চিকিৎসকদের দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি

খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে মায়ের মরদেহ আটকে রেখে দুই ছেলেকে পুলিশে দিয়েছিলেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। পরে সড়ক অবরোধ করলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে চিকিৎসকদের মামলা থেকে রক্ষা পায়নি তারা। চিকিৎসকদের দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবার।
মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে মৃত চিয়ারুন্নেছার স্বামী মাওলানা মো. আব্দুর রাজ্জাক মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমি মহানগরীর দৌলতপুরের পাবলার মধ্য কারিকারপাড়া পুরাতন জামে মসজিদের পেশ ঈমাম। আমার স্ত্রী গত শুক্রবার (৮ এপ্রিল) রাত ২টার সময় বুকে ও পেটে ব্যাথা অনুভব করলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি। তারপর চিকিৎসায় তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়। পরিবারের সদস্যরা তার দেখাশোনার জন্য হাসপাতালেই অবস্থান করে। ১০ এপ্রিল রাত ১টার পর থেকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। তখন রোগীর সাথে থাকা দুই ছেলে বার বার কর্তব্যরত ডাক্তারদের ডাকতে থাকে। দুই ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও কর্তব্যরত ডাক্তার রোগীর কাছে আসে না।
এদিকে রোগী যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে। অবশেষে ডাক্তারদের অবহেলায় রাত ২টা ৪৫ মিনিটে মৃত্যুবরণ করে। মা মারা যাওয়ার পর রোগীর দুই ছেলে ইন্টার্ন ডাক্তার মনিষ কান্তি দাস ও ডাক্তার প্রিতম কর্মকারকে বলে- আপনাদের বার বার ডাকা সত্ত্বেও আমার মাকে দেখতে আসলেন না, আপনাদের কেমন বিবেক, আপনাদেরও তো মা আছে, আপনাদের মা হলে কী করতেন। এই কথার প্রেক্ষিতে ডাক্তার ওয়ার্ড বয় ও অন্যান্য কর্মচারীরা মিলে প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন আমার দুই ছেলেকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি ও লাথি মারতে থাকে। তখন আমার শোকাহত দুই ছেলে প্রাণভয়ে দৌঁড়াতে থাকে পিছু পিছু ডাক্তারসহ অন্যান্য কর্মচারীরা লাঠিসোটা নিয়ে তাদেরকে মারার উদ্দেশ্যে হাসপাতালের প্রধান ফটক পার হয়ে মুজগুন্নি মহাসড়কের অনেক দূর পর্যন্ত চলে আসে।
আমার দুই ছেলে প্রাণভয়ে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে বাসায় চলে আসে। পরবর্তীতে আমি আমার স্ত্রীর মরদেহ গ্রহণ করতে আমার অন্য দুই ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে যাই। তখন ওই ইন্টার্ন ডাক্তারসহ অন্যান্য সহকারীরা আমার সন্তানকে পুলিশের সামনে মেরে আহত করে এবং তাদের পরিধান করা কাপড় ছিঁড়ে ফেলে। এতেও তারা ক্ষান্ত হয় না। সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশের কাছে আমার দুই সন্তানকে সোপর্দ করে।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমি স্ত্রীর শোক ও সন্তানদের দুরাবস্থায় দিশেহারা হয়ে পড়ি। এ অবস্থায় আমি বিষয়টি স্থানীয় ৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ সামছুদ্দিন আহমেদ প্রিন্সকে জানাই। তিনি স্থানীয় মহল্লাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে মেয়রের কাছে যাই। মেয়রের কাছে ঘটনা বলার পর তিনি আটক দুই সন্তানকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য সোনাডাঙ্গা থানার ওসিকে অনুরোধ করেন। কিন্তু তারপরও তাদেরকে ছেড়ে না দেওয়ায় খুলনা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার যাওয়ার পরও কোনো সুরাহা না হওয়ায় স্থানীয় কাউন্সিলর এবং মহল্লাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে নতুন রাস্তায় সড়ক অবরোধ করি। পরে তাদেরকে মুক্তি দেওয়া হয় এবং লাশ ফেরত দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, পরে আমি জানতে পারি আমার দুই সন্তানের নামে খুলনা মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন ডাক্তাররা মিথ্যা মামলা করেছে। আমি মানবিক দিক বিবেচনা করে এই মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মৃত চিয়ারুন্নেছার দুই ছেলে মো. তরিকুল ইসলাম কাবির, সাদ্দাম হোসেন, ইসলামী আন্দোলনের খুলনা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. নাসির উদ্দিনসহ স্থানীয়রা।
মোহাম্মদ মিলন/আরএআর