সুন্দরবনে ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে বাঘ গণনা শুরু

সুন্দরবনে ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে বাঘ জরিপের কাজ শুরু হয়েছে। রোববার (১ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৩টায় সুন্দরবনের কালাবগি ফরেস্ট অফিস এলাকায় ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে এই জরিপ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার।
তিনি বলেন, অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে অবশেষে বাঘ জরিপের কাজ শুরু হয়েছে। আমরা ৬৬৫টি গ্রিডে ক্যামেরা স্থাপনের কাজ করবো। প্রতিটি গ্রিডের দুই পাশে দুটি ক্যামেরা থাকবে। এমনভাবে ক্যামেরা স্থাপনের কাজ করা হচ্ছে, বাঘ বা যেকোনো পশু গেলে সেসময় ছবি উঠবে। শুধু ছবিই না, স্থান, কাল, পাত্র ও টেম্পারেচার উঠবে। কোন জায়গায় ছবি উঠেছে বিস্তারিত ক্যামেরায় রেকর্ড থাকবে। একটি প্রাণী যখন সেখান থেকে পার হবে, সবকিছু একইসঙ্গে উঠে যাবে, এমনকি ১০ সেকেন্ডের ভিডিও ধারণ হবে। ৪০ দিন একই জায়গায় এই ক্যামেরা থাকবে। ১৫ দিন পর পর ক্যামেরা চেক করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ১০টির মতো দেশে বাঘ আছে। এই বাঘের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। আর সুন্দরবন তো স্পেশাল, এখানে রয়েল বেঙ্গল টাইগার রয়েছে। আমরা বাঘকে রক্ষা করবো। তবে বাঘ রক্ষা প্রকল্প যেমন প্রয়োজন, তেমনি মানুষকে সচেতন হতে হবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. এম এ আজিজ বলেন, দেরিতে হলেও জরিপ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন আসতে পারে জরিপ কেন প্রয়োজন? সুন্দরবনে যে সংরক্ষণ কার্যক্রম চলমান আছে, এটি ভালো পথে যাচ্ছে না খারাপ পথে সেটি বোঝার জন্য বাঘ গণনা প্রয়োজন। বাঘ যদি কমে তাহলে মনে করতে হবে আমাদের কোথাও কোনো ঘাটতি রয়েছে। আর ফলাফলে যদি দেখি বাঘের সংখ্যা বাড়ছে, তাহলে বুঝতে হবে বন বিভাগের কার্যক্রম সঠিক আছে।
তিনি আরও বলেন, প্রথম ধাপে বাঘ জরিপের কাজ আগামী মার্চ পর্যন্ত চলবে। দ্বিতীয় ধাপে নভেম্বর-ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত চলবে। পরে সেগুলো অ্যানালাইসিস করে বাঘের সংখ্যা নিরুপণ করা হবে।
সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক ও সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, আজ ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘ জরিপের কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়েছে। মূলত খাল সার্ভের মাধ্যমে বাঘের পায়ের চিহ্নের উপাত্ত সংগ্রহ করা, ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘের ছবি তোলা এবং বাঘ যে প্রাণী শিকার করে যেমন : হরিণ, শূকর কি পরিমান আছে সেটা দেখা। একই সঙ্গে সুন্দরবনের বাঘের কোনো রোগবালাই আছে কি না সেটা নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম করা। এছাড়া বাঘ-মানুষের দ্বন্দ্ব। এই দ্বন্দ্ব নিরসন করতে পারলে আমরা বাঘ সংরক্ষণ করতে পারব। সুন্দরবনের বাঘ-মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনে ভিলেজ টাইগার রেন্সপন্স টিম, কমিউনিটি পেট্রোল গ্রুপ এবং ভিলেজ কনজারভেশন ফোরামের সবাইকে নিয়ে আমরা সচেতনতামূলক কাজ করবো। বাঘ যখন গ্রামে চলে আসবে, সেই সময়ে বাঘকে কীভাবে নিরাপদে সুন্দরবনে ফিরিয়ে নেওয়া যায় সেই ব্যাপারে কাজ করবো। আর সুন্দরবনের ধানসাগরসহ বিভিন্ন এলাকায় শুষ্ক মৌসুমে আগুন লাগে। ওই এলাকা কিন্তু বাঘের আবাসস্থল। ওই আগুন নির্বাপণের জন্য সেখানে কিছু টাওয়ার স্থাপন করা হবে।
তিনি আরও বলেন, সুন্দরবনের মোট ৬৬৫টি স্পটে ক্যামেরা বসানো হবে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা রেঞ্জে ২০০টি, খুলনা রেঞ্জে ১৪০টি, শরণখোলা রেঞ্জে ১৮০টি, চাঁদপাই রেঞ্জে ১৪৫টি। প্রতিটি গ্রিডে একজোড়া ক্যামেরা বসানো হবে। জরিপ কার্যক্রম শেষে ২০২৪ সালের জুন-জুলাইয়ে ফলাফল ঘোষণা করা হবে।
বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বাঘের হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ ও সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণের জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় গত ২৩ মার্চ ‘সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প’ শীর্ষক প্রকল্পের প্রশাসনিক অনুমোদন দেয়। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ৩৫ কোটি ৯৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এর মধ্যে শুধুমাত্র বাঘ শুমারি খাতে ব্যয় ধরা হয় ৩ কোটি ২১ লাখ টাকা। প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত।
মোহাম্মদ মিলন/এমজেইউ