আগে লাশের মতো টানাটানি চলত, এহন শাহেনশাহর মতো যাইতেছি

আমার পোলাপানরে আর টানা-হেঁচড়া করতে হয় না। মেয়রের পোলাপানে হুইল চেয়ারে কইরা গাড়িতে তুলে দিছে। আগে ঘাটে নামলে লাশের নাহান (মত) এই গাড়ি-ওই গাড়ি টানাটানি চলত। এহন শাহেনশাহর নাহান যাইতেছি।
কথাগুলো আশি ছুঁই ছুঁই বৃদ্ধার। নিজের নাম অস্পষ্ট স্বরে জানালেন। একইভাবে হুইল চেয়ার ঠেলে নিয়ে যাওয়া ছাত্রলীগ কর্মীদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন।
শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) বরিশাল নদী বন্দরে রাত ৪টার দিকের চিত্র এটি। শুধু বৃদ্ধা মতিজান নন, এমন অনেককে স্বাচ্ছন্দ্যে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে। ঈদে ঘরমুখো মানুষদের মধ্যে বৃদ্ধদের জন্য হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করেছে সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। হুইল চেয়ার ঠেলে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্বে রয়েছে ছাত্রলীগের শতাধিক নেতাকর্মী।

দেখা গেছে, পন্টুনে লঞ্চ নোঙর করার সাথে সাথে সিঁড়ির দুইপাশে হুইল চেয়ার নিয়ে দাঁড়িয়ে যান তারা। এ ছাড়া যাত্রীদের আহ্বান জানান সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ফ্রি বাস সার্ভিসে গন্তব্যে যাত্রা করার জন্য।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, বিগত দিনে নদী বন্দরে মানুষ সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হতেন। ২০১৯ সালে আমি যে উদ্যোগটি নিয়েছিলাম তাতে শুধু বরিশালবাসী নয় দক্ষিণাঞ্চলবাসী উপকৃত হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় এ বছরও ফ্রি বাস সার্ভিস দিচ্ছি, বুস্টার টিকার ব্যবস্থাও করেছি।
যারা বয়স্ক তাদের জন্য হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করেছি। স্বাস্থ্যসেবা বুথ ও বিনামূল্যে পানির ব্যবস্থাও করেছি। অ্যাম্বুলেন্স, ওয়াচ টাওয়ার, সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছি। অর্থাৎ যাত্রীদের ভোগান্তি লাঘবে যা যা দরকার তার সব কিছুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
কবির উদ্দিন মিয়া নামে এক যাত্রী বলেন, আমার মা চলাচলে অক্ষম। তিনি অনেকদিন ধরে বলছিলেন বাড়িতে যাবেন। এ জন্য ঈদের মূল ভিড় শুরুর আগেই রওয়ানা হই। দুশ্চিন্তায় ছিলাম লঞ্চ থেকে মাকে গাড়িতে তোলার বিষয়ে। ঘাটে এসে অবাক হলাম এত সুন্দর আয়োজন দেখে। লঞ্চের সিঁড়ি থেকে হুইল চেয়ারে তুলে গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে করপোরেশনের লোকজন।
বরিশাল নদী বন্দরের পন্টুন লস্কর দেলোয়ার হোসেন জানান, প্রথম দিনে স্পেশাল ট্রিপে যাত্রী নিয়ে ঢাকা-বরিশাল রুটের সরাসরি সার্ভিসের ১০টি এবং ভায়া ৪টি লঞ্চ এসেছে। আজ (শুক্রবার) দিনেও বেশ কয়েকটি লঞ্চ আসার কথা।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) ঈদ স্পেশাল সার্ভিস শুরু হয়। চলবে ঈদ পরবর্তী পঞ্চম দিন পর্যন্ত।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরআই