জীবিত স্কুলশিক্ষককে মৃত দেখানোর ঘটনায় তদন্ত কমিটি
লালমনিরহাটের স্কুলশিক্ষক লক্ষ্মীকান্ত রায় করোনাভাইরাসের টিকার (ভ্যাকসিন) নিবন্ধন করতে গিয়ে নিজেকে মৃত দেখার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের পর রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে এনআইডি অনুবিভাগ থেকে পাঠানো নির্দেশনায় এ কমিটি গঠন করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন লালমনিরহাট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মনজুরুল হাসান। এর আগে (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে সদর উপজেলা নির্বাচন ও রেজিস্ট্রেশন কর্মকর্তা আজাদুল হেলালকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
ওই শিক্ষকের বাড়ি সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের কাকেয়াটেপা গ্রামে। তার বাবা মৃত হিরেম্ব চন্দ্র রায়। তিনি লালমনিরহাটের আদিতমারীর বালাপুকুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ের সহকারী শিক্ষক।
জানা গেছে, আদিতমারী উপজেলার একটি স্থানীয় দোকানে করোনার টিকার নিবন্ধন করতে যান শিক্ষক লক্ষ্মীকান্ত রায়। এ সময় একাধিকবার চেষ্টা করলে সার্ভার সমস্যার কারণে সেখানে নিবন্ধন না করে চলে যান সদর উপজেলার কাকেয়াটেপা গ্রামের বাড়িতে।
কয়েকদিন পর আবারও স্থানীয় একটি কম্পিউটারের দোকানে বসেন তিনি। সেখানে চেষ্টা করলে তার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর অকার্যকর দেখায়। ওইদিন বিষয়টি স্থানীয় ব্যক্তিদের জানালে তারা নির্বাচন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগযোগ করতে বলেন।
এরপর ২২ ফেব্রুয়ারি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান তিনি। সেখান থেকে তাকে জানানো হয়, ২০১৪ সালের ৩ জুন তিনি মারা গেছেন। তাই জাতীয় পরিচয়পত্র ‘অকার্যকর’ দেখাচ্ছে। শুধু তাই নয়, ২০১৬ সালে মোগলহাট ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন, ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ২০১৯ সালে লালমনিরহাট সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি।
নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর স্থানীয় মনমোহন রায় নামে এক ব্যক্তি লক্ষ্মীকান্তকে ‘মৃত’ দেখিয়ে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার আবেদন করেন। ওই আবেদনে মনমোহন নিজেকে লক্ষ্মীকান্তের ভাই উল্লেখ করেন। পরে বিষয়টি স্থানীয় এক স্কুলশিক্ষকের মাধ্যমে তথ্য যাচাই করান মনমোহন।
তাছাড়া যাচাইপত্রে মোগলহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের স্বাক্ষর রয়েছে। তৎকালীন সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আফতাব উজ্জামানের অনুমোদনে তালিকা থেকে লক্ষ্মীকান্তের নাম বাদ দেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি নীলফামারী সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন।
ঢাকা পোস্টকে ধন্যবাদ জানিয়ে স্কুলশিক্ষক লক্ষ্মীকান্ত রায় মুঠোফোনে বলেন, সংবাদ প্রকাশের পর পরই প্রশাসনের কর্মকর্তারা খোঁজখবর নিচ্ছেন। আশা করছি দ্রুত এর সমাধান হবে। যারা ষড়যন্ত্র করে এই কাণ্ডহীন ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। না হলে এ ধরনের ঘটনা আরও ঘটাতে পারে তারা।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার বর্তমান নির্বাচন কর্মকর্তা আজাদুল হেলাল বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবার সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদন তৈরি করবেন। পরে সে প্রতিবেদন এনআইডি অনুবিভাগের মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো হবে। এ ছাড়াও লক্ষ্মীকান্ত রায়কেও যত দ্রুত সম্ভব এনআইডির আওতায় আনা হবে। আর যারা ষড়যন্ত্র করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নিয়াজ আহমেদ সিপন/এসপি