ফরিদপুরে প্রাইভেট কারচালক হত্যার রহস্য উন্মোচন

ফরিদপুরে প্রাইভেট কারচালক মো. উজ্জ্বল (৫০) হত্যার রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। ঘাতকরা ঈদের আগে টাকা সংগ্রহের জন্য পূর্বপরিচিত চালক উজ্জ্বলের কার ভাড়া করে এনে তাকে হত্যা করে। হত্যায় জড়িত ছিল তিনজন। এদের মধ্যে দুইজন ও তাদের আরও দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে নিজ কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান।
গত ১৯ এপ্রিল দুপুর ১২টার দিকে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার গাজনা ইউনিয়নের গাজনা-মথুরাপুর সড়কের মথুরাপুর গ্রামের মান্দারতলা খালেরপাড় থেকে প্রাইভেট কার চালক মো. উজ্জ্বলের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত মো. উজ্জ্বল সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার তুয়ারডাঙ্গা গ্রামের জুবায়ের হোসেনের ছেলে। তিনি ভাড়ায় প্রাইভেট কার চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সাভারের আশুলিয়া এলাকায় বসবাস করতেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এ হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে দুইজন সরাসরি হত্যায় অংশ নেন। তারা হলেন- আশুলিয়া এলাকার নূর মোহাম্মদ ওরফে তপু (৩৩), গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর বাগঝাপ গ্রামের সাব্বির মোল্লা (১৯) ও আশুলিয়া এলাকার মো. আরাফাত মোল্লা (৩৩)। এর মধ্যে নূর মোহাম্মদ ও সাব্বিরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরাফাতকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি চালককে হত্যার পর গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যে চালককে ভাড়া করা হয়েছিল তিনি হলেন কাশিয়ানীর বাগঝাপ গ্রামের রানা মোল্লা (২২)। এছাড়া গাড়িটি বিক্রির সঙ্গে জড়িত ছিলেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার হাড়ভাঙ্গা গ্রামের মুজিবুল ইসলাম ওরফে সাইফ (৩০)। পুলিশ রানা মোল্লা ও মুজিবুল ইসলামকেও গ্রেপ্তার করেছে।
পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান বলেন, এ হত্যার মূলহোতা নূর মোহাম্মদ ও আরাফাত। তারাই তাদের পরিচিত ভাড়ায়চালিত প্রাইভেট কার চালক উজ্জ্বলকে ১৮ এপ্রিল বিকেলে ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে আসা-যাওয়ার কথা বলে ভাড়া করেন। পথে কাশিয়ানী থেকে তাদের সঙ্গে যোগ দেন সাব্বির। কাশিয়ানী থেকে ফেরার পথে মাঝিগাতি এলাকায় তারা ইফতার করেন। এ সময় চালককে পানীয়র সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়। পরে মাঝিগাতি থেকে ফরিদপুরের বোয়ালমারীর মাঝকান্দি এলাকায় চালক উজ্জ্বলকে গলায় রশি দিয়ে হত্যা করা হয়। উজ্জ্বলের বুকের বাম দিকে ছুরি দিয়ে ছয়টি আঘাত করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। পরে মধুখালীর মথুরাপুর গ্রামের মান্দারতলা খালের পাড় এলাকায় মরদেহ ফেলে রেখে গাড়িটি নিয়ে পালিয়ে যায় ঘাতকরা।
পুলিশ সুপার বলেন, পুলিশ তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় সোমবার (২৪ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর গ্রামে শ্বশুরবাড়ি থেকে নূর মোহাম্মদকে গ্রেপ্তার করে। পরে তার দেওয়া তথ্যে সোমবার দিবাগত রাত ২টার দিকে কাশিয়ানীর বাগঝাপা গ্রাম থেকে সাব্বির শেখ ও রানা মোল্লাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে মঙ্গলবার ভোরে মধুখালী রেলগেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মুজিবুল ইসলামকে। এর আগে জিপিএস ট্র্যাকার ব্যবহার করে গত ১৯ এপ্রিল রাতে ঢাকার কাফরুল থানার আয়ুর্বেদিক কলেজের গ্যারেজ থেকে ছিনতাই হওয়া গাড়িটি উদ্ধার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. ইমদাদ হোসাইন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অপস) শেখ আব্দুল্লাহ বিন কালাম, সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী সার্কেল) সুমন কর, মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহীদুল ইসলাম, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মধুখালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) চম্পক বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন।
মধুখালী থানার ওসি মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী মঞ্জুয়ারা আক্তার বাদী হয়ে গত ১৯ এপ্রিল রাতে মধুখালী থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
ওসি বলেন, মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে ফরিদপুরের ৪ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক গৌর সুন্দর বিশ্বাসের কাছে নূর মোহাম্মদ, সাব্বির শেখ ও রানা মোল্লা হত্যার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দি গ্রহণ শেষে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। গ্রেপ্তার অপর আসামি মুজিবুল ইসলাম আদালতে জবানবন্দি দেননি। তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরে প্রয়োজন হলে তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এ হত্যা মামলার পলাতক আসামি আরাফাতকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
জহির হোসেন/আরএআর