ফের হরতালের হুমকি দিয়ে রাখলেন কাদের মির্জা

নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি), কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও পরিদর্শককে (তদন্ত) প্রত্যাহার এবং চরকাঁকড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা ফখরুল ইসলাম সবুজকে গ্রেপ্তারের দাবিতে বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) কোম্পানীগঞ্জে অর্ধদিবস হরতাল চলছে। দাবি আদায় না হওয়ায় সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা দ্বিতীয় দিনের মতো এ হরতাল কর্মসূচি দেন।
সকালে হরতালের সমর্থনে কয়েকশ নেতাকর্মী নিয়ে মিছিল বের করেন তিনি। পরে সকাল ১০টার দিকে বসুরহাটের রূপালী চত্বরে সমাবেশে বক্তব্য দেন। এ সময় তিনি দাবি না মানলে আগামীকাল শুক্রবার সকাল-সন্ধ্যা কোম্পানীগঞ্জে কঠোর হরতাল হবে বলে হুমকি দেন।
মেয়র আবদুল কাদের মির্জা বলেন, আমি মন্ত্রী হতে চাই না, এমপিও হতে চাই না। আমি জেলা কমিটির সহ-সভাপতি পদকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছি। কোম্পানীগঞ্জের মানুষরা আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে তাই আমি তাদের পাশে থাকতে চাই।
বড় ভাই ওবায়দুল কাদেরের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, উনি বলেছেন ঘরে ঘরে চাকরি দেবেন। আজ বেকার যুবকরা চাকরি না পেয়ে নেশা ও খারাপ কাজের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
মেয়র আব্দুল কাদের মির্জা বলেন, তিন মাসের মধ্যে কোম্পানীগঞ্জে গ্যাস দিতে হবে।
সকাল ৬টায় শুরু হওয়া এ হরতাল কর্মসূচি দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলবে। সকাল ১০টায় কোম্পানীগঞ্জ শহর ঘুরে দেখা যায়, শহরের দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস-ট্রাক ছেড়ে যায়নি এবং বাইরে থেকে কোনো বাস-ট্রাক কোম্পানীগঞ্জে আসেনি। বন্ধ রয়েছে আন্তজেলা রুটের সকল বাস। তবে সড়কগুলোতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করতে দেখা গেছে। পৌর শহর ও বাস টার্মিনাল এলাকায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। হরতালের সমথর্নে মেয়র কাদের মির্জা সমর্থকদের নিয়ে বিভিন্ন স্থানে লাঠিশোটা নিয়ে মিছিল করছেন।
এদিকে হরতালে নাশকতা ঠেকাতে পৌর শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও মোড়সমূহে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
কোম্পানিগঞ্জ থানা পুলিশের ডিউটি অফিসার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) জহির ঢাকা পোস্টকে বলেন, হরতালে এখন পর্যন্ত কোথাও অগ্নিসংযোগ বা কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। যান চলাচল বন্ধ আছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত আছি।
কোম্পানিগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহিদুল রনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। মেয়র আবদুল কাদের মির্জা নিজেই পিকেটিং করছেন। সমর্থকরা পুলিশের ওপর উদ্যত হওয়ার চেষ্টা করেছেন।
অপরদিকে হরতালের সমথর্নে ও হরতাল সফল করার আহ্বান জানিয়ে বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টায় পৌরসভার রূপালী চত্বরে সংবাদ সম্মেলন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন মেয়র আবদুল কাদের মির্জা।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় আবদুল কাদের মির্জা ফেনীর দাগনভূঁইয়া ও চট্টগ্রামে তার ওপর হামলা ও হত্যার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বসুরহাট রূপালী চত্বরে সংবাদ সম্মেলন করেন। যাতে তিনি ফেনীর সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী, নোয়াখালীর সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীসহ দাগনভূঁইয়া ও সোনাগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে অভিযুক্ত করেন।
সংবাদ সম্মেলন চলাকালে উপজেলার টেকের বাজারে আবদুল কাদের মির্জার বিরুদ্ধে একটি সমাবেশ করেন চরকাঁকড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা ফখরুল ইসলাম। কাদের মির্জা কোম্পানীগঞ্জকে জিম্মি করে রেখেছেন উল্লেখ করে তিনি বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরেন। সমাবেশ শেষে সেখানে একটি বিক্ষোভ মিছিল হয়।
সমাবেশের খবরে কাদের মির্জার একদল সমর্থক টেকের বাজারে যান। সেখানে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে থানা থেকে পুলিশ গিয়ে ফখরুল ইসলামকে আটক করেন। এ সময় সমর্থকরা পুলিশের কাছ থেকে ফখরুলকে ছিনিয়ে নিয়ে যান। এ ঘটনার প্রতিবাদে কাদের মির্জা রাত সাড়ে ৮টার দিকে কয়েকশ নেতাকর্মী নিয়ে থানার সামনে অবস্থান নেন। সেখানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান, পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন ও কোম্পানীগঞ্জের ওসির প্রত্যাহারের দাবি জানান। পাশাপাশি সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী ও একরামুল করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। একই সঙ্গে দাবি আদায়ে বুধবার কোম্পানীগঞ্জে হরতালের ডাক দেন।
পরে একই দাবিতে রাত সাড়ে ৮টর দিকে কয়েকশ নেতাকর্মী নিয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানার সামনে অবস্থান নিয়ে থানা ঘেরাও ও অবরোধ করেন কাদের মির্জা। রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত তিনি সেখানে অবস্থান করেন। তবে নেতাকর্মীরা রাতভর থানা অবরোধ করে রাখেন। পরে সকালে থানার সামনে উপস্থিত হয়ে আল্টিমেটাম দিয়ে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন মেয়র কাদের মির্জা।
হাসিব আল আমিন/আরএআর