‘আমি মারা গেলে এতিম দুই শিশু সন্তানের দায়িত্ব কে নেবে’

‘বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে আমার স্বামীকে তারা হত্যা করেছে। তবুও তাদের স্বপ্ন পূরণ হয়নি, এখন আমার পরিবারকে হত্যা করতে বাড়ির পাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা। আমাদের যে কোনো মুহূর্তে তারা মেরে ফেলতে পারে। আমি মারা গেলে আমার এতিম দুই শিশু সন্তানের দায়িত্ব কে নেবে। পুলিশকে জানালেও তারা কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না। আমি এই হত্যার বিচার চাই। বাকি আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হোক।’
শুক্রবার (৭ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আবু মুসা ছোটনের হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে দুই শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এসব কথা বলেন ছোটনের স্ত্রী নাজমা খাতুন।
লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের কালীগঞ্জ থানার সামনে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ছোটন হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার, গ্রেপ্তারকৃত আসামি পলাশের ফাঁসির শাস্তি দাবি করেন স্বজনরা।
মানববন্ধনে ছোটনের বড় ভাই সাইফুল ইসলাস খোকন বলেন, হত্যাকাণ্ডের সময় যে ছেলেটিকে ছোটন নিজেই আটক করেছে, তাকে ছাড়া পুলিশ আর কাউকে গ্রেপ্তার করেনি। ২৬ জনের নামে কালীগঞ্জ থানায় মামলা করার পর আসামিরা আমাদের হত্যার হুমকি দিচ্ছে। কিন্তু পুলিশকে এসব বিষয় জানালেও কোনো কাজ হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, মামলা হওয়ার পর আসামিদের নামের তালিকা আমরা পাওয়ার আগেই আসামিদের হাতে চলে যায়। কত টাকায় এসব তালিকা আসামিদের হাতে দেওয়া হয়েছে আমরা জানতে চাই।
ছোটনের মা ছালেমা বেগম বলেন, থানায় নাকি আসামিরা পুলিশের সঙ্গে দেখা করে। কথা টাকায় আসামির সঙ্গে উঠবস করা হচ্ছে। মায়ের বুক খালি হওয়ার পরও আপনাদের ঘুম ভাঙে না? সন্তান যার যায় সেই বুঝে তার কী ক্ষতি হয়। আমি আর সেই সন্তান পাব না। সে ছাত্রলীগ করতো, তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ- আপনার দৃষ্টি দেওয়া দরকার। না হলে আমরা কখনো বিচার পাব না।
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কমলেন্দু রায় মিন্টু, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রেফাজ রাঙ্গা, সাবেক ছাত্র নেতা নুরনবী মেম্বার, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সাদিকুল ইসলাম সজিব, কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মিস্টার রহমান, ছাত্রলীগ কর্মী আলীরাজ আনছারী সঞ্চয় প্রমুখ।
মানববন্ধনে নিহতের পরিবারের সদস্য ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ নেয়। পরে ছোটনের খুনিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবিতে সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেন নেতাকর্মীরা।
গত মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় উপজেলার শ্রুতিধর জামিরবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে খুন হন উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আবু মুসা ছোটন। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে স্থানীয় লোকজন পলাশ মিয়া নামে এক যুবককে আটক করে পুলিশে দেন। এ ঘটনায় নিহত ছোটনের মা ছালেহা বেগম বাদী হয়ে ২৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১২ জনের বিরুদ্ধে কালীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন।
নিয়াজ আহমেদ সিপন/আরএআর