রূপগঞ্জে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে লাখো মানুষ

কোনো নিয়মনীতি ও স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সর্বত্রই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খোলা খাবার বিক্রি করা হচ্ছে। এখানকার অধিকাংশ হোটেলে নোংরা পরিবেশে হচ্ছে রান্না ও খাবার পরিবেশন। বিশেষ করে হোটেলগুলোতে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। এ ছাড়া এসব হোটেলের নেই কোনো লাইসেন্স বা সরকারি অনুমোদন।
এদিকে উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, এশিয়ান হাইওয়ে ও পূর্বাচল ৩০০ ফিট সড়কের পাশেও অবাধে বিক্রি করা হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর খাবার। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিনা নজরদারি ও খামখেয়ালিপনায় রূপগঞ্জ উপজেলার লাখো মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
রূপগঞ্জ উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক মো. মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে হোটেল থেকে লাখ লাখ টাকা মাসোহারা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তবে মাসোহারার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে বলেন, জনবল কম থাকায় রূপগঞ্জের হাট-বাজারে সময়োপযোগী তদারকি সম্ভব হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গুরুত্বপূর্ণ শিল্প এলাকা রূপগঞ্জ উপজেলার ভোটার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ লাখ হলেও ভাড়াটিয়া-বহিরাগতসহ এখানে ১০ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। তারাব ও কাঞ্চন নামে দুটি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত রূপগঞ্জ উপজেলা। ব্রিটিশ আমল থেকেই এখানে নানা শিল্পকারখানা গড়ে ওঠায় ব্যস্ততম এলাকায় রূপান্তরিত হয়েছে রূপগঞ্জ।
নারায়ণগঞ্জের অন্যতম শিল্প এলাকা বলে এখানে শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের বসবাস বেশি। আর উপজেলায় ছোট-বড় ও অস্থায়ী খোলা খাবারের দোকানসহ ৩ সহস্রাধিক হোটেল রয়েছে। এদিকে রূপগঞ্জের নিম্নআয়ের শ্রমজীবী মানুষের নোংরা পরিবেশেই এসব হোটেল থেকে খাবার খেতে হচ্ছে। অথচ উপজেলার দুটি পৌরসভায় খাদ্য পরিদর্শক নিয়োগ থাকলেও আশঙ্কাজনক হারে নোংরা পরিবেশে খোলা খাদ্য বিক্রি বেড়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার ভুলতা উড়ালসেতুর নিচে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দু’পাশসহ লেনে শতাধিক ছোট-বড় রেস্তোরাঁ ও ভাসমান খোলা খবারের দোকান রয়েছে। এখানে ধুলাবালুর মধ্যেই অবাধে খাবার প্রস্তুত ও বিকিকিনি চলছে। তাছাড়া হোটেলগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। কোনো হোটেল কর্মচারী ও খাবার ব্যবসায়ীরা মাস্ক ব্যবহার করছেন না। খোলা জায়গায় আলুর চপ, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চিকেন ফ্রাই, বার্গার, হালিম, ফুচকা, নুডুলস ও পিঠা বিক্রি করা হচ্ছে।
একইভাবে দেখা গেছে, পূর্বাচলের নতুন শহরতলী, তারাববাজার, বরাববাজার, রূপসীবাজার, নোয়াপাড়াবাজার, কাঞ্চনবাজার, মুড়াপাড়াবাজার, ভক্তবাড়ি, ইছাপুরা, নগরপাড়া, বেইলদি, দাউদপুর, আতলাপুরবাজারসহ ৭ ইউনিয়নের সর্বত্রই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার বিক্রি করা হচ্ছে।
জানা যায়, এসব হোটেলে রান্নার কাজে ব্যবহার হচ্ছে অত্যন্ত নিম্নমানের ভোজ্যতেল। এরমধ্যে নিম্নমানের পাম অয়েল, সুপার সয়াবিন, বিভিন্ন খাদ্য উৎপাদনকারী কারখানার ড্রামের ময়লা থেকে সংগ্রহ করা তেল ব্যবহারে তৈরি করা হচ্ছে খাবার। অথচ এসব বিষয়ে নেই প্রশাসনের কোনো নজরদারি।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিভিন্ন হোটেল ও খোলা দোকান থেকে প্রতিনিয়ত খাবার খেয়ে উপজেলার অধিকাংশ খেটে খাওয়া মানুষ পেটের পীড়ায় ভুগছেন। এরইমধ্যে অনেকেই গ্যাসট্রিক, আলসার ও বদহজমে ভুগছেন। আর কর্মস্থলে এসে এসব হোটেল ছাড়া অন্য কোথাও খাবার খাওয়ার উপায় থাকে না। ভুক্তভোগীদের দাবি, এসব হোটেলে সুষ্ঠু তদারকি করে খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণ করা হোক।
উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ফয়সাল আহম্মেদ মোবাইল ফোনে ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিম্নমানের তেলে রান্না করা ও অস্বাস্থ্যকর খোলা খাবার খেলে মানুষের গ্যাসট্রিক, আলসার ও বদহজম লেগেই থাকবে।
ভুলতা এলাকার পোশাকশ্রমিক হারেজ মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই ভুলতা উড়ালসেতুর নিচে খোলা হোটেলে দুপুরের খাবার খেতে হয়। এসব হোটেলে নিম্নমানের তেল দিয়ে রান্না করা হয়। কয়েকবছর ধরেই গ্যাসট্রিকে ভুগছি।
মুড়াপাড়া ওয়াটা ক্যামিকেল কারখানার শ্রমিক লাল মিয়া বলেন, কাজে আসার পরে খাবার খাই খোলা হোটেলে ও ভাসমান দোকানে। ভালো খাবার খেতে অনেক টাকা লাগে বলে কম দামে রাস্তায় খাই। প্রায়ই পেটে ব্যথা হয়। আর গ্যাসট্রিক তো লেগে আছেই।
রূপগঞ্জ উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, দুটি পৌরসভা বাদে সর্বত্রই আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এক্ষেত্রে ছোট-ছোট বিনিয়োগকারী খাবারের হোটেল ও দোকানগুলোর পক্ষে লাইসেন্স করার খরচ জোগান দেওয়া কষ্টসাধ্য হয়। তাই মানবিক দিক থেকে তাদের বিবেচনা করা হলেও স্বাস্থ্যকরভাবে রান্না ও পরিবেশন করার বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার (রূপগঞ্জ-আড়াইহাজার সার্কেল) মাহিন ফরাজি বলেন, খোলা খাবার বিক্রি বন্ধ করতে প্রায়ই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। দ্রুত স্বাস্থ্যকর খাবার বিক্রি ও পরিবেশনে সংশ্লিষ্টদের সচেতন করতে মতবিনিময় সভা করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহ নুসরাত জাহান মোবাইল ফোনে ঢাকা পোস্টকে বলেন, বুধবারও মোবাইল কোর্ট বসানো হয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের মনিটরিং রয়েছে। মধ্যবর্তী করোনাকালীন অভিযান শিথিল থাকলেও বর্তমানে মনিটরিং রয়েছে। আর বিশুদ্ধ খাবার আইন অমান্য করলে প্রতিটি এলাকায় বিধি অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এমএসআর