দশ হাজার মানুষের জীবনের গতি কমিয়ে দিয়েছে দুটি সেতু

Dhaka Post Desk

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

২১ মার্চ ২০২৩, ০৮:৪৯ পিএম


বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার গারুরিয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ বাজারের ভাড়ানি খালের ওপর ভেঙে পড়া দুটি সেতুর কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পাঁচ গ্রামের কমপক্ষে দশ হাজার মানুষকে। একটি সেতুতে কলাগাছ দিয়ে অপরটিতে গাবগাছ বেঁধে পারাপার করছেন স্থানীয়রা। 

গত সাত বছর ধরে এমন অবস্থায় পড়ে থাকলেও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর আর জনপ্রতিনিধি কেউ উদ্যোগ নেয়নি সেতু মেরামতের। ফলে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে হাজার হাজার বাসিন্দা সেতু দুটি পারাপার হয়। বর্ষার মৌসুমে ভাঙা এই সেতু দিয়ে চলাচলে পুরোপুরি অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ভয়ে অনেকে নৌকায় পার হন এই খাল।
dhakapost.com

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গারুরিয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ বাজার ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের জিনীয়া, খয়রাবাদ, কাঠিপাড়া, বালিগ্রামের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম একটি গার্ডার ও অপরটি লোহার সেতু। সেতু দুটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের আওতায় প্রায় দুই দশক আগে নির্মাণ করা হয়। সেতু চালু হওয়ার পরে স্থানীয় কৃষক, ব্যবসায়ী, স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী ও পথচারীদের দুর্ভোগ কমেছিল। কিন্তু ২০১৭ সালের দিকে সেতুর মাঝখান ভেঙে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল খালেক মৃধা বলেন, কমপক্ষে ৭ বছর ধরে এভাবে সেতুগুলো পড়ে আছে। মানুষের চলাচলের বিকল্প পথ না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছে। আমরা মেম্বার-চেয়ারম্যানের কাছে অনেকবার বলেছি। তারা শুধু আশ্বাস দেয়। সেতু সংস্কারে কোনো উদ্যোগ নেন না।

dhakapost.com

শাহীন খান নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, পাঁচ গ্রামের মানুষ অসহায় সেতু দুটি ছাড়া। মোটরসাইকেল পার করি অনেক ঝুঁকি নিয়ে। এছাড়া অন্য কোনো গাড়ি চলাচল করতে পারে না।

নীলগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী সন্তোষ শীল বলেন, এলাকার মানুষের দুর্ভোগের কারণ এই ভাঙা সেতু। কিন্তু মেম্বার-চেয়ারম্যানরা তাতে কোনো ভ্রুক্ষেপ করেন না। তাদের কাছে বলে কোনো লাভ নেই। 

তিনি বলেন, আমাদের জীবনের উন্নতি হচ্ছে না ভাঙা সেতুর জন্য। সেতু না থাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো নেই। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালে না থাকায় জীবনইতো পঙ্গু হয়ে আছে।

শাহদীনা আফরোজ বলেন, বর্ষায় সেতু পার হওয়া যায় না। প্রায়ই স্কুলে ছেলে-মেয়ে নিয়ে যাওয়ার সময়ে সেতুর ভাঙা অংশ দিয়ে পা ঢুকে আটকে যায়। এটা এক ধরনের মৃত্যু ফাঁদ হয়ে আছে।

বীরমুক্তিযোদ্ধা মোতালেব খান বলেন, উপজেলা প্রকৌশলীর অফিস থেকে অনেকবার এসে মেপে গেছেন। কিন্তু সংস্কার শুরু হয় না। মেম্বার চেয়ারম্যানকে বললে তারা বলেন ‘হবে হবে’। কিন্তু কবে আর হবে তা কেউ বলে না।

একটি ব্যাংকে কর্মরত জুয়েল বলেন, বড় কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলে হয়তো এসব মেরামত করবে না। সেতু নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বললেই আশ্বাস দেন। এখন আমরা কথার কথা শুনতে চাই না। আসলেই কবে সংস্কার হবে সেই দাবি এলাকাবাসীর।

তিনি বলেন, অসুস্থ কাউকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া যায় না। বিপদে কারও পাশে দাঁড়ানোরও সুযোগ নেই। এলাকাবাসী আতঙ্কে থাকে কখন সেতু থেকে সন্তানরা ছিটকে পড়ে ডুবে যায়।
dhakapost.com

গারুরিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এসএম কাইয়ুম খানের সঙ্গে সেতুর বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি প্রথমে কোনো বক্তব্য দিতে চাননি। পরে তিনি বলেন, ওটা নিয়ে কোনো বক্তব্য নেই। চেষ্টা করতেছি। কিন্তু আমাদের প্রকৌশলীর অফিস থেকে জানিয়েছে বড় সেতুর তহবিল না থাকায় হচ্ছে না।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপজেলা প্রকৌশলী আবুল খায়ের মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান বরিশালে অবস্থান করছেন। তার সঙ্গে কথা বলার জন্য বরিশাল তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কার্যালয়ে গেলেও সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি।

তবে বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সজল চন্দ্র শীল জানিয়েছেন, সেতু দুটি সর্ম্পকে এর আগে আমাকে কেউ অবহিত করেনি। তবে যে দপ্তরের আওতায় থাকুক তা মেরামতের জন্য পরের উন্নয়ন সভায় উত্থাপন করবেন এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এমএএস

 

Link copied