তিন সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে বাঁচতে চান বিজয়

সংসারের সচ্ছলতার আশায় ১০ মাস আগে সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছিলেন টাঙ্গাইলের বাসাইল পৌরসভার আন্দিরাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বিজয় বাদ্যকর। পাঁচ লাখ টাকা ঋণ করে শুরু হওয়া সেই স্বপ্নের যাত্রা মাত্র পাঁচ মাসেই ভেঙে পড়ে ভয়াবহ বাস্তবতায়। পাইলসের অপারেশনের পর শরীরে ধরা পড়ে ক্যান্সার।
অসুস্থ শরীর আর ভেঙে পড়া স্বপ্ন নিয়ে দেশে ফিরে এখন স্ত্রী, ছয় বছরের যমজ কন্যা ও ১৪ মাসের শিশুপুত্রকে নিয়ে চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি। বিজয় বাদ্যকর বাসাইল পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের আন্দিরাপাড়া গ্রামের দয়াল বাদ্যকরের ছেলে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে চেয়ারের মধ্যে বসে আছে বিজয়। শুয়ে বসেই দিন কাটছে তার। বেশি শুয়ে ও বসেও থাকতে পারে না।পিঠে ব্যথায় কাতরাচ্ছে, দিন যতই যাচ্ছে অসুস্থতা ততই বাড়ছে। শরীরে বেড়েছে ব্যথা। টাকার অভাবে করতে পারছে না চিকিৎসা।
স্থানীয়রা জানান, বিজয় তিন ভাইয়ের মধ্যে বড়। বাসাইল স্ট্যান্ডে সেলুনের দোকান ছিল। সেই দোকানেই নরসুন্দরের কাজ করতেন তিনি। পরিবারিকভাবে তারা হত-দরিদ্র। বাড়ি ছাড়া আর কিছুই নেই তার। দিন আনে দিন খায়। বিজয়কে ঋণ করে সৌদি আরবে পাঠিয়েছিল পরিবার। সৌদি আরবে যাওয়ার পর তার পাইলসে সমস্যা হলে অপারেশন করা হয়। পাইলস অপারেশন করার দুই মাস পর তার ক্যান্সার ধরা পড়ে। ৫ মাস থাকার পর আগস্ট মাসে অসুস্থতা নিয়ে দেশে চলে আসেন তিনি। এরপর থেকে তার অসুস্থতা বেড়েছে। বিজয়ের হাঁটা চলা কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বেশি শুয়ে ও বসেও থাকতে পারছেন না। টাকার অভাবে চিকিৎসা তো দূরের কথা সন্তানদের মুখে ঠিকমতো খাবার তুলে দিতে পারছেন না বিজয়। অসহায় জীবনযাপন করছেন তিনি।
ক্যান্সারে আক্রান্ত বিজয় বাদ্যকর বলেন, আমি নরসুন্দরের কাজ করতাম। বাসাইল স্ট্যান্ডে আমার দোকান ছিল। দারিদ্রতার কারণে ঋণ করে বিদেশ যাই। বিদেশ যাওয়ার পর আমার পাইলসে সমস্যা হয়। আগে থেকেই অসুস্থতা ছিল বুঝতে পারিনি। বিদেশে পাইলসের অপারেশন করায় দুই মাসের মাথায় আমার শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়ে। পাঁচ মাসের মাথায় দেশে চলে আসি। পাঁচ মাস ধরে দেশে আছি। দিন যতই যাচ্ছে অসুস্থতা বাড়ছে। টাকার অভাবে ঠিকমতো চিকিৎসা করতে পারছি না।

তিনি বলেন, আমার তিনটি সন্তান রয়েছে। ৬ বছরের জমজ মেয়ে ও একটি ১৪ মাসের ছেলে। টাকার অভাবে তাদের ঠিকমতো খাওয়াতে পারি না। দুই মেয়েকে আমার শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি। টাকার জন্য তাদের লালন পালন করতে পারছি না। তাদের আমি কি খাওয়াব? টাকার জন্য নিজের চিকিৎসা করতে পারছি না। থাকার মতো শুধু এই ঘর ছাড়া আমার আর কিছু নেই।
তিনি আরও বলেন, আপনারা যদি আমার তিনটি বাচ্চার মুখের দিকে তাঁকিয়ে সহযোগিতা করেন, তাহলে উপকৃত হব। নিজের জন্য না হলেও আমার ছেলেমেয়েদের জন্য আমি বাঁচতে চাই। সবার কাছে অনুরোধ, আমাকে সাহায্য করুন।
বিজয়ের দাদা সতীশ বাদ্যকর বলেন, আমার নাতি অসুস্থ, ক্যান্সার হয়েছে। টাকার প্রভাবে আমার নাতির চিকিৎসার করাতে পারছি না। আপনারা যদি সহযোগিতা করেন তাহলে আমার নাতি বাঁচবে, আর না হলে বাঁচবে না। বাড়িতে ঘর ছাড়া তার আর কিছু নাই। কি বিক্রি করে আমার নাতির চিকিৎসা করব, আমাদের কিছু নেই।
স্থানীয় বাসিন্দা কামরুল ইসলাম বলেন, বিজয়ের ছোট ছোট তিনটা সন্তান আছে। সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে হলেও সবার এগিয়ে আসা উচিত।পাইলস অপারেশন করার পর তার শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়ে। চিকিৎসার অভাবে দিন যাচ্ছে তার অসুস্থতা বাড়ছে।
বাসাইল পৌরসভার সাবেক কমিশনার প্রিন্স মাহমুদ বলেন, অসহায় একটি পরিবারের সন্তান বিজয় বাদ্যকর। ঋণ করে সৌদি আরবে যায়। সৌদি আরবে পাইলসের অপারেশন হলে তার দুই মাস পর ক্যান্সার ধরা পড়লে দেশে চলে আসে। টাকার অভার এখন তার চিকিৎসা হচ্ছে না। বিজয় দেশে আসার পর থেকেই চিকিৎসার জন্য ব্যক্তিগতভাবে সাহায্যে করেছি। চিকিৎসার ব্যয় একা তার পক্ষে বহন করা সম্ভব না। তার ৬ বছরে দুইটি যমজ মেয়ে ও ১৪ মাসের ছেলে রয়েছে। বাড়ির মধ্যে তার একটি ঘর ছাড়া আর কিছুই নাই। সমাজের বিত্তবান যারা আছেন। তারা যদি এগিয়ে আসেন তাহলে বিজয়ের চিকিৎসা করানো সম্ভব হবে। আমি সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করছি।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নূরে-ই-লায়লা বলেন, বিজয়ের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছি। একটি আবেদন পেয়েছি। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে সহযোগিতা করা হবে।
আরিফুল ইসলাম/আরকে