মহাসড়কের পাশে ময়লার ভাগাড়, দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী

মাদারীপুর পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থপনার জন্য নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নেই। ফলে সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নের বড়মেহের এলাকার ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পাশে যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে আবর্জনা। আবর্জনার দুর্গন্ধে ওই এলাকার অন্তত ৬ শতাধিক পরিবারের জীবন অতিষ্ঠ।
মাদারীপুর পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ড থেকে প্রায় ৩৫ টন বর্জ্য বের হয়। বিপুল পরিমাণ এই বর্জ্য ফেলার জন্য পৌরসভার নিজস্ব কোনো জমি না থাকায় ভাগাড় বা ডাম্পিং স্টেশন করা সম্ভব হয়নি। এদিকে পাঁচ বছর আগে মাদারীপুর শহরের প্রবেশমুখ শেখ হাসিনা মহাসড়কের খাগদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ফেলা হতো পৌরসভার সব বর্জ্য। দুর্গন্ধ চারপাশে ছড়িয়ে পড়ায় স্থানীয় লোকজনের চাপের মুখে তা অন্য জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়।
পরে পৌর এলাকার পার্শ্ববর্তী খোয়াজপুর ইউনিয়নের পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় একটি খোলা জায়গা দুই বছরের জন্য দুই লাখ টাকায় ভাড়া নেয় পৌরসভা। কিন্তু দুই মাস ময়লা-আবর্জনা ফেলার পর ক্ষুব্ধ হয় স্থানীয়রা। তারা পৌর মেয়রকে বাধা দিলে চাপের মুখে ওই স্থানেও বর্জ্য ফেলা বন্ধ হয়ে যায়। সবশেষ দুই বছর ধরে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মস্তফাপুর ইউনিয়নের বড়মোহের এলাকায় পৌর মেয়র খালিদ হোসেনের নিজস্ব তিন একর জমির কিছু অংশে ময়লা ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বর্তমানে মহাসড়কের দুইশ মিটার অংশ ঘেঁষে পৌরসভার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে।
স্থানীয়রা বলছেন, ময়লার স্তূপ পেট্রল দিয়ে পোড়ালে পুরো সড়ক ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। ফলে মোটরসাইকেল আরোহীরা কিছু দেখতে না পেয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হন।

সরেজমিনে বড়মেহের এলাকায় দেখা যায়, ২৪ ফুট চওড়া ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের বেশ কিছু জায়গা ময়লার ভাগাড়ের দখলে। সাধারণ মানুষকে নাকে-মুখে হাত চেপে, নিঃশ্বাস বন্ধ করে চলাচল করতে হচ্ছে। দুর্গন্ধ বাতাসের সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশের বসতবাড়িতে। সবচেয়ে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন মস্তফাপুর ইউনিয়নের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তত চার শতাধিক পরিবার। এছাড়া ময়লার স্তূপের দক্ষিণ পাশেই রয়েছে একটি মাদরাসা ও এতিমখানা। এখানকার শিক্ষার্থীদের দুর্গন্ধ সহ্য করেই পড়ালেখা করতে হচ্ছে। এ স্তূপের দক্ষিণ পাশে দুটি মসজিদ, পশ্চিম পাড়ে বড় পুকুর পাড় মসজিদ ও উত্তর পাড়ে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড নামে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
ময়লার স্তূপ থেকে ৩০ মিটার দূরে বসাবস করে কয়েকটি পরিবার। এসব পরিবারের মধ্যে দেলোয়ার ব্যাপারী-নূর নাহার বেগম দম্পতিও রয়েছেন। দুই বছরের বেশি সময় ধরে এই দুর্গন্ধ সহ্য করে আসছেন তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা মানসুর আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমার বাড়িতে তিনজন ভাড়াটিয়া ছিলেন। এখন একজনও নেই। দুর্গন্ধের কারণে কয়েক দিন থেকেই তারা চলে গেছে। নিজের বাড়ি হওয়ায় অসহ্য যন্ত্রণা নিয়েও আমরা থাকি।পৌর মেয়রের কাছে আমাদের দাবি, ময়লার ভাগাড়টি এখান থেকে অন্য স্থানে সরিয়ে নিন।
জাহিদুল হাকিম নামে আরেকজন বলেন, ‘লোকালয়ের মধ্যে ময়লা ফেলা বন্ধ করতে আমরা এক বছর আগে ডিসি স্যারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।
মস্তফাপুর ইউনিয়নের সদস্য মো. হাবিব হাওলাদার বলেন, মাঝে-মধ্যেই ময়লার ভাগাড়ে পেট্রল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। তখন ব্যস্ততম রাস্তাটি ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। আর এ সময় দুর্ঘটনা বেশি ঘটে। এ পর্যন্ত এখানে চারজন লোক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। আর ছোট-বড় দুর্ঘটনা প্রতিদিনই কম-বেশি ঘটেই।
পৌরসভার চিকিৎসা কর্মকর্তা হরষিত বিশ্বাস বলেন, ‘খোলা স্থানে বর্জ্য ফেলার ফলে ওই এলাকার মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য ঝুঁকির প্রভাব পড়ছে। পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। ওই এলাকায় মশা-মাছির উপদ্রব বাড়ছে। এসবের কারণে ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে শিশু ও বৃদ্ধরা শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। আমরা চাই ওইখান থেকে নির্দিষ্ট একটি স্থানে ময়লা ফেলা হোক। এ থেকে কলমমতি শিশুরা রোগ-জীবাণুর হাত থেকে রক্ষা পাবে।
মাদারীপুর পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার আবু আহমদ ফিরোজ ইলিয়াস বলেন, ‘পৌর বর্জ্য ফেলার জন্য আমাদের নিজস্ব কোনো জমি নেই। তাহলে পৌরসভার ময়লা আমরা কোথায় ফেলব? এ কারণে পৌর মেয়র তার নিজের কেনা জমিতে বাধ্য হয়ে ময়লা ফেলতে বলেছেন। যদিও সেটা ইউনিয়নের মধ্যে। সেখানকার মানুষরা দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হচ্ছেন। তারা প্রায়ই আমাদের ময়লার গাড়িতে বাধা দেয়।’
রাকিব হাসান/এসপি