জীবিত থেকেও রনজিত আজ মৃত

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় শ্রী রনজিত কুমার দাস (৭৪) নামের এক জীবিত মানুষকে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের ডেটাবেইসে মৃত দেখানো হয়েছে। এর ফলে ১০ বছর ধরে কোনো নাগরিক সুবিধা ভোগ করতে পারছেন না তিনি।
ব্যাংক হিসাব খোলা, সিম কার্ড কেনাসহ যাবতীয় সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন তিনি। তার নামে থাকা ভাতার কার্ডটিও বাতিল হয়ে গেছে। শুধু তা-ই নয়, দীর্ঘদিন ধরে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ এবং জাতীয় নির্বাচনেও ভোট দিতে পারছেন না রনজিত কুমার।
শ্রী রনজিত কুমার দাস কুমারখালী পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাজীপাড়া রেলগেট-সংলগ্ন এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা। তার বাবার নাম মৃত কুঞ্জু লাল দাস। তিনি পেশায় একজন শ্রমিক। তার জন্মতারিখ ৮ ডিসেম্বর ১৯৪৭।
শ্রী রনজিত কুমার দাসের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, তার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ৫০২৭১০১৪.....। এই পরিচয়পত্র দিয়ে গত কয়েকটি নির্বাচনে ভোট দিতে গেলে বলা হয় তালিকায় তার নাম নেই। ব্যাংকে হিসাব খুলতে গেলেও বলে তার কার্ড সঠিক নয়। মোবাইলের সিম কিনতে গেলেও একই দশা। পরে উপজেলা নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করা হলে তারা জানায়, ডেটাবেইসে তার স্ট্যাটাসে মৃত লেখা রয়েছে।
শ্রী রনজিত কুমার দাস অভিযোগ করে বলেন, আমি জীবিত থাকলেও ভোটার আইডি কার্ডে আমি মৃত। আমার এই পরিচয় পত্র দিয়ে কোনো কাজ করতে পারি না। এই পরিচয়পত্র দিয়ে ভোট দিতে গেলে ভোট দেওয়া যায় না। গত কয়েকটি নির্বাচনে ভোট দিতে গেলে বলা হয়, তালিকায় আমার নাম নেই। আমাকে নাকি মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। এই আইডি কার্ড দিয়ে আমি কোনো কিছুই করতে পারি না।
তিনি আরও বলেন, কাজের জন্য যেখানেই আইডি কার্ড ব্যবহার করি, সেখান থেকেই বলে কাজ হবে না। আপনার কার্ডে ভুল আছে। ব্যাংকে, অফিস-আদালতে এমনকি বিকাশ খোলাও হয় না, সিমও কেনা যায় না। এসব সমস্যা থেকে বাঁচার জন্য উপজেলা নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করেছিলাম। তারা বলেছে, আপনার আইডি কার্ডে ভুল হয়েছে। আইডি কার্ডের লেখা আমি মৃত।
আক্ষেপ করে রনজিত বলেন, এ বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেও সমাধান হচ্ছে না। কুমারখালী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেছি। সব কাগজপত্র দিয়েছি। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। আমি একই সমস্যার মধ্যে পড়ে আছি। আমি জীবিত মানুষ। আমার আইডি কার্ডে কেন মৃত উল্লেখ থাকবে। আমি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান চাই। কারণ বর্তমান যুগে আইডি কার্ড ছাড়া কোনো কাজই হয় না। যেখানেই যায়, সেখানেই আইডি কার্ড দরকার। এই ভুলের কারণে আমার ভাতার কার্ডটিও বাতিল হয়ে গেছে।
কুমারখালী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শিরিনা আক্তার বানু ঢাকা পোস্টকে বলেন, রনজিত কুমার দাস কুমারখালী পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। জাতীয় নির্বাচন কমিশনের ডেটাবেইসে তাকে মৃত দেখানো হচ্ছে। সার্ভারে হয়তো ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছিল। কীভাবে এটি হয়েছে, সে ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারছি না। রনজিত আমাকে কোনো লিখিত অভিযোগ দেননি। লিখিত অভিযোগ দিলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
রাজু আহমেদ/এনএ