গোমূত্র-লতাপাতা দিয়ে হাড় ভাঙার চিকিৎসা, পলাতক কবিরাজ

মিলন সেখ। বয়স ২৮ ছুঁই ছুঁই। পেশায় ট্রাকচালক। তিনি পিরোজপুর শহরের আলামকাঠী এলাকার বাসিন্দা। কয়েকদিন আগে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় তার দুই পায়ের হাড় ভেঙে যায়। চট্টগ্রাম থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়া হয় তাকে। সেখান থেকে চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে মনিরুজ্জামান নামে এক ব্যক্তি তাকে বাগেরহাটে নিয়ে আসেন। তার অপচিকিৎসায় ট্রাকচালক মিলন এখন প্রায় পঙ্গু। মনিরুজ্জামান চিকিৎসার নামে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়ে হয়েছেন লাপাত্তা।
ভুক্তভোগী মিলনের ভাই রাজু সেখ জানান, গত ২৩ জুন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ট্রাক দুর্ঘটনায় দুই পায়ের হাড় ভেঙে আহত হওয়ার পর মিলনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে বলা হয় ১০-১৫ দিন পর অপারেশন করা হবে। পরবর্তীতে সেখানেই পরিচয় হয় মনিরুজ্জামান নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি তাদের অল্প খরচে পা ভালো করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে প্রথমে এক মাস নারায়ণগঞ্জে রেখে চিকিৎসা দেন। পরে বাগেরহাটে নিয়ে আসেন। তিনি ৫০ হাজার টাকা নগদ ও বিভিন্ন সময়ে চিকিৎসার কথা বলে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
মিলনের স্ত্রী ডলি বেগম বলেন, কবিরাজ মনিরুজ্জামান আমাদের বাগেরহাটে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য বলেন। পার্শ্ববর্তী জেলা হওয়ায় আমরা ঢাকা থেকে চলে আসি। কিন্তু দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে বাগেরহাটে হাড় ভাঙার অপচিকিৎসায় এখন আমার স্বামী পঙ্গু প্রায়। মনিরুজ্জামানের কাছে টাকা চাইছি, তিনি এখন নিখোঁজ। স্বামীর চিকিৎসার জন্য আমাদের কাছে যে টাকা-পয়সা ছিল তাও শেষ। আমাদের যে কি হবে এখন আল্লাহই জানে।
তিনি বলেন, বাগেরহাটের একটি টিনশেডের বাসায় চলেছে হাড় ভাঙার চিকিৎসা। গত দুই মাস ধরে ঢাকা ও বাগেরহাটের বিভিন্ন বাসায় রেখে পায়ের হাড় ভাঙার চিকিৎসা চালাচ্ছে একদল প্রতারক চক্র। ঘুমের ওষুধ, ব্যথার ওষুধ এবং গোমূত্র ও লতাপাতা দিয়ে চলেছে হাড় ভাঙার চিকিৎসা। সারাক্ষণ বাসায় শুয়ে ব্যথায় কাতরাচ্ছেন আমার স্বামী। বার বার আশা দেয়- এই ভালো হয়ে যাবে। আমাদের টাকা-পয়সাগুলো হাতিয়ে নিয়ে সটকে পড়েছেন বাগেরহাটের খানজাহান আলী মাজার এলাকার সুন্দরঘোনা স্কুলের পাশের বদর খন্দকারের জামাই মনিরুজ্জামান।
ভুক্তভোগী মিলন সেখ বলেন, আমি ট্রাক চালাইয়া খাই। আমার কী এতো টাকা-পয়সা আছে। গরিব মানুষ, খেটে খাই। মাস দুই আগে আমি দুর্ঘটনার শিকার হই। পরে মনিরুজ্জামানের সঙ্গে পরিচয় হলে তিনি আমাকে দুই মাসের মধ্যে পা ভালো করে দেবেন বলে তারই নারায়ণগঞ্জের চিটাগাং রোডের একটি ভাড়া বাড়িতে চিকিৎসা দিতে থাকেন। এক মাস পর মনিরুজ্জামান আমাকে বাগেরহাটে নিয়ে এসে শহরের হাড়িখালি এলাকার সিঙ্গাপুর প্রবাসী ইউনুস মল্লিকের বাড়িতে তোলেন। তাকে সহযোগিতা করেছেন এই এলাকার মুকুল, এমাদুল, তুহিনসহ নাম না জানা আরও কয়েকজন।
তিনি বলেন, বর্তমানে আমার পায়ের অবস্থা ভালো না। সারাক্ষণ জ্বালা-যন্ত্রণা করে। এই চক্রটি আমার সব টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়েছে। জোরপূর্বক ৭ হাজার টাকা মূল্যের ফাইল কিনতে হয় তাদের কাছ থেকে। সকল ওষুধ আমারই কিনতে হয়। পুরো চক্রটি এখন আর আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছে না। মনিরুজ্জামানের মোবাইল বন্ধ, তার কোনো খোঁজ নেই। আমি অসহায়, আমি এই প্রতারক চক্রের বিচার চাই।
এ বিষয়ে জানতে মনিরুজ্জামানের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ না করে কেটে দিয়ে ফোন বন্ধ করে দেন।
বাগেরহাট সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. প্রদীপ কুমার বকসী বলেন, মনিরুজ্জামান কোনো চিকিৎসক নয়, হয়তো কবিরাজি ব্যবসা করে। মিলন নামে এক লোকের অসুস্থতার খবর আমাদের কাছে পৌঁছানোর পর থেকে সে পালিয়েছে। বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।
আরএআর