সুবিধাবঞ্চিত পাহাড়ি নারীদের সহায় অধ্যাপক ফেরদৌসী

পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর বসবাস। তাদের মধ্যে রয়েছেন অসংখ্য সুবিধাবঞ্চিত নারী। যারা হাতের কাজ জানার পরেও অর্থের অভাবে উপকরণ কিনে কাজ করতে পারেন না।
জুম চাষ ছাড়াও পাহাড়ি নারীরা পরিবারের বাড়তি উপার্জনের জন্য বানিয়ে থাকেন পাহাড়ি পোশাক। এতে তারা বাড়তি যে অর্থ পান সেটি দিয়ে চলে তাদের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ চালান।
খাগড়াছড়ির বেশিরভাগ পাহাড়ি পল্লির নারীরা গৃহস্থালির কাজ আর জুম চাষের ফাঁকে কোমরের পিনন ও থামি তৈরি করে স্থানীয় বাজারের বিভিন্ন দোকানে সরবরাহ করে থাকেন। কিন্তু অর্থের অভাবে অনেক সময় তারা সুতা কিনতে পারেন না। অন্যের কাছ থেকে সুতা এনে কাপড় বানিয়ে নির্দিষ্ট পারিশ্রমিকের ভিত্তিতে কাজ করতে হয় তাদের। এভাবে তারা কষ্টের তুলনায় কম পারিশ্রমিক পান। তাদের জন্য নেই কোনো ব্যাংক লোন ব্যবস্থা।

পাহাড়ে ঘুরতে এসে এসব নারীদের কথা জানতে পারেন গাজীপুর সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফেরদৌসী পারভীন। পরে তিনি স্থানীয়দের সহায়তায় সুবিধাবঞ্চিত নারীদের খুঁজে বের করেন। তাদের কাজের সম্পর্কে জেনে তাদেরকে উপকরণ দিয়ে সহযোগিতা করতে শুরু করেন।
পাহাড়ে বসবাস করা সুবিধাবঞ্চিত অসচ্ছল নারীদের স্বাবলম্বী করতে সেলাই মেশিন, মোড়া ও কোমর তাঁত বুননের উপকরণ দিয়ে ১২০ জন নারীর পাশে দাঁড়িয়েছেন অধ্যাপক ফেরদৌসী পারভীন। ওনার এই সামগ্রী বিতরণ করার উদ্দেশ্য অসচ্ছল নারীদের স্বাবলম্বী করা।
খাগড়াছড়ির সুবিধাবঞ্চিত এসব বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ও অসহায় কর্মজীবী নারীদের প্রতি মানবিক সহায়তার অংশ হিসেবে নারীদের প্রতিজনকে ১০ জোড়া মোড়া তৈরির উপকরণ হিসেবে প্লাস্টিকের বেত (রগ) ও টায়ার ও কোমর তাঁত বুননের জন্য প্রতিজনকে ৮ জোড়া থামি বানানোর সুতা এবং কাপড় তৈরির জন্য সেলাই মেশিন দিয়েছেন তিনি। কয়েকজনকে করে দিয়েছেন দোকান।

অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফেরদৌসী পারভীন বলেন, আমি যখন কলেজে চাকরি করতাম তখন থেকেই ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। চাকরি জীবন থেকে অবসরে যাওয়ার পর ভাবলাম অন্য কিছু করা যাক। পাহাড় আমার বরাবরই ভালো লাগে। সেই সুবাদে খাগড়াছড়ি গিয়েছি ঘুরতে। সেখানে সুহৃদদের সঙ্গে আমার পরিচিতি ঘটে। তাদের মাধ্যমেই নৃতাত্ত্বিক মানুষের দুর্দশার কথা জানতে পারি। তাদের কর্মস্পৃহা ও পরিশ্রমের কথা জানতে পারি। তারা পুঁজির অভাবে উপকরণ কিনে কাজ করতে পারে না। আমি তখন সিদ্ধান্ত নেই পুঁজি দিয়ে তাদের সাহায্য করব। আমার নিজের জমানো টাকা দিয়ে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ করছি। আমি চেয়েছি সবসময় নারীদের পাশে থাকতে। সে লক্ষ্যে এখানে এসে নারীদের উদ্যোক্তা বানানোর জন্য যে পুঁজি দরকার তা দিয়ে পাশে থাকছি। বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ও অসহায় নারীদের স্বাবলম্বী করতে আমি স্ব উদ্যোগে এসব কাজ করছি। এ কাজে আমার কোনো স্বার্থ নেই। তবে আমি চাই সংসারের কাজের ফাঁকে ফাঁকে এসব নারীরা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হোক।
তিনি আরও বলেন, আমি কলেজে চাকরি করা অবস্থায় ছাত্র-ছাত্রীদের সহযোগিতার পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় মেয়েদের স্বাবলম্বী করতে চেষ্টা করেছি তবে তেমন সাড়া পাইনি। সর্বশেষ পাহাড়ী নারীদের স্বাবলম্বী করতে কাজ শুরু করার পর থেকে দেখছি এখানে সবাই সফলভাবে কাজ করে টাকা আয় করছেন। তারা নিজের পরিবার নিয়ে সুন্দর জীবনযাপন করছেন। আমি এই মানুষগুলোর পরিবর্তন দেখে নিজেকে সফল মনে করছি। পাহাড়ে এই কাজ আমি চলমান রাখব। সুবিধাবঞ্চিত নারীদের নিয়ে কাজ করে যাব।
জাফর সবুজ/আরকে