একটু বৃষ্টিতেই চাল দিয়ে পানি পড়ে, পলিথিন মাথায় দিয়ে করতে হয় ক্লাস

গাজীপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে ভাওয়াল রাজার আমলে তৈরি জকী স্মৃতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শত বছরের পুরোনো বিদ্যালয়টিতে একটি একতলা ভবন রয়েছে। বর্তমানে বিদ্যালয়টির অধিকাংশ শ্রেণিকক্ষের অবস্থা জরাজীর্ণ। সামান্য বৃষ্টি হলেই চালের পানি গড়িয়ে পড়ে। বৃষ্টি একটু বেশি হলে শিক্ষার্থীদের ছাতা কিংবা পলিথিন মাথায় দিয়ে ক্লাস করতে হয়।
বিদ্যালয়টির ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী মোসা. মাসুমা আকতার জানান, আমাদের বিদ্যালয়ের চালার অবস্থা খুব খারাপ, সিলিংও ভাঙা। একটু বৃষ্টি হলেই শ্রেণিকক্ষের ভেতরে ফোঁটায় ফোঁটায় পানি পড়তে শুরু করে। মেঝেতে পানি জমে যায়। পানি মাড়িয়ে ক্লাস করতে হয়। আমাদের খুব দুর্ভোগ হচ্ছে পড়ালেখা করতে।
স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ক্লাশের অবস্থা খুবই খারাপ। আমাদের কোনো কোনো শ্রেণিকক্ষের ছাদে এবং দেয়ালেও ফাটল রয়েছে। অকেজো ভবনে আমাদের ক্লাস হচ্ছে। বেশি বৃষ্টি হলে চালের ফাঁকা দিয়ে পানি ঘরের ভেতরে পানি পড়ে। অনেক সময় শ্রেণিকক্ষের ভেতরেই আমাদের ছাতা কিংবা পলিথিন মাথায় দিয়ে ক্লাস করতে হয়।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাহবুবা রহমান বলেন, ১৯২৩ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত। ১৯৭৩ সালে এটি জাতীয়করণ হয়। স্কুলটি এ গ্রেডের হলেও এখানে ভালো শ্রেণিকক্ষ নেই। স্কুলের (অফিস কক্ষ বাদে) ১৫টি শ্রেণিকক্ষের মধ্যে ৬টি ভালো। বাকিগুলো পাঠদানে অনুপযোগী। শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে ভাওয়াল রাজার আমলের একতলা অকেজো ভবনেও ক্লাস নিতে হচ্ছে। এ ভবনের দুটি শ্রেণিকক্ষের ছাদ ও দেয়ালে ফাটল রয়েছে। ঝুঁকির মধ্যেই ক্লাস নিতে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সেমিপাকা অন্য ভবনের টিনের চালা-সিলিং ভাঙা ও স্থানে স্থানে ফুটো রয়েছে। তা দিয়ে বৃষ্টির পানি শ্রেণিকক্ষে ঢুকে। এতে শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতে সমস্যা হয়। স্কুলটিতে ১৭ জন শিক্ষক ও ৯৫৭ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এখানে ২০১৩ সাল থেকে ষষ্ঠ-অষ্টম শ্রেণি (সরকারের পাইলট প্রকল্প) চালু হয়েছে।
২০০০ সালে একটি দোতলা ভবন এবং ২০০১ সালে দুই কক্ষের একটি একতলা ভবন নির্মিত হলেও দোতলা ভবনের ছয়টি কক্ষের মধ্যে দুটি ব্যবহৃত হচ্ছে অফিস কক্ষ হিসেবে। এখানে শিক্ষক সংকট নেই। তবে পাঠদানের মানসম্মত শ্রেণিকক্ষের সংকট রয়েছে।

এ ব্যাপারে বিভিন্ন সময় জেলা শিক্ষা অফিস, স্থানীয় মন্ত্রী/এমপিদের কাছেও একাধিকবার আবেদন করেছি। তারা আশ্বাস দিলেও ভবন পাইনি। কিন্তু মাঝে-মধ্যে সংস্কারের জন্য স্বল্প পরিমাণে টাকা পেয়েছি। যা দিয়ে সংস্কার করলেও তা বেশি দিন টেকে না। ২০১৭ সালে স্থানীয় সরকার বিভাগের এক প্রকৌশলী স্কুল পরিদর্শন করে পুরোনো ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করলেও শ্রেণিকক্ষের অভাবে সেখানেও ক্লাস নিতে হচ্ছে। এই অবস্থায় নতুন ভবন নির্মাণ করা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।
সর্বশেষ এই প্রতিষ্ঠান থেকে ২০১৯ সালের সমাপনী পরীক্ষায় ২৬০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১২৫ জন ‘এ প্লাস’, ১৮ জন ট্যালেন্টপুলে এবং দুজন সাধারণ গ্রেডে বৃত্তিসহ শতভাগ পাস করেছে। শ্রেণিকক্ষের সংকট কাটলে শিক্ষার্থীদের পাসের ও শিক্ষার মান আরও বাড়বে বলে আশা করছি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মোফাজ্জল হোসেন বলেন, এ স্কুলে মানসম্মত পাঠদানের জন্য আরও কমপক্ষে ৯টি শ্রেণিকক্ষ প্রয়োজন। কক্ষ সংকটে পাঠদানে সমস্যা হচ্ছে। ইতোপূর্বে ভবন বরাদ্দের জন্য ডিজি অফিসে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। তবে কেন পায়নি তা বলতে পারছি না। আবারো ভবনের জন্য প্রস্তাব পাঠাব এবং সশরীরে ডিজি স্যারকে বিষয়টি বলব। বিভিন্ন সময় মেরামতের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হলেও তা শ্রেণিকক্ষ নির্মাণের জন্য যথেষ্ট নয়।
শিহাব খান/এসপি