বিএনপির ইফতারে সবার জন্য গরুর মাংস পরিবেশন নিয়ে বিতর্ক

সিলেট মহানগর বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে নিজ দলের অমুসলিম নেতাকর্মীদের মাঝে গরুর মাংসের আখনি (তেহারি) পরিবেশন নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। ইফতার মাহফিলে এ ধরনের খামখেয়ালি আচরণের জন্য দলের দায়িত্বশীল নেতাদের দোষারোপ করা হচ্ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) সিলেট নগরের আমান উল্লাহ কনভেনশন সেন্টারে এ ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে সিলেট মহানগর বিএনপি। এতে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
ইফতার মাহফিলে অংশ নেওয়া বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা হয় ঢাকা পোস্টের এ প্রতিবেদকের। তারা জানান, ইফতারের আগে পরিবেশন করা প্রত্যেক প্লেটেই গরুর মাংস দিয়ে তৈরি আখনি, ছোলা, পিঁয়াজু, খেজুর, আলুর চপ ছিল। যে কারণে বিপাকে পড়েন ইফতার মাহফিলে অংশ নেওয়া বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের অমুসলিম নেতাকর্মীরা।
ইফতারের পর রাতে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মন্টু নাথ। ফেসবুকে স্ট্যাটাসে তিনি উল্লেখ করেন-
‘আপনারা ইফতার করলেন, আর আমরা (সনাতন ধর্মীরা) হা করে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেই গেলাম। সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির ইফতার মাহফিলে অমুসলিমদের জন্যে নাই কোনো খাবারের ব্যবস্থা। আমরা রোজা রাখি না অথবা দিনের বেলা খেয়ে দেয়ে ঘর থেকে বাহির হই এই ভেবে কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি? নাকি অন্য কোন সমস্যা? সম্প্রীতির বাংলাদেশ, সম্প্রীতির রাজনীতির নতুন কোনো সংজ্ঞা আবিষ্কার হলে সেটা আমার জানা নেই। আমরা যেহেতু স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী, সেহেতু আমরা ছিলাম, আছি, থাকব- এতে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা যেহেতু আপনাদের পিছু ছাড়ছি না, আর আপনারা আমাদের জন্যে অন্য কোনো আয়োজন করতে পারছেন না। সেহেতু আমাদেরকে আপনারা সার্ভিস ও স্বেচ্ছাসেবকের কার্ড গলায় ঝুলিয়ে দ্বায়িত্ব দিতে পারতেন। আমরা সার্ভিস ও সেবা দিয়ে সময়ক্ষেপণ করতাম। তখন আমরা আমাদের পরিবার, পরিজন, সহযোদ্ধা ও জুনিয়রসহ অনেকের কাছে লজ্জা থেকে রেহাই পেতাম। আমরা বলতাম আমরা কাজের দায়িত্বে ছিলাম। হা করে থাকিয়ে থাকতাম না। তারাও ব্যাপারটি বুজে নিত।
বিঃদ্রঃ - সিলেট জেলা বিএনপির ইফতার মাহফিলেও ঠিক এই রকম আমরা হা করে বাতাস গ্রহণ করেছি।’
স্ট্যাটাসটি দেওয়ার পর শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) এ নিয়ে দিনভর আলোচনা চলে বিএনপির দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে। এতে অনেকেই মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তার ওই স্ট্যাটাসে অনেকে নানা অভিমত প্রকাশ করেন। আবার কেউ কেউ দুঃখও প্রকাশ করেন।
তার ওই স্ট্যাটাসে কমেন্ট করেন ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক সজিবুর রহমান। তিনি লেখেন, ‘আসলে এটি অনিচ্ছাকৃত ভুল, বিষয়টি খেয়াল করার দরকার ছিল।’
সিলেট মহানগর ছাত্রদলের নেতা সাফওয়ান আহমদ সহমর্মিতা জানিয়ে লেখেন, ‘দুঃখজনক এবং ক্ষমাপ্রার্থী।’
মহসিন রেজা নামে একজন লেখেন, ‘একজন জাতীয়তাবাদী দলের কর্মী এবং একজন সিলেটি হিসেবে আমরা লজ্জিত এবং দুঃখিত দাদা। আশা করি অনিচ্ছাকৃত ভুল থেকে সংশোধন হবে, যাতে পরবর্তীতে কখনো আর এমন না হয়।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ব্যাপারটির জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে আমরা অনেক ভুল করেছি। এ ধরনের ভুল সত্যিকার অর্থে অনাকাঙ্ক্ষিত। ভবিষ্যতে এ ধরনের ভুলের পুনরাবৃত্তি হবে না বলেও জানান তিনি।
মাসুদ আহমদ রনি/আরএআর