ঈদের দিন ভাইবোনদের নিয়ে সেমাই-পিঠা খেতে পারব

‘আমার মা অসুস্থ। তিনি কোনো কাজ করতে পারেন না। বাবা গাড়িতে ডিউটি করেন। আমরা গরিব, তাই ঈদে ভালোমন্দ তেমন কিছু খেতে পারি না। এবার আমি ঈদসামগ্রী পেয়েছি। তাই ঈদের দিন ভাইবোনদের নিয়ে সেমাই-পিঠা খেতে পারব।’
বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কৃষ্ণচূড়া ফাউন্ডেশনের ঈদসামগ্রী পেয়ে এসব কথা বলে শিশু সুমাইয়া (৭)। সুমাইয়ার মতো ঈদসামগ্রী নিতে জেলা শহরের একটি বেসরকারি কলেজে জড়ো হয়েছিল শতাধিক অসহায় মানুষ।
ঈদসামগ্রী পাওয়া ভিক্ষুক জবেদা বেগম বলেন, ‘বাবা আমরা গরিব মানুষ। সারাদিন এদিক সেদিক ঘুইরা বেড়াই। দুই, পাঁচ টেহার জন্য মাইনষের কাছে হাত পাতি। কেউ দেয়, কেউ রাগ পাইয়া তাড়িয়ে দেয়। চোখে কম দেহি। আগের মতো চলাফেরা করবার পারি না। আইজক্যা যে ঈদ উপহার পাইলাম। এইডা পাইয়া আমি মেলাখানি খুশি। আল্লাহ এই পুলাপানগো অনেকদিন বাঁচাই রাখুক।’
বয়োবৃদ্ধ শরাফত আলী বলেন, ‘আমাগো জীবনে এ রকম অনেক ঈদ গেছে- সেমাই চিনি চোখে দেহি নাই। আমরা বুড়া মানুষ যে টাকা এদিক সেদিক ঘুইরা পাই, তাই দিয়া ডাল, ভাত খাইতেই দিন চইলা যায়। ঈদে জন্য কিছু কিনমু কেমনে। সেই টেহা পামু কই। আজকে পুলাপানরা আমাদের মতো অনেক অসহাদের সেমাই, চিনি, দুধ, পিঠা, নুডলস দিছে। সেইটা দিয়া আমরা ঈদে মজা কইরা খামু।’

কৃষ্ণচূড়া ফাউন্ডেশন শেরপুর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার রুমান শাহ্ ঢাকা পোস্টকে জানান, আমরা বিগত আড়াই বছর হতে স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম পরিচালনা করছি। ইতিমধ্যেই আমরা আমাদের ঈদ-৫ অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন করলাম। এখানে উক্ত সংগঠনের প্রত্যেকটি স্বেচ্ছাসেবী নিরলস পরিশ্রম করেছেন। অদূর ভবিষ্যতে অসহায় দুস্থদের জন্য আমাদের এ রকম কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মাহমুদুল আহসান মিল্লাত ঢাকা পোস্টকে বলেন, অসহায়দের পাশে ছিলাম, আছি, থাকব। ‘আমরা বিতরণে নয়, সেবাদানে বিশ্বাসী’ এই স্লোগানকে ধারন করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কৃষ্ণচূড়া ফাউন্ডেশনের যাত্রা শুরু। আমরা প্রতিটি সদস্য শেরপুর পৌর শহরের বিভিন্ন মহল্লা থেকে খুঁজে বের করে অসহায় মানুষদের তালিকা করেছি। ‘কৃষ্ণচূড়ার রঙে রাঙাব সুবিধা বঞ্চিতদের ঈদ’ এই স্লোগানে শেষ হলো আমাদের ঈদ-৫ পর্ব।
অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের সর্বোচ্চ সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ২০১৯ সালের ১৬ মার্চ কাজ শুরু করে কৃষ্ণচূড়া ফাউন্ডেশন। প্রথমে শেরপুর জেলাকে কেন্দ্র করে কার্যক্রম শুরু হলেও বর্তমানে দেশের প্রায় ১৭টি জেলায় সংগঠনটির কার্যক্রম চলছে।
জাহিদুল খান সৌরভ/আরএআর