রাজশাহীতে পাকেনি আম, ওঠেনি বাজারে

প্রকাশিত ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ অনুযায়ী আজ বৃহস্পতিবার (৪ মে) থেকে রাজশাহীর বাজারে গুটি জাতের আম ওঠার কথা। কিন্তু রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের হাট বানেশ্বর আমশূন্য। এই হাটটিতে একটি আমও বিক্রির জন্য নিয়ে আসেননি চাষি বা ব্যবসায়ীরা। হাটের ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে।
আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের দাবি- এখন কোনো জাতের আম পাকেনি। গুটি জাতের আমও পাকা শুরু হয়নি। এখনও ১০ থেকে ১৫ দিন পরে গুটি জাতের আম পুরোদমে পাকা শুরু হবে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর হাটে কেউ আম নিয়ে আসেননি বিক্রির জন্য। একইভাবে ছিলো না কোনো ক্রেতাও। তবে বড় ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা হাটের পরিস্থিতি দেখতে এসেছেন। তাদের হাটের ভেতরে চেয়ারে বসে গল্প করতে দেখা গেছে।
আরও পড়ুন : আম পরিবহনে ট্রাক ভাড়া বেশি নিলে কঠোর ব্যবস্থা
বনেশ্বর হাটের আম ব্যবসায়ী রাজু আহম্মেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আম পাড়ার জন্য ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ প্রকাশ করা হয়েছে শুনেছি, তবে দেখিনি। ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আজ থেকে গুটি জাতের আাম বাজারে আসার কথা ছিল। কিন্তু কেউ আম নিয়ে আসেনি। কারণ আম এখনো পাকা শুরু হয়নি। হয়তো গাছে দুই-একটা পাকা আম দেখা গেছে। সেগুলো রোদ বা খরার কারণে পাকতে পারে। সেই আম দেখে সব গুটি আম পাকা শুরু করেছে বলে ধরা যাবে না। গুটি জাতের আম পুরোদমে পাকা পেতে ১০ থেকে ১৫ দিন অপেক্ষা করতে হবে।
বানেশ্বর হাটের আমের আড়তদার মুক্তার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, গুটি জাতের আম এখনো পুরোদমে পাকতে শুরু করেনি। গত বছর মে মাসের ১৫ দিন পরে আম পাড়ার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু এই বছর ১০ থেকে ১১ দিন আগে তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। এখনো গাছে পাকা আম দেখা দেয়নি। অনেক আমের আঁটি হৃষ্টপুষ্ট হয়নি। গুটি আম পুরোদমে পাকতে সময় লাগবে এখনো কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ দিন। তারপরে আম ঠিক মতো খাওয়া যাবে। তবে এখন যারা গুটি জাতের আম পাড়ছেন সেগুলো ঘরে রেখে পাকাতে হবে। সরাসরি পাকা আম খেতে পারবে না।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও আমের দামের বিষয়ে কথা হয় আড়তদার মাহাতাব আলীর সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত বছরের আগের বছর আমের দাম ছিল না বললেই চলে। গত বছর আমের দাম ভালো পাওয়া গেছে। আম উৎপাদন কম হয়েছিল বলে। এ বছর প্রতিটি গাছে প্রচুর আম এসেছে। আশা করা যাচ্ছে আম উৎপাদন বেশি হবে। তারপরও গত বছরের মতোই দাম থাকবে। কারণ আম উৎপাদন করতে কৃষক বা চাষির সার, কীটনাশক বাবদ বেশি টাকা খরচ হয়েছে।
আরও পড়ুন : রাজশাহী থেকে ২০০ কোটি টাকার আম রপ্তানির সম্ভাবনা
তিনি বলেন, বড় ধরনের ঝড় না হলে অনেক আম পাওয়া যাবে। কিন্তু ঝড় ছাড়া দমকা হাওয়াতে আম ঝরবে না। কারণ কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতে আমের বোঁটা শক্ত হয়ে গেছে। একই সঙ্গে আম ঝরাও কমে গেছে। এ বছর গুটি বা আটি আম সর্বনিম্ন ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হতে পাবে। তারপরও আমদানির ওপরে নির্ভর করবে আমের দাম।
বানেশ্বর আম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আম পাকার যে বয়স সেটাই হয়নি। যে গাছের মাথায় আগাম মুকুল এসেছিল সেটার আম পেকেছে। তবে সব না। এখনো গোপাল ভোগ আমের আটিই ঠিক মতো হয়নি। আমাদেরও বাগান আছে। আমরা জ্যৈষ্ঠ মাসে আম নামানো শুরু করবো। এখনো কিছু আম নামানো হচ্ছে যেগুলো আচারের জন্য। এছাড়া পাকা আম এখনো পাওয়া যাচ্ছে না।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, গুটি আম তো কম। পাকা শুরু হয়ে গেছে। চারঘাটের সাজিপুর হালদার পাড়ায় ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ গুটি জাতের আমের গাছ রয়েছে। সেগুলোর আম পাকা শুরু হয়েছে। একইভাবে অন্য জায়গাতেও আম পাকা শুরু হয়েছে। এই চারঘাটের আম তো আর বানেশ্বর বাজারে যাবে না। সরাসরি ঢাকায় পাঠাচ্ছে চাষিরা। এতে তারা ভালো দাম পাচ্ছে।
শাহিনুল আশিক/আরএআর