যশোরের এক ডিভাইডার অর্ধশতাধিক দুর্ঘটনার কারণ

Dhaka Post Desk

জেলা প্রতিনিধি, যশোর

০৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮:৫৬ পিএম


যশোরের এক ডিভাইডার অর্ধশতাধিক দুর্ঘটনার কারণ

যশোর-বেনাপোল মহাসড়ককে জাতীয় মহাসড়ক বলা হয়। আর এই মহাসড়ক দিয়ে দিনে রাতে প্রায় কয়েক হাজার পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহীসহ ভারি যানবাহন চলাচল করে। আর এই সড়কটির একটি ডিভাইডার এখন অনেকের কাছে মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে।

২০১৭-১৮ সালে এই মহাসড়ক পুনঃনির্মাণের সময় দীর্ঘ ৩৪ কিলোমিটার রাস্তার জায়গার ভিত্তিতে প্রস্থতা বাড়ানো হয় ২৪ ফুট থেকে ৩৪ ফুট পর্যন্ত। এবং রাস্তার দুই পাশে ৫ ফুট করে সোল্ডার নির্মাণ করা হয়। আর এই মাপের ওপরেই ঝিকরগাছা উপজেলার লাউজানি রেলক্রসিংয়ে প্রায় ১ ফুট প্রসস্থ ও ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি ডিভাইডার স্থাপন করা হয়।
dhakapost.com

এই ডিভাইডারটি বর্তমানে এ সড়কে চলাচলকারী যানবাহন ও যাত্রীদের কাছে এক আতঙ্কের নাম। গত দুই বছরে এ ডিভাইডারকে কেন্দ্র করে প্রায় অর্ধশতাধিক দুর্ঘটনা ঘটলেও ডিভাইডার অপসারণ বা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কোনোরকম উদ্যোগ নিচ্ছেন না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

সম্প্রতি গত বছরের ডিসেম্বরে ৭টি এবং চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে এ ডিভাইডারকে কেন্দ্র করে দুটিসহ মোট ৯টি ট্রাক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে।
dhakapost

স্থানীয়রা জানান, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভারি পণ্যবাহী যানবাহনে করে বেনাপোল বন্দর দিয়ে পণ্য আনা-নেওয়া করা হয়। বিশেষ করে রাতের বেলায় গাড়ির হেডলাইটে এ ডিভাইডারকে স্পষ্টভাবে বোঝাও যায় না। ফলে প্রতিনিয়ত এই ডিভাইডারকে ধাক্কা দিয়ে অনেক যানবহন উল্টে ছোট বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব দুর্ঘটনায় অনেক হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। এ সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের চালক ও স্থানীয়দের অভিযোগ গত দুই বছরে এ ডিভাইডারকে কেন্দ্র করে প্রায় অর্ধশতাধিক যানবাহন দুর্ঘটনার খবর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে গেলেও তারা প্রতিরোধের উদ্যোগ নেয়নি। 

আমড়াখালী এলাকার ট্রাকচালক মান্নান শেখ বলেন, এ ডিভাইডারটি সম্পূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে বসানো হয়েছে। ডিভাইডারকে সাইড দিতে গেলে গাড়ির এক পাশের চাকা রাস্তার সোল্ডারে নেমে যায়। আমরা এ সড়কে প্রতিনিয়ত চলাচল করি। তবুও আমাদের অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। তাহলে নতুন চালকরা এ সড়কে গাড়ি চালাতে এলে তাদের মরণ হাতে করে নিয়ে এ সড়কে আসা লাগবে।

লাউজানি এলাকার বাসিন্দা শাহজাহান আলী বলেন, প্রায়ই রাতে গুড়ুম গাড়াম আওয়াজ হয়, আর সকালে ঘুম থেকে উঠে রাস্তায় এসে দেখি ট্রাক না হয় বাস এই ডিভাইডার মেরে দিয়ে উল্টে রয়েছে। বেশিরভাগ ট্রাক দুর্ঘটনা বেশি ঘটে। এর আগে কয়েকটা বাসও উল্টে গেছে এখানে।
dhakapost

ট্রাক ড্রাইভার ইমতিয়াজ বলেন, আমি গত ৩-৪ বছর ধরে এই সড়কে পণ্যবাহী ট্রাক চালাই। দিনে এবং রাতে এই রাস্তা দিয়েই চলাচল করি। এর আগে রাস্তাটি অনেক খারাপ ছিল। পরে পুনঃনির্মাণের পর এখন এই ডিভাইডার কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডিভাইডারে মেরে দিয়ে একটা ট্রাকের পেছনের অংশ রেললাইনে পড়ে থাকলে ওই মুহূর্তের ট্রেন আসলে ওই ট্রেনেরও দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে। যত দ্রুত সম্ভব এ ডিভাইডার অপসারণ করা উচিত।

ঝিকরগাছার বিশিষ্ট সমাজসেবক আশরাফুজ্জামান বাবু বলেন, গত দুই বছর ধরে এ ডিভাইডারকে কেন্দ্র করে একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে আসছে। এ পর্যন্ত আমাদের চোখে দেখা মতে, ছোট বড়সহ প্রায় ৫০টির অধিক যানবাহন দুর্ঘটনা ঘটেছে এখানে। গেল দু' মাসেও ৯টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ ডিভাইডার নিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসী, যানবাহন চালক এবং যাত্রীদের ক্ষোভ থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কোনো সুব্যবস্থা করছেন না।

এদিকে, জানমালের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ঝিকরগাছা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন ভক্ত নিজ উদ্যোগে সোমবার (৯ জানুয়ারি) এ ডিভাইডারে রিফ্লেক্টিং স্টিকার লাগিয়ে দিয়েছেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন নাভারন সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নিশাত আল নাহিয়ান।

তিনি বলেন, আমরা ডিভাইডারে স্টিকার লাগিয়ে চালকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছি। এ ব্যাপারে আরও পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন বলে তিনি জানান। 

এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিম জোনের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী কাজি ওয়ালিউল হক বলেন, রাতের বেলা কুয়াশার কারণে দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে। আমরা রেলক্রসিংয়ের আগে রাস্তায় যে গতিরোধক আছে তার ১৫/২০ ফুট সামনে আরও একটি করে গতিরোধক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাতে করে দুর্ঘটনার হার কমবে বলে আশা করি। ডিভাইডার তুলে দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই বলে তিনি জানান। 

এ্যান্টনি দাস অপু/এমএএস

Link copied