বাড়িঘর থেকে নামেনি পানি, বাড়ছে খাদ্যসংকট
কয়েক দিন ধরে পানিবন্দি। তাই বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য-সংকটসহ চরম দুর্ভোগে পরিবারটি। সদস্যদের জন্য খাবার দরকার। তাই কোমরপানি মাড়িয়ে মঙ্গলবার (২১ জুন) বিকেলে দুই কিলোমিটার দূর থেকে স্থানীয় প্রশাসনের দেওয়া ত্রাণের প্যাকেট নিয়ে তা মাথায় করে বাড়ি ফেরেন গৃহবধূ রুবিনা আক্তার।
নেত্রকোণার মদন উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের হাসনপুর গ্রামের হিরণ মিয়ার স্ত্রী রুবিনা আক্তারই শুধু নয়, এমন অবস্থা জেলার হাজার হাজার পরিবারের।
বন্যায় নেত্রকোণার ১০টি উপজেলার ৭৫টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি রয়েছে ১০ লক্ষাধিক মানুষ। এর মধ্যে জেলার ৩২৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে দেড় লক্ষাধিক মানুষ। বেশির ভাগ লোকজনই বসবাস করছে পানিবন্দি অবস্থায়।
পানিতে তলিয়ে জেলার অন্তত ২৫ হাজার পুকুর, ৬ শতাধিক হাঁস-মুরগির খাবার ও সহস্রাধিক হেক্টর জমির আউশ ধান, পাটসহ সবজি জাতীয় ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জেলা কৃষি ও মৎস্য বিভাগ সূত্র জানিয়েছে।
জেলার ১০ উপজেলার মধ্যে নেত্রকোণা সদর, দুর্গাপুর, কলমাকান্দা, বারহাট্টা, মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরী, মদন, আটপাড়া ও কেন্দুয়ার ৮৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ৭৫টি ইউনিয়নই বন্যায় প্লাবিত হওয়ায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন জেলাবাসী। বন্যায় জেলার ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
তবে দুদিন ধরে বৃষ্টিপাত না থাকায় এবং উজানের ঢলের পানি বন্ধ থাকায় ধীরগতিতে কমতে শুরু করেছে নদ-নদীর পানি। উঁচু এলাকার পানি কিছুটা কমতে শুরু করলেও গ্রাম এলাকার বাড়িঘর থেকে বন্যার পানি নামেনি। এ অবস্থায় আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেওয়া দেড় লক্ষাধিক মানুষ কিছুটা ত্রাণসহায়তা পেলেও চরম খাদ্য-সংকটে রয়েছে প্রত্যন্ত এলাকার পানিবন্দি হাজার হাজার মানুষ। তাদের মধ্যে শিশু খাদ্য ও পশুখাদ্যের সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে।
জেলার মদন উপজেলার ধোবওয়ালা গ্রামের বাসিন্দা ভুক্তভোগী মোহন মিয়া বলেন, কয়েক দিন ধরে আমরা পানিবন্দি অবস্থায় আছি। বসতঘরসহ এলাকার সবার ঘরবাড়ি পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে অতি কষ্টে আমরা দিন কাটাচ্ছি। এখনো বাড়িঘর থেকে পানি নামেনি। কবে যে এই কষ্টের শেষ হবে তা বলতে পারছি না।
বাড়িঘরের মায়া ছাড়তে না পেরে তিনি বলেন, এলাকার অনেকেই গরু-ছাগল নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে। কিন্তু আমরা যাইনি। আমাদের ঘরবাড়ি, গবাদি পশু-পাখি ও মালামাল রেখে আমরা কীভাবে যাব? তাই শত কষ্ট সহ্য করেও বাড়িতেই থাকছি।
বন্যাদুর্গত লাখ লাখ মানুষের সেবায় কাজ করছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তারা বানভাসিদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রেখেছে। তবে বন্যাদুর্গত জনসংখ্যার তুলনায় ত্রাণসহায়তার পরিমাণ খুবই অপ্রতুল বলে জানান দুর্গতরা।
মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বুলবুল আহমেদ বলেন, আমার উপজেলার অন্তত লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা বন্যাদুর্গত এসব অসহায় মানুষের পাশে আছি এবং তাদের মধ্যে সরকারি ত্রাণসহায়তা পৌঁছে দিচ্ছি।
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, বন্যাদুর্গতদের জন্য সরকার ৩৩৩ মেট্রিক টন চাল, ১৩ লাখ টাকা ও ৪ হাজার ৯৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দিয়েছে। এর মধ্যে ১৩১ মেট্রিক টন চাল, ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ২ হাজার ৩০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। ত্রাণ বিতরণকাজ অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
মো. জিয়াউর রহমান/এনএ