শ্রমিকদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বিএনপি নেতার হামলা

সাভারের আশুলিয়ায় বকেয়া বেতনের দাবিতে একটি কারখানায় অবস্থানকালে বিএনপি নেতার হামলার শিকার হয়েছেন শ্রমিকরা। এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন ভুক্তভোগীরা। বৃহস্পতিবার (২৬ মে) দুপুরে সাধারণ ডায়েরির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শ্যামলেন্দু ঘোষ।
গতকাল আশুলিয়ার পল্লিবিদ্যুতের ডেন্ডাবর এলাকার আলিফ ফ্যাশনের ভেতরে এ ঘটনা ঘটলে সাধারণ ডায়েরি করেন শ্রমিকরা। তবে শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে আজও (বৃহস্পতিবার) কারখানার সামনে অবস্থান নিয়েছেন।
অভিযুক্ত বিএনপি নেতা হলেন আসাদুল্লাহ আহমেদ দুলাল। তিনি আশুলিয়ার ধামসোনা ইউনিয়ন বিএনপির নবগঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক এবং গণি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের স্বত্বাধিকারী।
শ্রমিকরা জানায়, গত জানুয়ারি মাসে ১১৪ জন শ্রমিক নিয়ে ওই কারখানা চালু করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। পরেরমাস থেকেই শ্রমিকদের বেতন পরিশোধে টালবাহানা শুরু করেন। দুই মাস বেতন প্রদান করলেও এপ্রিল মাসের বেতন দিতে আবারও টালবাহানা শুরু করে।
সর্বশেষ এপ্রিল মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধের জন্য গত ১৩ মে দিন ধার্য্য করা হয়। পরে ১৫ ও ১৮ মে তারিখ পরিবর্তন করেন কর্তৃপক্ষ। ১৮ মে আবারও বেতন পরিশোধ না করলে কারখানায় অবস্থান নেয় শ্রমিকরা। পরে ২২ তারিখে বাধ্য হয়ে বেতনের কিছু অংশ পরিশোধ করেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। বাকি বেতনের দাবিতে শ্রমিকরা অবস্থানে অনঢ় থাকে। পরবর্তীতে গতকাল (২৫ মে) ভোরে কারখানা ভবনের মালিক বিএনপি নেতা দুলাল দরজার লক ভেঙে নারী শ্রমিকদের ওপর হামলা করেন।
অবস্থানরত শ্রমিক মায়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা কারাখানার ভেতরে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলাম। কিন্তু ২২ মে ভোরে কারখানা ভবনের মালিক দুলাল সাহেব হঠাৎ গেটের লক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে হামলা করেন। এ সময় নারী শ্রমিকদের চড়, থাপ্পড় ও কিলঘুষিসহ মারধর করে কারখানা থেকে বের করে দেন। পরে আমরা থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি করি। বকেয়া বেতন না দিয়ে কারখানার দরজায় তালা লাগানো হয়েছে। আমরা আমাদের বেতন চাই।
সাধারণ ডায়েরির বাদী মোমিন বলেন, গতকাল অহেতুক আমাকে মারধর করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি। ভোর বেলাও তিনি শ্রমিকদের ওপর হামলা করেছিলেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা আসাদুল্লাহ আহমেদ দুলাল বলেন, আমার কোনো গার্মেন্টস নাই। আমার ভবন ভাড়া দিয়েছি। সেখানে ঝামেলা ছিল, তাই প্রশাসনের অনুরোধে সেখানে গিয়েছিলাম। হামলার ব্যাপারে তিনি বলেন, এসব যদি আমি করে থাকি তার ভিডিও আমার কাছে রয়েছে। ওদের কাছে কিন্তু কোনো অ্যাভিডেন্স নাই।
এ ব্যাপারে কারখানার মালিক হাবিবুর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সারোয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেশের অর্থনীতির হাতিয়ার যারা, তাদেরকে পাওনা থেকে বঞ্চিত করে আবার তাদের ওপরই হামলা অমানবিক। আমরা মনে করি একটি অশুভ চক্র গার্মেন্টস খাতে অসন্তোষ সৃষ্টির লক্ষে শ্রমিকদের ভেতরে অন্তোষ সৃষ্টি চেষ্টা করছেন। আমরা প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থার হস্তক্ষেপ কামনা করছি। একইসঙ্গে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ও নির্যাতনের বিচার দাবি করছি।
আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শ্যামলেন্দু ঘোষ ঢাকা পোস্টকে বলেন, গতকাল একটি সাধারণ ডায়েরি হয়েছে। এ ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মাহিদুল মাহিদ/আরআই