বগুড়ায় পানির নিচে ধান, দিশেহারা কৃষক

বগুড়ায় গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে বোরো ধানের খেত তলিয়ে গেছে। জমিতেই গজিয়েছে গাছ। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। প্রথম দিকে কৃষকেরা ধান রক্ষার জন্য প্রাণপন চেষ্টা করেছেন । কিন্তু লাগাতার ভারী বর্ষণে কৃষকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেছে। এখন নিচু জমির কৃষকরা অনেকে ধানের আশা ছেড়েই দিয়েছেন।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে বগুড়ায় ১ লাখ ৮৭ হাজার ৪১৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ লাখ ৭ হাজার ৬২৩ মেট্রিক টন।
তবে কৃষকরা জানিয়েছেন, অসময়ে বৃষ্টি ও ঝড়ের কারণে এবার উৎপাদন কম হচ্ছে। ঝড়-বৃষ্টির কারণে ধান কাটা শ্রমিকের মূল্যও বৃদ্ধি পেয়েছে। সব মিলিয়ে ধানের দাম বাড়লেও কৃষকরা হাসতে পারছেন না।
জেলার শেরপুর উপজেলার খানপুরের ধানচাষি আব্দুল মান্নান বলেন, এবার কৃষকদের মুখে হাসি নাই। আমাদের খুব করুণ দশা। ঋণ নিয়ে আবাদ করছি। কিন্তু আমরা ধান ঘরে তুলতে পারছি না। ঝড়-বৃষ্টিতে ধান পড়ে গেছে এবং পচে গেছে। বাজারে বিক্রি করতে পারছি না। পচা ধান কেউ নেই না। ধান ধরে যে কাটবো সে সুযোগও নাই।
আরেক ধানচাষি খলিলুর রহমান বলেন, ঝড়ে ধান পড়ে গেছে। যে ধান পড়ে গেছে সেগুলোতে ধানের গাছ গজিয়েছে। এই ধান বিক্রি করতে পারছি না। ধান মাড়াইয়ে বিঘা প্রতি খরচ হচ্ছে ৭০০ টাকা। ধান কাটার কামলা পাওয়া যাচ্ছে না।

ধান কাটার এক শ্রমিক বলেন, আগে তিন হাজার টাকা বিঘা ধান কাটছি। তাতে আমাদের লাভ হয়েছে। এখন ছয় হাজার টাকা বিঘা ধান কাটছি। আমাদের লস হচ্ছে। ধান কাটা আগাচ্ছে না। ভার বেশি হচ্ছে। এ জন্য আমাদের লোকসান হচ্ছে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. দুলাল হোসেন বলেন, বৃষ্টির কারণে কিছুটা ধান নুয়ে পড়েছে। খরচটা বাড়বে। এক বিঘা জমিতে ধান কাটতে ৫-৬ জন কৃষক লাগে। ধান কাটতে লাগে বিঘা প্রতি ৫-৬ হাজার টাকা লাগে। যেহেতু ধানের দাম বেশি, সেহেতু কষ্ট হলেও কৃষকরা ধান কাটতে শুরু করেছেন। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে দৃশ্যমান ধান কাটা হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, দেশে এখন শ্রমিকের সংকট। যার কারণে শ্রমিকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমাদের খামার যন্ত্রের প্রকল্পের আওতায় আমরা প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে ধান কাটার যন্ত্র বিতরণ করেছি। ধান কাটার যন্ত্রের মাধ্যমে ধান কাটা শুরু হয়েছে। লেবারও কাটছে। যন্ত্র দিয়ে এক বিঘা জমিতে ধান কাটতে আধাঘণ্টা সময়ও লাগে না। ধান কাটা, মাড়াই, প্যাকেটিং একসঙ্গে হয়ে যাচ্ছে। এটা সাশ্রয়ী পদ্ধতি। সরকার কৃষির জন্য সর্বশক্তি নিয়োগে করে কাজ করছে।
আরএআর