বাগেরহাটে এক দিনে ভর্তি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ২৭ রোগী

বাগেরহাটে প্রতিদিনই বাড়ছে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে ডায়রিয়া ইউনিটে শয্যা সংখ্যার কয়েক গুণ বেশি রোগী ভর্তি থাকায় সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন নার্স ও চিকিৎসকরা।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ২৭ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আর গত এক সপ্তাহে চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় ২০০ রোগী। এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সাত শতাধিক ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন।
রোববার (১০ এপ্রিল) সকালে জেলা হাসপাতাল ডায়রিয়া ওয়ার্ডে দেখা যায়, ৪ শয্যার বিপরীতে চিকিৎসা নিচ্ছেন ২৭ জন। শয্যা সংকুলান না হওয়ায় মেঝের পাশাপাশি আইসোলেশন ওয়ার্ডের দুটি কক্ষে দেওয়া হচ্ছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় জনবলের পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে শয্যা সংখ্যা।
চার বছর বয়সী রোমান। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তিন দিন ধরে বাগেরহাট জেলা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। তাকে দেখভাল করছেন তার নানি রমিসা বেগম। সদর উপজেলার বেসরগাতি এলাকা থেকে এসেছেন তারা।
রমিসা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, নাতিকে নিয়ে তিন দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছি। নাতি এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। হাসপাতাল থেকে শুধু স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনীয় অন্যান্যে ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। কিন্তু আগে জানতাম রোগীর ওষুধ হাসপাতাল থেকেই দেয়। আমরা গরিব মানুষ, ওষুধ কীভাবে কেনব।
ডায়রিয়া ওয়ার্ডের মেঝেতে চিকিৎসা নেওয়া শিশু রেহানের মা পারভীন বেগম জানান, শনিবার দুপুরে রেহানের জ্বর ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়। পরে স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করানো হয়। রাত দুইটার দিকে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। সেখানে ডাক্তার না পেয়ে রোববার সকালে জেলা হাসপাতালে ভর্তি করি।

তিনি আরও বলেন, মোরেলগঞ্জ উপজেলার উত্তর সুতালড়ি আমাদের গ্রামে সুপেয় পানির সংকট রয়েছে। দূষিত পানির কারণেই রেহান অসুস্থ হয়ে পড়েছে। কত দিন হাসপাতালে থাকা লাগবে জানি না।
ডায়রিয়া ওয়ার্ডে কর্তব্যরত নার্স আসমা বেগম জানান, শিফট অনুযায়ী আমরা রোগীদের সেবা দিয়ে থাকি। কিন্তু গত ২৪ ঘণ্টায় ২৭ জন রোগীকে চিকিৎসা দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছে। তবে শিশুরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানান তিনি।
জেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. সুদেব দেবনাথ বলেন, গত রাতে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৬ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে বেশির ভাগ রোগীই পানিশূন্যতা নিয়ে ভর্তি হন। এ ছাড়া যেসব রোগীর ডায়রিয়ার লক্ষণ দেখা দেবে, তাদের বেশি করে খাবার স্যালাইন খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
বাগেরহাট ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার সমাদ্দার বলেন, হাসপাতালে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে নির্ধারিত ৪টি শয্যা রয়েছে। কিন্তু প্রতিদিন যে পরিমাণ রোগী বাড়ছে, তাতে মেঝের পাশাপাশি অস্থায়ীভাবে অন্য ওয়ার্ডে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। রোগীরা যেন সেবা থেকে বঞ্চিত না হন, তার জন্য জনবল বাড়ানো হয়েছে। আমাদের পর্যাপ্ত ডায়রিয়ার স্যালাইন রয়েছে।
তবে রোগীদের বাইরে থেকে ওষুধ কেনার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে কিছু ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়। তবে রোগীদের যেন বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে না হয়, সে ব্যাপারে আমরা চেষ্টা করছি।
তানজীম আহমেদ/এনএ