অস্থায়ী ভিক্তিতে প্রায় ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে বাঁধের কাজ চলমান রয়েছে।
শাফিউল মিল্লাত/আরকে