ভিক্ষা করে জমানো স্বপ্ন নিয়ে গেল চোর

আড়াই বছর বয়সে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দু’চোখের আলো হারিয়েছেন নয়ন মিয়া। দৃষ্টিহীন হওয়ায় পরিবারের বোঝা হয়ে যান। জীবিকার তাগিদে ভিক্ষা শুরু করেন। একসময় ভিক্ষাবৃত্তিতে খারাপ লাগা শুরু হয়। চিন্তা করেন কিছু টাকা জমিয়ে ব্যবসা করবেন। কিছুদিন পর ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু তার ব্যবসার মালামাল নিয়ে গেল চোরেরা। এ অবস্থায় আবার ভিক্ষা করছেন গাজীপুরের নয়ন মিয়া (৩০)।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কয়েক বছর আগে অল্প কিছু টাকা পুঁজি নিয়ে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার, জনাকীর্ণ স্থানে বৈদ্যুতিক এলইডি বাল্ব, কলম, হেডফোন, দাঁতের ব্রাশসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রি শুরু করেন নয়ন। হ্যান্ডমাইকে মানুষকে ডেকে এসব জিনিস বিক্রি করতেন তিনি। ব্যবসার আয়ে ভালোভাবে চলছিল তার সংসার।
এরই মধ্যে তার হ্যান্ডমাইক চুরি হয়। কিছুদিন পর তার ব্যবসার কিছু মালামাল চোরেরা নিয়ে যায়। কয়েকদিন পর আরও কিছু মালামাল চুরি হয়ে যায়। চার দফায় এভাবে তার সব মালামাল চুরি করে নিয়ে যায় চোরেরা। এ অবস্থায় নিঃস্ব হয়ে পথে বসেন নয়ন।
দৃষ্টিহীন নয়ন মিয়া বলেন, আমার জন্ম ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার বানারি গ্রামে। বাবা আব্দুল জলিল ছিলেন দিনমজুর। মা অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করতেন। বাবা মারা যাওয়ার পর ভিটেমাটি হারিয়ে শ্রীপুরে চলে আসি। আড়াই বছর বয়সে টাইফয়েড জ্বর হয়েছিল। দিনমজুর বাবার পক্ষে চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দুই চোখের দৃষ্টি হারাই।
তিনি বলেন, শ্রীপুরে এসে জীবিকার তাগিদে ভিক্ষা শুরু করেছিলাম। আট বছর আগে বিয়ে করেছি। দুই ছেলেসন্তান রয়েছে। একজনের বয়স ছয় বছর অপরজনের এক বছর। শ্রীপুর পৌর এলাকার পিয়ার আলী কলেজের পাশে শাহিনের বাড়িতে থাকি। বিয়ের পর ভিক্ষার টাকায় সংসার চালাতে খুব কষ্ট হতো। সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে ভিক্ষা করতে লজ্জা লাগছিল। তাই আড়াই বছর আগে ভিক্ষা ছেড়ে ব্যবসা শুরু করেছিলাম। পাঁচ হাজার টাকা ছিল ব্যবসার পুঁজি।
হঠাৎ ব্যবসার ওপর নজর পড়ে পকেটমার ও ছিঁচকে চোরের। প্রথমে হ্যান্ডমাইক এবং পর পর চারবার ব্যবসার মালামাল চুরি করে নিয়ে যায় তারা। চোরের কারণে পুঁজি হারিয়ে আবার ভিক্ষা শুরু করেছি।
নয়ন মিয়া
তিনি বলেন, স্ত্রী-সন্তানকে ভিক্ষা করে খাওয়াতে চাচ্ছিলাম না। তাই ভিক্ষা ছেড়ে অল্প পুঁজিতে ব্যবসা করে সংসার চালাচ্ছিলাম। কিন্তু পারলাম না। এই অন্ধকেও ছাড়েনি চোরেরা।
শ্রীপুর উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সমাজকর্মী সাঈদ চৌধুরী বলেন, নয়ন ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন। কিন্তু আমাদের সমাজব্যবস্থা নয়নকে ভালো থাকতে দেয়নি। এই ভিক্ষুককেও ছাড়েনি চোরেরা। আমাদের উচিত নয়নের পাশে দাঁড়ানো। তাকে ব্যবসার সুযোগ করে দিতে পারলে অন্যরাও ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে ভালো কিছু করার স্বপ্ন দেখবে।
এএম