‘চেয়ারম্যানের কাছে কত্তো গেলাম কিন্তু কেউ একটা ঘর দিলো না’

ষাটোর্ধ্ব কমলা বেগম। স্বামী মারা গেছেন প্রায় ৩০ বছর আগে। স্বামীর মৃত্যুর পর থেকেই ভিক্ষাবৃত্তি করে কোনো রকমে দিন পার করছেন তিনি। তার বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার পলাশতলী ইউনিয়নের পলাশতলী গ্রামে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিয়ের কিছু দিন পর কমলা বেগমের একটি ছেলে সন্তান হয়। কয়েক বছর পরই মারা যান স্বামী কাইয়ুম মিয়া। তারপর থেকেই কমলা ছোট সেই ছেলেকে নিয়ে ভিক্ষায় নেমে পড়েন। এখনো ভিক্ষাবৃত্তি করেই চলে তার সংসার। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় পেয়েছিলেন একটি ভাতার কার্ড। তবে প্রায় ১০ মাস ধরে পাচ্ছেন না কোনো ভাতা।
সরেজমিনে কমলার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশঝাড়ের নিচে একটি দোচালা টিনের ঘরে থাকেন কমলা ও তার ছেলে হারুনুর রশীদ। ওপরে মাথার চাল থাকলেও সাইডে নেই কোনো ভালো বেড়া। ভিক্ষাবৃত্তি ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় টিনের বেড়ার বদলে ঘরের তিন সাইডে দিয়েছেন পলিথিনের বেড়া। সামনে পুরাতন শাড়ি দিয়ে আটকে দিয়েছেন। সেখানেই কমলা তার ছেলের জন্য রান্না করছেন।
স্থানীয়রা জানান, কমলার বাবার বাড়িতে পৈতৃক সম্পত্তি রয়েছে। তবে তার ভাই সেখানে তাকে যেতে দিচ্ছে না। ফলে কয়দিন এর বাড়ি কয়দিন ওর বাড়ি থাকতে থাকতে স্থানীয় একজন দয়া করে এ জায়গাটিতে ঘর বানিয়ে তাদের থাকার অনুমতি দেন। সেখানে প্রায় ১০ বছর ধরে কমলা ও তার ছেলে বসবাস করছেন। খুব শখ করে ছেলেকে বিয়ে করিয়েছিলেন মা কমলা। বিয়ের কয়েক বছরের মধ্যে ছেলের বউ মারা যাওয়ায় ছেলেও কেমন যেন হয়ে গেছে। সারাদিন এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়ান। কোনো কাজ করেন না। মায়ের খোঁজ নেওয়া তো দূরে থাক নিজেরই খোঁজ রাখতে পারে না।
সাদেক মিয়া নামে স্থানীয় একজন বলেন, যে শীত গেল, তাতে দালান ঘরে থেকেই কাঁপুনি উঠে যায়। আর কমলার কী অবস্থা হয়েছে তা আল্লাহ ভালো জানে।
অসহায় কমলা বলেন, চাঁন মিয়ার জাগাত ১০-১২ বছরের মতো থাহি। জাগয়া নাই, ঘর নাই, কী করুম। চেয়ারম্যানের কাছে কত্তো গেলাম, কিন্তু কেউ একটা ঘর দিলো না। পরে নায়েবের কাছে গিয়াও ঘরের জন্য ঘুরেছি, টাকা দিয়াও ঘুরছি, তাও ঘর পাই নাই। শুনছি শেখ হাসিনা নাকি গরিবরারে ঘর দেয়, জায়গা দেয়, তয় আমার ঘর তো দিলো না। মরার আগে কী আমি একটা ভালা ঘরো থাইক্কা মরতারতাম না!
পলাশতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়ার বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। ওই নারীকেও আমি চিনি না। ইউএনও স্যারের মাধ্যমে বিষয়টি শুনেছি। খোঁজখবর নেওয়ার পর বিস্তারিত বলতে পারবো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আজগর হোসেন বলেন, আমরা এ বিষয়টি সাংবাদিকদের মাধ্যমে শুনে খোঁজখবর নিচ্ছি। তবে তিনি ভূমিহীন-গৃহহীনদের তালিকায় থাকতে পারেন। তিনি যদি ‘খ’ শ্রেণিভুক্ত হয়ে থাকেন তাহলে তার নিজস্ব জমিতে ঘরের ব্যবস্থা করতে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।
আরএআর