পানির মতো কি ভারত মাছও আটকে দিল

‘সারা জীবন মাছ ধরি সংসার চালাছুং (চলেছে), আগোৎ (আগে) তিস্তা নদীতে মাছ ভাসি বেড়াইছে (ভেসে বেড়াত)। সেই মাছ দিয়ে কত সুন্দর দিন যাইত। এ্যালা দিনে দিনে মাছ কোনবা আর খুঁজি যায়ছোল না বাহে! পানিও এ্যালা (এখন) নাই, পানির মতো কি মাছও আটকে দিল ভারত? এভাবে থাকলে হামার পরিবার না খেয়া মরবে।’ এভাবেই আক্ষেপ করছিলেন তিস্তাপাড়ের ৭০ বছর বয়সী জেলে ছফর মিয়া।
ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, বন্যার সময় পানি থাকে, তখন কিছু মাছ পাওয়া যায়। কিন্তু এত পানিতে মাছ ধরা যায় না। এভাবে মাছ কমে গেলে তিস্তা চরাঞ্চলের জেলেদের না খেয়ে মরতে হবে। সরকার আমাদের জন্য বিকল্প কাজ দিক। না হলে পরিবার নিয়ে পথে থাকতে হবে।
লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলায় ৬৩টি চরাঞ্চল আছে। এসব চরাঞ্চলে বেশির ভাগ জেলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। কিন্তু ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারে ফলে প্রতিবছর তিস্তাসহ কয়েকটি নদী পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। ফলে জেলে মাছ ধরতে না পেরে অনেক কষ্টে দিন পার করছেন। এখানকার কয়েক হাজার জেলে পরিবার কর্মহীন হয়ে বাড়িতেই অলস সময় কাটাচ্ছেন।
জীবিকার জন্য এসব পরিবার নদীর ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু জাল ও নৌকা নিয়ে নদীতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেষ্টা করে কিছু মাছ শিকার করলেও তা দিয়ে চাল কেনার মতো টাকা জুটছে না। তাই জাল শুকিয়ে ঘরে এসে আবার পরের দিন ছুটে যান নদীর বুকে। অনেকেই পৈতৃক পেশা ছেড়ে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে সংসার চালাচ্ছেন।

হাতীবান্ধা সানিয়াজান নদীতীরবর্তী জেলে বক্কর উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, নদীতে পানি নেই, মাছও নেই। যতটুকু পানি আছে, সেটাতে মাছও পাওয়া যায় না। আগে প্রতিদিন মাছ ধরে আয় হতো একজনের ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। এখন পাওয়া যায় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। এই টাকায় আমাদের কিছু হয় না। এভাবে মাছ পাওয়া না গেলে আমাদের পরিবার না খেয়ে একদিন মরে যাবে।
একই গ্রামের জেলে সাইফুল ইসলাম বলেন, আগের মতো জালে মাছ ধরা পড়ে না, প্রচণ্ড রোদে মাছ ধরতে ঘুরে বেড়ায়। বেলাশেষে বাড়িতে ফিরতে হয় খালি হাতে। চড়া সুদে ঋণ নিয়ে সংসার চালাতে হচ্ছে সংসার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এত মানুষের জন্য করছে। কিন্তু জেলেদের জন্য কিছুই করে না।

তিস্তাপাড়ের আরেক জেলে ফারুক হোসেন বলেন, তিস্তায় মাছ না পেয়ে অনেকেই এ পেশে ছেড়ে দিচ্ছেন। পৈতৃক পেশা ছেড়ে দিনমজুর কৃষিশ্রমিক ও রিকশা বা ভ্যান চালায়, আবার কেউ কেউ গার্মেন্টসে কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। ঢাকায় গিয়ে বেকার থাকছেন।
লালমনিরহাট সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. রাসেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, তিস্তায় যখন পানি থাকে, তখন কিছুটা মাছ পাওয়া যায়। বর্তমানে তিস্তা নদীতে পানি তেমন নেই। ফলে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। সরকার জেলেদের জন্য সুবিধা দিয়ে রাখেছে। কিন্তু তারা আসেন না।
এনএ