সালিশে ‘পা ধরে ক্ষমা’ চাইতে বলায় বিষপানে প্রাণ দিলেন বৃদ্ধ
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে সালিশে পা ধরে ক্ষমা চাইতে বলায় আব্দুল হামিদ (৬৫) নামে এক বৃদ্ধ বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন। বুধবার (১২ এপ্রিল) দুপুর আড়াইটার দিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এর আগে গত রোববার (৯ এপ্রিল) সেই সালিশ বৈঠকে পা ধরে ক্ষমা চাইতে বলায় ঘটনাস্থলে বিষপান করেন আব্দুল হামিদ।
আব্দুল হামিদ কিশোরগঞ্জ উপজেলার বাহাগিলী ইউনিয়নের উত্তর দুরাকুটি দক্ষিণ পাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি পেশায় ভ্যানচালক ছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, একই গ্রামের নুরুল ইসলামের বাগানের সুপারি চুরি হয়। নুরুল ইসলাম সুপারি গাছের নিচে স্যান্ডেল দেখে সন্দেহ করেন এনামুল হকের ছেলে পায়েল চুরি করেছেন। এ ঘটনায় নুরুল ইসলাম প্রতিবেশী আবুল কালামকে সঙ্গে নিয়ে পরদিন আবার পায়েলের বাড়িতে গিয়ে বিভিন্ন হুমকি-ধামকি দেন। এ সময় কালাম বলেন, নুরুল ইসলামের সুপারি না হয়ে আমার সুপারি চুরি গেলে আমি পায়েলের বাবা-মায়ের হাড্ডি ভেঙে দিতাম।
এ কথা শুনতে পেরে পায়েলের বৃদ্ধ চাচা ভ্যানচালক আব্দুল হামিদ প্রতিবাদ করে বলেন, যে সুপারি চুরি করেছে আপনারা তাকে বলেন। এখানে কেন ঝগড়া করতে এসেছেন।
বৃদ্ধের এ কথার ক্ষোভ ধরে আবুল কালাম বাদী হয়ে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ সরেজমিনে গেলে কালাম থানায় মামলা হয়েছে এ কথা বিভিন্ন লোকের কাছে প্রচার করে। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গ্রাম্য মাতব্বর এমদাদুল হক ও ছফিয়ার রহমানের নেতৃত্বে একটি সালিশ বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
গত ৯ এপ্রিল সেই সালিশ বৈঠকে ওই বৃদ্ধকে নুরুল ইসলাম এবং আবুল কালাম শর্ত দেন যে পা ধরে ক্ষমা চাইলে তারা এ ঘটনা মিমাংসা করবে। তাদের এ কথায় বৃদ্ধ হামিদ অপমানিত বোধ করে প্রকাশ্যে সবার সামনে বিষপান করেন। এলাকাবাসী তাকে তাৎক্ষণিক কিশোরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করালে সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আব্দুল হামিদ।
কিশোরগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাজীব কুমার রায় বলেন, পায়েলের পরিবারের হুমকি-ধামকির কারণে আবুল কালাম থানায় একটি জিডি করেছেন। ওই জিডির প্রসিকিউশন মামলার জন্য কোটের অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। বিষপানে আত্মহত্যার বিষয়ে একটি অপমৃত্যুর মামলা হবে।
শরিফুল ইসলাম/আরকে