সড়কে উড়ছে ধুলা, ধুঁকছে মানুষ

গাজীপুরে টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত এগোতে থাকলে রাস্তায় চোখ আটকে যাবে ধুলায়। ধুলার পর্দা ভেদ করে দৃষ্টি হয়তো ১০ কিংবা ১৫ হাত পর্যন্ত চলতে পারে।
বিভিন্ন স্থানে রাস্তার পাশের দোকানগুলো ত্রিপল দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। রাস্তাঘাট, রাস্তার পাশের ভবন, বাসাবাড়ি সবই— ধুলার আস্তরে ঢাকা পড়েছে। ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে জনজীবন।
ভাঙা রাস্তা, তার ওপর খোলা পরিবেশে ফেলে রাখা হয়েছে নির্মাণসামগ্রী। এছাড়া ধুলার কারণে যানবাহনে অনেক সময় দিনের বেলায় গাড়ির হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা যায়। একটি যানবাহন পার হতেই ধুলার কারণে তৈরি হচ্ছে অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশ।
স্থানীয়রা স্বীকার করছেন অসহায়ত্ব। ধুলার রাজ্যে পরিণত নগরটিতে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছেন লাখ লাখ মানুষ।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, গাজীপুরের টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত চলছে বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজ। এ কর্মযজ্ঞের উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্বিঘ্নে ও দ্রুতগতির পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। বিআরটি প্রকল্পের অধীনে এই সংরক্ষিত লেন দিয়ে বেশি ধারণক্ষমতার বাস চলাচল করবে।
গাজীপুর মহানগরের মধ্যে পরিবেশবান্ধব ও দ্রুতগতির গণপরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পের কাজের কারণে সৃষ্ট ধুলাবালিতে ওই এলাকার জনজীবন অতিষ্ঠ। সংস্কারকাজের কারণে ধুলাবালিপ্রবণ এলাকা হলেও গাজীপুরে সংশ্লিষ্ট দফতর কোনো প্রকার প্রদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গীর বাটা গেইট এলাকায় পথচারী বেবী বেগম বলেন, বর্তমানে রাস্তায় বের হওয়ার পরিস্থিতি নেই। অতি প্রয়োজনে ছেলে-মেয়ে নিয়ে বাসা থেকে বের হলেও ধুলায় চোখ-মুখ আচ্ছন্ন হয়ে যায়। আক্রান্ত হতে হয় বিভিন্ন রোগে। এ রকম পরিস্থিতির পরিত্রাণ দরকার।
বড়বাড়ী এলাকার দোকানি নজরুল ইসলাম বলেন, ধুলার যন্ত্রণায় দোকানের সামানের অংশ ঢেকে রেখেও রক্ষা পাওয়া যায় না। কয়েক মিনিটেই দোকানে ধুলার স্তর পড়ে যায়। দোকানের মালামাল নষ্ট হচ্ছে। শ্বাসকষ্টের রোগী হয়ে গেছি। বর্তমানে বিপজ্জনক মাত্রায় উড়ছে ধুলা।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বোর্ডবাজার এলাকায় এক মোটরসাইকেল আরোহী সাইফুর রহমান বলেন, ধুলার কারণে মহাসড়কে আধা কিলোমিটারের মধ্যে মাস্ক না পরে চলাচল করা দুঃসাধ্য। শরীরে ধুলার স্তর পড়ে যায়। নাক-মুখ দিয়ে ধুলা ঢুকে হাঁচি-কাশি হয়। ঠান্ডা লেগে যায়।
প্রাইভেটকারচালক ইব্রাহিম মিয়া বলেন, গাড়ির গতি বাড়লে ধুলা উড়ার গতি বাড়ে। অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে সড়ক। অনেক সময় দিনের বেলায়ও হেডলাইট জ্বালাতে হয়।
বাসচালক দুলাল মিয়া বলেন, ধুলা আমাদের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। যাত্রীরা তো ধুলায় মাখামাখি হয়ই, গাড়িও নষ্ট হয়। অনেক সময় গাড়ির গতি ধরে রাখা যায় না। এতে বিভিন্ন সময় ঘটছে দুর্ঘটনা।
সাইনবোর্ড এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা পলাশ মণ্ডল বলেন, উন্নয়নকাজের ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম-নীতি মানা হচ্ছে না। ধুলার জন্য পানি ছিটানোর কথা থাকলেও তা হয় না।
সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির পর মাটি অন্যত্র সরিয়ে না নিয়ে সড়কেই ফেলে রাখা হয়। মাটি শুকিয়ে ধুলি হয়ে বাতাসে উড়ে। জনবহুল এলাকায় সড়কের কাজ দ্রুত শেষ না করে কাজ ফেলে রাখেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
বিআরটি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এএসএম ইলিয়াস হোসেন বলেন, দ্রুত সড়কে ধুলা নিবারণের জন্য পানি ছিটানোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গাজীপুর পরিবেশ অধিদফতরের উপপরিচালক আবদুস সালাম সরকার বলেন, বিআরটির উন্নয়ন প্রকল্পে বায়ুদূষণ রোধের জন্য প্রকল্পে ব্যয় ধরা আছে। বিপজ্জনক মাত্রায় বায়ুদূষণের অভিযোগ পাওয়ায় বিআরটি প্রকল্পের ঠিকাদারদের সতর্ক করা হয়েছে। এরপরও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হবে।
এমএসআর