সুভাষের কচুরিপানার হস্তশিল্প যাচ্ছে বিদেশে

কচুরিপানা একটি ভাসমান জলজ উদ্ভিদ। খাল-বিল-পুকুর-নদীতে জন্ম নেওয়া কচুরিপানাকে অনেকেই অপ্রয়োজনীয় ও পচনশীল উদ্ভিদ বলে মনে করে থাকেন। সেই কচুরিপানা প্রতি কেজি ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে! হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন। শুকনো কচুরিপানার ডাটার ব্যতিক্রমী ব্যবহার শুরু করেছেন গাইবান্ধা সদর উপজেলার গিদারী ইউনিয়নের মদনের পাড়া গ্রামের যুবক সুভাষ চন্দ্র বর্মন।
সুভাষ চন্দ্র প্রতি মাসে অন্তত ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার কচুরিপানা কিনে থাকেন। নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন কচুরিপানাকেন্দ্রিক চারটি হস্ত ও কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠান। যেখানে গ্রামের আড়াই শতাধিক নারী ও কিশোরী কাজ করেন। যাদের হাতের নিপুণ ছোঁয়ায় তৈরি হয় নজরকাড়া ফুলের টব, ব্যাগ, বালতিসহ নিত্য নতুন জিনিসপত্র। তবে এসব পণ্যের চাহিদা দেশে কম থাকলেও রপ্তানি হয় নেদারল্যান্ডসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশে।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার মদনের পাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা মেলে এমন চিত্রের। গ্রামের নারী ও কিশোরীরা এক সঙ্গে বসে কচুরিপানার ডাটা দিয়ে তৈরি করছেন নানা ধরনের সৌখিন পণ্য। সংসারের সচ্ছলতা ফেরাতে বাড়ির সব কাজ শেষ করে নারীরা নেমে পড়ছেন এই কাজে। সেই সঙ্গে কিশোরীরাও যোগ দিয়েছেন।
তৈরি করছেন কচুরিপানার ব্যাগ, বালতি, ফুলের টবসহ নিত্য নতুন সৌখিন পণ্য। স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় অবসর সময়টা এভাবেই কাটছে শিক্ষার্থীদের। এতে করে পড়ালেখার পাশাপাশি নিজের খরচ ছাড়াও মাস শেষে আট থেকে দশ হাজার টাকা আয় করছেন শিক্ষার্থীরা।
এখানে কাজ করতে আসা জাফরিন বেগম নামে এক গৃহিণী বলেন, সংসারের কাজ শেষ করে শুকনো কচুরিপানার ডাটা দিয়ে ফুলের টব বানাতে আসি। দৈনিক সাত থেকে আটটা টব বানাই। এখানকার আয় থেকে নিজের খরচ মেটানোর পাশাপাশি প্রয়োজনে সংসারেও দিতে পারছি।
ফুলমিরা রানী নামে আরেকজন বলেন, বাড়ির কাছাকাছি হওয়ায় অনেক সুবিধা হয়েছে। বাড়ির কাজ করতে কোনো সমস্যা হয় না। সংসারে বাড়তি আয় হওয়ায় আমরা অনেক খুশি।
কলেজছাত্রী পপি খাতুন বলেন, করোনার কারণে কলেজ বন্ধ থাকায় বাড়িতে বসে অবসর সময় কাটছিল। সেই অবসর সময়টাকে কাজে লাগাতে প্রথমে কাজটা শিখে এখন দৈনিক দেড়শ থেকে দুইশ টাকা আয় করতে পারছি।
কচুরিপানা দিয়ে এমন সৌখিন পণ্য তৈরির উদ্যোক্তা সুভাস চন্দ্র বর্মন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০১০ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ছয় বছর ঢাকার একটি হস্ত ও কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠানে কাজ করি। সেখান থেকে কাজটি ভালভাবে শিখে নেয়। তারপর স্ত্রীকে নিয়ে ২০১৬ সালে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কাজটি শুরু করি।
প্রথমে ছোট পরিসরে শুরু করি। এখন জেলার চারটি পয়েন্টে আড়াই শতাধিক নারী ও কিশোরী এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। তাদের প্রতিদিন মজুরি দিতে হয় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। তবে সরকারি ঋণ সহায়তা পেলে কচুরিপানার এই হস্ত ও কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠানটি আরও বড় পরিসরে গড়ে তোলা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন সুভাস চন্দ্র বর্মন।
সুভাস চন্দ্রের হস্ত ও কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠানের ঋণের ব্যাপারে কথা হয় সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) নাহিদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, কচুরিপানা নিয়ে ব্যতিক্রমী কাজ করছেন উদ্যোক্তা সুভাস চন্দ্র। বিষয়টি আমি জেনেছি। আমি নিজে সরেজমিনে পরিদর্শন করে দ্রুত সুবাস চন্দ্রকে ঋণ সহায়তাসহ সব ধরনের সহযোগিতা করব।
এসপি