‘অপসাংবাদিকদের হাত থেকে সাংবাদিকদের রক্ষা করতে হবে’

বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিম বলেছেন, সারাদেশে সাংবাদিকতার নামে কিছু অন্যায় সাংবাদিকরাও করছেন। এর জন্য ‘পানিশমেন্টের’ ব্যবস্থা থাকা উচিত। এখন জরিমানার বিষয় যুক্ত করা হচ্ছে, আগামীতে কারাদণ্ডের বিধান যুক্ত করা হবে।
ফরিদপুরে স্থানীয় সাংবাদিকদের নিয়ে আয়োজিত এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রোববার (২৯ মে) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ফরিদপুর সার্কিট হাউসে জেলা প্রশাসনের সহায়তায় ‘ফরিদপুরের প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দের অংশগ্রহণে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল আয়োজিত সাংবাদিকতার নীতিমালা, প্রেস কাউন্সিল আইন ও আচরণবিধি এবং তথ্য অধিকার আইন অবহিতকরণ’ শীর্ষক এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
নিজামুল হক বলেন, ১৯৭৪ সালে প্রেস কাউন্সিল গঠিত হয়। ওই সময় সাংবাদিকদের নীতিমালা ও আচরণবিধি প্রণয়ন করা হয়। ওই সময় প্রণীত প্রেস কাউন্সিল আইনে সাংবাদিকদের সংবাদ সংক্রান্ত অপরাধের জন্য সতর্ক করা কিংবা বড় জোর তিরস্কার করার বিধান ছিল। কিন্তু এখন সময় পাল্টে গেছে।
তিনি বলেন, সাংবাদিকদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা ভালো না। কিন্তু সাংবাদিকতা একটি মহান ও মহৎ পেশা। এ পেশার গুরুত্ব বজায় রাখতে হলে অপসাংবাদিকদের হাত থেকে সাংবাদিকদের রক্ষা করতে হবে। এ কারণে সাংবাদিকতায় জবাদিহিতা এবং প্রয়োজনে সাংবাদিকের সাংবাদিকতার অধিকার কেড়ে নেওয়ার বিধান থাকতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন প্রেস কাউন্সিলের সদস্য প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবাহান চৌধুরী।
তিনি বলেন, তথ্য জানার অধিকার মানুষের মৌলিক অধিকার। এজন্যই তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। অথচ এ আইন কার্যকরে যতটুকু উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল তা এখন পর্যন্ত নেওয়া হযনি।
ইকবাল সোবাহান চৌধুরী বলেন, দেশে গণমাধ্যমের সংখ্যা যত বাড়ছে, গণমাধ্যমের প্রতি মানুষের আস্থা তত কমে যাচ্ছে। আমরা আমাদের নিজেদের কর্মকাণ্ডের জন্য বিতর্কিত হচ্ছি। সাংবাদিকতায় নীতি, আদর্শ ও নৈতিকতা না থাকলে সেখানে সুষ্ঠু সাংবাদিকতা থাকে না। সুষ্ঠু সাংবাদিকতার জন্য একদিকে স্বাধীনতা, অপরদিকে নীতি-নৈতিকতা ও দায়িত্ব থাকতে হবে।
তিনি আরও বলেন, দেশে বহু সাংবাদিক হত্যার বিচায় হয়নি। রাষ্ট্র আমাদের বিচার দিতে ব্যর্থ হয়েছে। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। অথচ রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিরাপত্তা ও অধিকার দেওয়া। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কোনো পুলিশ সদস্য আহত বা নিহত হলে রাষ্ট্র দায়িত্ব পালন করে, কিন্তু সাংবাদিকের পাশে রাষ্ট্র দাঁড়ায় না।
ইকবাল সোবাহান চৌধুরী বলেন, সারাদেশে সাংবাদিকদের একটি ডাটাবেজ তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। প্রথমে স্ব স্ব মিডিয়ার কাছ থেকে সাংবাদিকদের তালিকা নেওয়া হবে। পরে তা জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে প্রেস কাউন্সিল থেকে সাংবাদিকদের কার্ড দেওয়া হবে। এ কার্ড প্রতি ছয় মাস অন্তর নবায়ন করা হবে। এটি হলে হলুদ সাংবাদিকতা কমে যাবে, সাংবাদিকের মর্যাদা বাড়বে। সাত্যিকারের সাংবাদিকদের ভুঁইফোড় সাংবাদিকদের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকারের সভাপতি বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন প্রেস কাউন্সিলের সচিব মো. শাহ আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) জামাল পাশা, ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল ইসলাম প্রমুখ।
কর্মশালায় ফরিদপুরের ৪০ জন সাংবাদিক অংশ নেন। পরে তাদের হাতে সনদ তুলে দেন প্রধান অতিথি প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নিজামুল হক।
জহির হোসেন/আরএআর