চার নবজাতক নিয়ে বিপাকে হতদরিদ্র বাবা-মা

মাদারীপুরে এক সঙ্গে ৪ নবজাতকের জন্ম দিয়েছেন পিংকি আক্তার নামের এক গৃহবধূ। জন্মের পর শিশুদের শারিরিক সমস্যা দেখা দেওয়ায় ৪ জনকে আইসিইউতে চিকিৎসকের নিবিড় পরিচর্যায় রাখা হয়েছে।
এখন সন্তানদের প্রতিদিনের দুধ, ওষুধ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন দিনমজুর বাবা। চরম হতাশায় দিন কাটছে এই নবজাতকদের বাবা-মায়ের। সন্তানদের চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ সবার সহযোগিতা চান আনোয়ার শিকদার ও পিংকি আক্তার দম্পতি। ৪ নবজাতকের মধ্যে ৩ মেয়ে ও ১ ছেলে।
জানা যায়, ৭ বছর আগে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার সন্নাসীরচর ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের মো: ইনসান শরীফের মেয়ে পিংকি আক্তারের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার চরমানাইর ইউনিয়নের বেপারীকান্দি গ্রামের মো: মানিক শিকদারের ছেলে কৃষক আনোয়ার শিকদারের বিয়ে হয়। গত ৭ জানুয়ারি ঢাকা মগবাজার আদ-দ্বীন জেনারেল হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে এক সঙ্গে চার কন্যা সন্তানের জন্ম হয় এই দম্পতির।
সংসারে আগে থেকেই তাদের লিজা খাতুন (৫) নামের কন্যা সন্তান রয়েছে। এমনিতেই অভাব যেন নিত্যসঙ্গী তাদের। তারপর আরও ৩ মেয়ে ও ১ ছেলে সন্তানসহ সাত সদস্যের সংসার চালাতে তাদের একেবারে দিশেহারা অবস্থা।

কৃষক আনোয়ারের ছোট বোন লিপি বেগম বলেন, তাদের বিয়ের প্রায় ২ বছর পর তাদের একটি কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। এরপর তাদের আর কোনো সন্তান না হওয়ায় চিকিৎসকের কাছে যান। তারা দীর্ঘদিন চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করেন। চিকিৎসা করাতে প্রায় আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকা খরচও হয় তাদের। এখন আবার এক সঙ্গে চারটি বাচ্চা হয়েছে। তাদের পক্ষে খরচ বহন করা অনেক কষ্ট। আপনারা সবাই এগিয়ে আসলে তারা বাচ্চা চারটিকে বাঁচাতে পারবে।
নবজাতকদের বাবা আনোয়ার শিকদার জানান, সিজারিয়ান অপারেশন করতে ওষুধসহ খরচ পড়েছে প্রায় ৯০ হাজার টাকা। তবে জন্ম হওয়ার পরপরই শিশুদের শারিরিক সমস্যা দেখা দেওয়ায় চিকিৎসক তাদের আইসিইউতে নিয়ে রাখেন। তবে প্রতিদিন হাসপাতালের চিকিৎসা খরচসহ ৭০ হাজার টাকার জোগান দিতে হচ্ছে। আত্বীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকে ঋণ করে সন্তানদের চিকিৎসা খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। তাই তার সন্তানদের বাঁচাতে সকলের সহযোগিতা চান। বর্তমানে চার সন্তানের দুধ, স্ত্রীসহ বাচ্চাদের ওষুধ ও অন্যান্য সামগ্রী কিনতে প্রতিদিন গড়ে ৫০০০-৭০০০ টাকা খরচ হচ্ছে। সারাদিন দিনমজুরি করে ৫০০ টাকা পান। এ সামান্য আয়ে তিনি কোনোভাবেই প্রতিদিনের খরচ মেটাতে পারছেন না। আবার সবদিন কাজও জোটে না তার। ফলে প্রতিদিন ঋণের অঙ্ক বেড়ে যাচ্ছে। এখন আর কোনো পথ নেই।
তিনি হতাশা নিয়ে বলেন, এখন কী করবো বুঝতে পারছি না। হয়ত টাকার অভাবে নবাগত সন্তানদের মৃত্যু ঝুঁকি নিয়েই বাড়ি ফিরতে হবে। তাই আমার সন্তানদের বিনা পয়সায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি।
চরমানাইর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। আমাদের ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাকে সাহায্য সহযোগিতা করা হবে। দেশের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার অনুরোধ করছি।
সদরপুর নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান মাহমুদ রাসেল জানান, দরিদ্র বাবা-মায়ের ঘরে জন্ম নেওয়া সন্তান চারটি যেন সুন্দরভাবে বেড়ে উঠতে পারে সেজন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে। একই সঙ্গে সমাজের সচ্ছল মানুষদেরও তাদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি।
রাকিব হাসান/আরকে