পা হারানো ফারুকের কাটছে দুঃসহ জীবন

‘ছেলেকে অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া শিখিয়েছি। যেন সমাজে অন্যদের মতো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। আমার ছেলে কোম্পানিতে চাকরিও পেয়েছিল। বেশ ভালোভাবেই কাটছিল পরিবারটি। একটি ট্রাক দুর্ঘটনায় আমার ছেলের একটি পা কাটা গেলেও প্রাণে বেঁচে যায়। এখন আমার মাথার ওপরে আকাশ ভেঙে পড়েছে।’ বলছিলেন সড়ক দুর্ঘটনায় পা হারানো ফারুকের বাবা মকবুল।
এখন পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতায় এক পায়ে ভর করে কোনো করম দিন পার করছেন ফারুক। একটি প্লাস্টিকের (কৃত্রিম) পা লাগাতে চেয়েছেন, টাকার জন্য তাও কিনতে পারছেন না।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পোড়াহাটি ইউনিয়নের বাসুদেবপুর গ্রামের মকবুল মন্ডলের ছেলে ফারুক হোসেন (৩০)। গত বছরের ২৩ আগস্ট শহরের সিটিমোড়ে ফলবোঝাই ট্রাকের ধাক্কায় সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। বাবা-মা সহায়-সম্বল বিক্রি করে চিকিৎসা করিয়ে কোনোমতে প্রাণ বাঁচাতে পারলেও এর মধ্যে একটি পায়ের অবস্থা খুব খারাপ হওয়ায় ডান পাটি কেটে ফেলতে হয়।
স্বপ্ন ছিল চাকরি করে দুটি সন্তানকে মানুষ করবেন। অবিবাহিত এক বোনকে বিয়ে দেবেন। মা-বাবাকে ভালোমতো দেখাশোনা করবেন। চাকরিও পেয়েছিলেন। ভালো বেতনও পাচ্ছিলেন। কিন্তু এক সড়ক দুর্ঘটনা স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। এখন সংসার চালানোই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। একজনের সহযোগিতা ছাড়া উঠতেও পারেন না। সড়ক দুর্ঘটনায় এক পা কেটে ফেলতে হয়েছে। একটি প্লাস্টিকের পা লাগিয়ে চলাফেরা করবেন, এখন সেই সামর্থ্য নেই তার।
আমার ছেলে মাস্টার্স শেষ করে একটি কোম্পানিতে চাকরি করছিল। তার পোস্টিং ছিল লক্ষ্মীপুরে। গত বছর বাড়িতে এলে দুর্ঘটনা ঘটে। এখন সংসার চালাতে পারছি না। সাত সদস্যের সংসারে অভাব-অনটন লেগেই রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে চিকিৎসা খরচ। এ অবস্থায় সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করি
মকবুল মন্ডল, ফারুকের বাবা
ঢাকা পোস্টকে জানাচ্ছিলেন ফারুক হোসেন, আমার জীবন তো শেষ। আমার দুটি সন্তান রয়েছে। তাদের কোনো শখ পূরণ করতে পারি না। পারি না কোনো কাজ করতে। পারি না ভিক্ষা করতে। এভাবেই জীবন পার করতে হবে। সন্তান দুটোকে মানুষ করতে পারলে আমি মরেও শান্তি পেতাম। কিন্তু তাদের লেখাপড়া শেখাব কী করে? কোনো চাকরি হলে তাদের মানুষ করতে পারতাম। একটি কৃত্রিম পা কিনতে চাচ্ছি। এত টাকাও নেই। সরকার বা মানুষের সহযোগিতা পেলে একটি পা কিনতে পারতাম।
ফারুকের স্ত্রী মোছা. হামিদা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার স্বামী অ্যাকাউন্টিংয়ে মাস্টার্স পাস করে মেঘনা গ্রুপে মার্কেটিং অফিসার হিসেবে ইউনিক সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিতে চাকরি করতেন। দুইটা বাচ্চা নিয়ে আমরা অনেক ভালোই ছিলাম। এর মাঝখান দিয়ে ছয় মাস ধরে সড়ক দুর্ঘটনায় তার একটা পা চলে যায়, আর অন্য পাটিও ভাঙা। বর্তমানে সরকারের কাছে একটাই দাবি, তার শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী তার যেন একটা সরকারি চাকরি দেয়।
তিনি আরও বলেন, তার একটা কৃত্রিম পায়ের খুবই প্রয়োজন। সরকার যেন তার একটা পায়ের ব্যবস্থা করে দেয়। আমার সন্তান দুটি যেন মানুষ করতে পারি। সবাইকে নিয়ে সমাজে যেন ভালোভাবে বসবাস করতে পারি, সবার কাছে এই আবেদন করি।
এনএ