চার বছর ধরে থমকে আছে ৪ লেনের কাজ

জয়পুরহাট শহরের প্রধান সড়কটি চার লেনে উন্নীত করার জন্য চার বছর আগে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলেও এখনো কাজ শুরু হয়নি। সড়কটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছিল সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)। তবে এখন এই প্রতিষ্ঠানের কেউ জানেন না কখন কাজ শুরু হবে।
তবে তারা বলছেন, নকশার ক্রুটি থাকায় কাজ শুরু হয়নি। নকশার অনুমোদন পেলে নতুন দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে কাজ শুরু করা হবে।
এদিকে সড়কের দুই পাশে অধিগ্রহণ করা জায়গাগুলোতে আবার অস্থায়ী দোকানপাট গড়ে উঠছে। ফুটপাত দিয়ে মানুষ হাঁটা-চলাও করতে পারছে না। ফলে প্রতিদিনই অপ্রশস্ত প্রধান সড়কে যানজট লেগেই থাকছে। এতে শহরবাসীসহ সড়ক দিয়ে চলাচলকারীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। দ্রুত চার লেন সড়কের কাজ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন তারা।

জয়পুরহাট পৌরশহরের বাসিন্দারা জানান, অপ্রশস্ত সড়কটিতে প্রতিদিনই যানবাহন ও মানুষের চাপ বাড়ছে। এ কারণে সড়কে যানজট এখন তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। চার লেনে সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পের জন্য প্রধান সড়কের দুই পাশে জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়েছে। প্রায় দেড় বছর ধরে সড়কের দুই পাশে অধিগ্রহণ করা জায়গার স্থাপনা ভাঙা হয়েছে। চার লেনের কাজ শুরু না হওয়ায় সেই জায়গাগুলোতে আবার দোকানপাট বসছে।
ব্যাটারিচালিত অটোচালক সুলতান ইসলাম বলেন, অনেকদিন ধরে শুনছি শহরের রাস্তা ৪ লেন হবে। দুপাশের বিল্ডিংগুলোও ভেঙে জায়গা বের করা হলো। রাস্তার কাজ তো শুরুই হলো না। এখন শহরের বিভিন্ন স্থানে যানজট লেগেই থাকে।
জয়পুরহাট জেলা মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দিন দিন আটো-রিকশা বেড়ে যাচ্ছে। শহরে তীব্র যানজট হচ্ছে। বাসের সময় মানা যাচ্ছে না। দ্রুত চার লেন সড়কের কাজ বাস্তবায়ন করা হোক।

জানা গেছে, গত ২০১৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর জয়পুরহাট শহর এলাকা হারাইল কবরস্থান থেকে পূর্ব রেলগেট পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার সড়ক চার লেনে প্রশস্তকরণ কাজের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করা হয়। সেই সময় জয়পুরহাট-২ (আক্কেলপুর-কালাই ও ক্ষেতলাল) আসনের সংসদ সদস্য, বর্তমানে জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এই কাজের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন। সওজের সড়কটি নির্মাণ করার কথা ছিল। কিন্তু নির্মাণকাজ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মধ্যেই থেমে যায়।
সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পের কাজের জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগ জমি অধিগ্রহণ, বৈদ্যুতিক পোল, পানির লাইন, টেলিফোন লাইন, রেলগেট প্রশস্তকরণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে মোট ১০৪ কোটি ২২ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। অধিগ্রহণ করা জমি থেকে মালিকরা তাদের স্থাপনা সরিয়ে নিয়েছেন। তবে সড়কের বৈদ্যুতিক খুঁটি অপসারণ বা স্থানান্তর করা হয়নি।
সওজের জয়পুরহাট নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে একনেকে প্রকল্পটির অনুমোদন হয়েছিল। এরপর তিনটি প্যাকেজে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। ঠিকাদারও নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ঠিকাদার কাজ করেননি। পরে ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা হয়।

এরপর নালার নকশার ক্রুটি ধরা পড়ে। সেটি সংশোধন করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়। এখন নকশা অনুমোদন পেলে আবারও নতুন করে দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হবে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের জয়পুরহাট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী জাকির হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইতোমধ্যে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। বিদ্যুতের খুঁটি অপসারণ বা স্থনান্তর এবং টেলিফোন লাইন সরিয়ে প্রতিস্থাপনের জন্য টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দপ্তর তা করেননি।
চার লেন সড়কের সঙ্গে নালা ধরা ছিল। এই নালার নকশায় ভুল ধরা পড়ে। পরে সংশোধন করে তা অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হলে আগামী আক্টোবর-নভেম্বর মাসের দিকে নতুন দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে কাজ শুরু করা হবে বলে আশা করছেন এই কর্মকর্তা।
আরআই