দেনাদারের বাড়িতে মরদেহ নিয়ে স্বজনদের অনশন
পঞ্চগড়ের সদর উপজেলায় এক দেনাদারের বাড়িতে পাওনাদারের মরদেহ প্রায় সাত ঘণ্টা রেখে অনশন করেন তার স্বজনরা। পরে স্থানীয় ব্যক্তিদের মাধ্যমে ঘটনাটির সমাধান হয়। শুক্রবার (১২ আগস্ট) বেলা ১১টায় দারুন ফালা দাখিল মাদরাসায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) রাতে পঞ্চগড়ের সদর উপজেলার সাতমেরা ইউনিয়নের প্রধান পাড়া এলাকার দেনাদার জুলফিকার আলীর বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। জুলফিকার দারুন ফালা দাখিল মাদরাসার সাবেক সভাপতি। তিনি ওই এলাকার মৃত আব্দুর সাত্তার ছেলে। তিনি মৃত দবিরুল ইসলামের মামাশ্বশুর।
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, দুই বছর আগে প্রধানপাড়া দারুনফালা দাখিল মাদরাসার সভাপতি ছিলেন জুলফিকার আলী। দবিরুল ইসলাম প্রধানের সঙ্গে আত্মীয়র সূত্র ধরে তখন জুলফিকার আলী মাদরাসার গ্রন্থাগারিক শূন্য পদে লোক নিয়োগের কথা জানান দবিরুল ইসলামকে। তিনি ছেলে জাকির হোসেনকে নিয়োগের জন্য আগ্রহ জানালে প্রথমে প্রায় ১১ লাখ টাকা ও পরে গ্রন্থাগারিক জাল সনদের জন্য আরও ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন।
চাকরি দিতে না পারায় জুলফিকার আলীর কাছে টাকা ফেরত চাইতে গেলে দবিরুল ইসলামকে অপমান-অপদস্ত করা হয়। গত ৭ আগস্ট স্ট্রোক করলে রংপুর প্রাইম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় বৃহস্পতিবার দুপুরে মারা যান।
পরে জুলফিকার আলীর বাড়িতে মরদেহ নিয়ে অনশনে বসেন স্বজনরা। এ সময় জুলফিকার ও তার পরিবার পালিয়ে যায়। প্রায় সাত ঘণ্টা পর স্থানীয় ব্যক্তিদের উদ্যোগে সমাধান হলে জুলফিকার ৬ লাখ টাকা দিতে রাজি হন। এ সময় জুলফিকার ১ লাখ টাকা নগদ ক্যাশ ও ব্যাংকের চেকে ৫ লাখ টাকা সই করে দুই মাসের সময় নিয়েছেন।
টাকা চাইতে গিয়ে অপমান-অপদস্ত হওয়ায় স্ট্রোকে করে মারা গেছেন দবিরুল ইসলাম, এমন দাবি করে দবিরুলের ভাই বদিরুল ইসলাম বলেন, আমার ভাতিজাকে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ১২ লাখ টাকা দাবি করে জুলফিকার। আমার বড় ভাই জমি ও গরু বিক্রি করে তাকে ১২ লাখ টাকা দেয়। কিন্তু জুলফিকার চাকরি না দিয়ে প্রতারণা করেছে। টাকা ফেরত চাওয়ায় আমার বড় ভাইকে লাঞ্ছিতও করা হয়।
দবিরুল ইসলামের ছোট ছেলে আব্দুস সবুর জানান, মাদরাসার সভাপতি জুলফিকার আলী আমাদের আত্মীয় হন। তিনি বাবার মামাশ্বশুর। আত্মীয় হয়েও বাবার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। চাকরির কথা বলে টাকা নিলেও চাকরির ব্যবস্থা করে দেননি। পরে বাবা পাওনা টাকা চাইতে গেলে তাকে অপমান করেন জুলফিকার। নিজের মামাশ্বশুরের কাছে এ রকম প্রতারণার শিকার হবেন, তা ভাবিনি কেউ।
সাতমেরা ইউপির সদস্য হেলাল উদ্দিন বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে জুলফিকারের বাড়িতে লাশ নিয়ে অবস্থানের খবর পেয়ে যাই। এ নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করে। পরে স্থানীয়দের মাধ্যমে ঘটনাটির সমাধান নিয়ে বসা হলে জুলফিকার ৬ লাখ টাকা দিতে চাওয়ায় পরিস্থিতি শান্ত হয়। এ সময় জুলফিকার ১ লাখ টাকা নগদ ক্যাশ ও ব্যাংকের চেকে ৫ লাখ টাকা সই করে দুই মাসের সময় নিয়েছেন।
পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল লতিফ মিঞা বলেন, বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণমান্য ব্যক্তিরা সমাধান করেছেন। মরদেহের জানাজা সম্পন্ন হয়েছে।
এনএ