দিনমজুরের আবদারে সাইকেল চালালেন মেয়র

রংপুর সিটি করপোরেশনের (রসিক) মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার মুখে সবসময় হাসি লেগেই থাকে। গালভরা পানে জুড়ি নেই তার। সব শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে তার অন্যরকম সম্পর্ক। বেশির ভাগ মানুষ তাকে সাদাসিধে মেয়র বলে ডাকেন।
আবার কারও কাছে তিনি মাটি ও মানুষের নেতা। সম্প্রতি এই মেয়রের বাইসাইকেল চালানোর একটি ছবি ও ভিডিও ফুটেজ ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে নতুন একটি বাইসাইকেল চালাতে দেখা যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) দুপুর দেড়টার দিকে রংপুর সিটি করপোরেশন ভবন চত্বরে হারুনুর রশিদ হারুন নামে এক দিনমজুরকে ব্যক্তিগত তহবিল থেকে কেনা বাইসাইকেল উপহার দেন মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। এ সময় ওই দিনমজুর নতুন বাইসাইকেলটি চালানোর অনুরোধ জানালে মেয়র তাকে খুশি করতে সেখানে মিনিটখানেক বাইসাইকেলটি চালান। এরপর সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে উপহারটি তুলে দেন।
দিনমজুর হারুন জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের একনিষ্ঠ ভক্ত ও মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার কর্মী। প্রায় ৩৫ বছর ধরে তিনি বাইসাইকেল চালিয়ে বিভিন্ন নির্বাচনের সময় লাঙল প্রতীকের প্রচারণা করে আসছেন।
জাতীয় পার্টির সভা-সমাবেশ থেকে শুরু করে মেয়র মোস্তফার বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে অংশও নেন। করোনা মহামারির শুরুর দিকে বাইসাইকেল চালিয়ে রংপুর নগরের বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষকে ঘরে থাকতে উদ্বুদ্ধ ও জনসচেতনতা বাড়াতে কাজ করেছেন হারুনুর রশিদ।
পঞ্চাশোর্ধ্ব এই কর্মীর আবদার রাখতে মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার বাইসাইকেল সাইকেল চালানোর দৃশ্য এখন ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে। কর্মীর প্রতি মেয়রের ভালোবাসার প্রশংসা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অনেকেই পোস্ট দিয়েছেন।
এ নিয়ে ফেসবুকে দেওয়া একটি পোস্টে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আমরাই পাশে রংপুর’র প্রতিষ্ঠাতা ইঞ্জিনিয়ার আল-আমিন সুমন লিখেছেন, ‘ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। হারুন ভাইকে উপহার দেওয়া নতুন সাইকেল চালিয়ে দেখলেন রসিক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।’
সোহাগ মিয়া নামে আরেকজন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট এরশাদ সাহেব নিজে সাইকেল চালিয়ে ছিলেন। সেই ছবি দেখেছি। এখন তারই দলের নেতা রসিক মেয়র মোস্তফাও সাইকেল চালালেন। তিনি একজন ভালো ও যোগ্য মেয়র।’
এদিকে ভাঙা বাইসাইকেল নিয়ে নগরের অলিগলি ছুটে বেড়ানো দিনমজুর হারুনকে নতুন বাইসাইকেল উপহার দিতে পেরে আনন্দিত মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।
ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, আমার কাছে সবাই সমান। ধনী-গরিবের বিভেদ বুঝি না। আমি সাইকেলটি চালানোর পর যখন হারুনের হাতে তুলে দিয়েছি, তখন তার চোখে মুখে ভীষণ আনন্দ দেখেছি। হয়তো সবাইকে খুশি রখেতে পারব না। কিন্তু আমি সবাইকে খুশি দেখতে চাই।
তিনি আরও বলেন, শুধু দলের নেতাকর্মীই নয়, আমার কাছে দলমত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই সমান। সবাইকে নিয়ে উন্নয়ন করতে চাই। সমস্যা সমাধানে সবাইকে পাশে চাই। করোনার সময়ে ধনী-গরিব সবার বাড়ি বাড়ি গিয়েছিলাম। আমি তখনও যেমন ছিলাম, এখনও তেমন আছি।
২০১৯ সালের ১৬ জুলাই রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ্ ময়দান থেকে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা এইচএম এরশাদের মরদেহবাহী গাড়ি চালিয়ে পল্লীনিবাসে নিয়ে যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। তার ওই সাহসী প্রচেষ্টার কারণে রংপুরে জানাজা শেষে এরশাদের দাফন সম্পন্ন হয়।
ওই দিন মরদেহবাহী গাড়ি চালানো মেয়র মোস্তফার ছবি এবং ভিডিও ভাইরাল হয়। এর আগে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মাসখানেক পর নগরীর সাধারণ রিকশাচালক ও দিনমজুরদের সঙ্গে নিয়ে চায়ের আড্ডায় বসা মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এএম