কী কারণে দুই স্কুলছাত্র খুন হলো জানেন না স্বজনরা
পটুয়াখালীর বাউফলে কিশোর গ্যাংয়ের ছুরিকাঘাতে নিহত দুই স্কুলছাত্রের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। দুই মায়ের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বর। বুধবার (২২ মার্চ) সন্ধ্যায় হাসপাতালে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়।
নিহত মারুফের মা আসমা বেগম বলেন, বাসায় বসে আমার ছেলের ওপর হামলার খবর শুনি। ছুটে গিয়ে দেখি ছেলেকে একটি ফার্মেসিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে ওদের পেটে গজ কাপড় বাঁধা। তারপর বাউফল হাসপাতালে নিলে জানায় অবস্থা আশঙ্কাজনক। বরিশালে পৌঁছাতে পৌঁছাতে আমার বুকের মানিক চলে গেছে। আমি এখন কাকে নিয়ে বাঁচবো?
তিনি বলেন, কী জন্য আর কারা আমার ছেলেকে হত্যা করেছে তা কিছুই জানি না। সকালে স্কুলে পাঠালাম নিজ হাতে খাবার খাইয়ে। বিকেলে তার লাশ নিয়ে বসে আছি। হত্যাকারীদের প্রকাশ্যে শাস্তি চাই।
অন্যদিকে ছেলের কথা বলতে বলতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন নিহত নাফিজের মা। তিনিও জানেন না কেন তার সন্তানকে হত্যা করা হয়েছে। ‘আমার নাফিস কই, নাফিসরে একটু আমার বুকে দাও’ বলতে বলতে মূর্ছা যান তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিকেলে বিদ্যালয় ছুটি হওয়ার পর ইন্দ্রকুল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্র নাফিজ (১৫) ও মারুফ (১৫) বাড়ি ফিরছিল। পথে ৫-৬ জন কিশোর পূর্ব বিরোধের জের ধরে তাদের দুজনকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তাদের উদ্ধার করে বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাদের বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সেখানকার চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতরা হচ্ছে- পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার ইন্দ্রকূল এলাকার বাসিন্দা মিরাজ মোস্তফা আনসারীর ছেলে নাফিজ মোস্তফা আনসারী ও একই এলাকার বাবুল হাওলাদারের ছেলে মারুফ হাওলাদার। তারা উভয়ই ইন্দ্রকূল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের দশম শ্রেণির ছাত্র।
স্বজনদের দাবি- পাঙ্গাসিয়া এলাকার একটি কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা এ হামলা চালিয়েছে।
ইন্দ্রকুল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ক্লাস শেষ করে তিনি বিকেল ৪টার দিকে লাইব্রেরিতে গিয়ে বসি। কিছু সময় পর হঠাৎ করে দুই শিক্ষার্থী এসে জানায় নাফিজ, মারুফ ও সিয়ামকে বিদ্যালয়ের কাছেই একটি ব্রিজের ওপর মারধর করা হচ্ছে। খবর পেয়ে সেখানে তাৎক্ষণিক গেলে জানতে পারি পাশের একটি ফার্মেসিতে নাফিজ, মারুফ ও সিয়ামকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে গিয়ে নাফিজ ও মারুফের পেটে গজ কাপর পেঁচানো দেখে দ্রুত বাউফল হাসপাতারে নিয়ে যাই। হাসপাতালের চিকিৎসক সিয়ামকে ভর্তি রেখে বাকি দুইজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত বরিশাল নিতে বলেন। বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে আসলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক নাফিজ ও মারুফকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, নিহত নাফিজ ও মারুফের পেটে এমনভাবে ছুরি চালিয়েছে যে ভেতরে হাত ঢুকে যায়। প্রতিটি শিক্ষার্থী আমার সন্তান। আমার দুজন সন্তান এভাবে কেউ খুন করে ফেলবে সেটা মানতে পারছি না। আমি এ হত্যাকাণ্ডের কঠোর বিচার চাই।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মোহাম্মদ কবির আহম্মেদ বলেন, হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাদের মৃত্যু হয়েছে।
হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার আবুল কালাম জানান, বর্তমানে মরদেহ দুটি হাসপাতালের লাশ ঘরে রাখা হয়েছে। সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর