‘বজ্রপাতে পরিবারের ১৫ জনকে হারিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে পাশে পেয়েছি’

‘ছেলের বিয়েতে বরযাত্রী হিসেবে পাঠিয়েছিলাম পরিবারের ৫০ জনকে। তাদেরকে বাড়ি থেকে বিদায় করে অপেক্ষায় ছিলাম ঘরে নতুন বউ তোলার। কিন্তু এক বজ্রপাতের ঘটনায় নতুন বউ ঘরে আনার আনন্দ-উচ্ছ্বাস সব কিছু শেষ হয়ে যায়। ঘরে নতুন বউ আসার বদলে ফিরে আসে পরিবারের ১৫ জনের মরদেহ। বাবা-মা, স্বামী, জামাই, ননদ ও তার স্বামী, বোন, বোনের ছেলে, ভাই-ভাবি, ভাতিজা, দেবর, ভাসুরের মেয়ে জামাই বজ্রপাতে মারা যায়।’
এভাবেই গত বছরের ৪ আগস্টে ছেলের বউভাতের দিনের ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের দক্ষিণ পাঁকা গ্রামে বউভাতের অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে বজ্রপাতে পরিবারের ১৫ জন হারানো নারী মোসা. চেমালী বেগম। তিনি সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের নামো সূর্যনারায়ণপুর গ্রামের মৃত মো. শরিফুল ইসলামের স্ত্রী।
বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) বিকেলে বজ্রপাতে নিহত ১৪ পরিবারকে ৫ লাখ টাকা করে অর্থ সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠান শেষে ঢাকা পোস্টকে এসব কথা বলেন চেমালী বেগম। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে একই সঙ্গে নিহত পরিবারগুলোর মাঝে এসব সহায়তার চেক বিতরণ করা হয়। জেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে সদর উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের কালিনগর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নিহতদের স্বজনদের মাঝে চেক বিতরণ করা হয়।
চেমালী বেগম বলেন, চোখের সামনে আমার পরিবারের ১৫ জনকে দাফন হতে দেখেছি। আমি সেদিন বউভাতের অনুষ্ঠানে গেলে হয়তো আমিও আজকে বেঁচে থাকতাম না। সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। কিন্তু পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকে আমাকে ৫ লাখ টাকার একটি চেক দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সব হারানোর শোক হয়ত কোনো দিনই ভুলতে পারব না, কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এই সহায়তায় সংসার নিয়ে কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়াতে পারব।
চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল ওদুদ। জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুহা. জিয়াউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ডা. শামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল। এ সময় নিহতদের পরিবারের সদস্য, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণ, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য ডা. শামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল বলেন, গত বছরের ৪ আগস্ট বজ্রপাতের ঘটনাটি দেশের গন্ডি পেরিয়ে সারাবিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমে গুরুত্ব দিয়ে প্রচার হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী নিজেই নিহত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াতে তাদের তালিকা চান। এরই প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৪টি পরিবারের মাঝে ৫ লাখ করে টাকা সহায়তা প্রদান করেছেন। তিনি স্যতিকার অর্থেই একজন মানবতার মা, এ ঘটনা তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ।
চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওদুদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিনিয়ত মানবতার পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় বজ্রপাতে নিহতদের পরিবারকে এই আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এতে পরিবারগুলোর মাঝে কিছুটা হলেও আর্থিক নিরাপত্তা ও সচ্ছলতা ফিরবে। এমন মানবিক কাজের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ ধন্যবাদ জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৪ আগস্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের দক্ষিণ পাঁকা গ্রামে বউভাতের অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে সময় বজ্রপাতে ১৬ জনের মৃত্যু হয়। তারা সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের সূর্যনারায়ণপুর গ্রাম থেকে যাওয়ার পথে দক্ষিণ পাঁকা নামক ঘাটে এ ঘটনা ঘটে।
জাহাঙ্গীর আলম/আরএআর