ওসির বিরুদ্ধে যুবলীগ নেতাকে পিটিয়ে হাত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ
ঠাকুরগাঁওয়ে এক যুবলীগ নেতাকে তুলে নিয়ে মারধর ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল উদ্দীনের বিরুদ্ধে। গত ২৯ এপ্রিল জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান পুলককে থানায় নিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। এতে তার বাম হাত ভেঙে গেছে। এ ঘটনায় পুলিশ সুপার, রেঞ্জ ডিআইজি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছে জেলা যুবলীগ।
ভুক্তভোগী আসাদুজ্জামান পুলক বলেন, গত ২৯ এপ্রিল সন্ধ্যার দিকে ঠাকুরগাঁও সাধারণ পাঠাগার চত্বরে অনুষ্ঠিত বৈশাখী মেলা দেখতে যান জেলা যুবলীগের ক্রীড়া সম্পাদক খালিদ সিরাজ রকি। এ সময় কোনো কারণে রকির সঙ্গে পুলিশের কথা কাটাকাটি হয়। বিষয়টি এক বড় ভাই আমাকে জানান। তিনি জানান রকিকে পুলিশ থানায় নিয়ে যাচ্ছে। আমি তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে রকিকে আটকের কারণ জানতে চাইলে ওসি কামাল হোসেন ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে পুলিশের পিকআপে তুলে নেন। এরপর আমি ওসিকে বলি- নিজের অজান্তে যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে বা আপনি কষ্ট পেয়ে থাকেন তাহলে আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি। কিন্তু তিনি কোনো কথাই শোনেননি। বরং আমাকে পিকআপে তুলে থানায় নিয়ে যান। পরে থানায় নিয়ে ওসির রুমে হাতে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে চোখে গামছা বেঁধে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। এতে আমার বাম হাত ভেঙে যায়।
তিনি আরও বলেন, ঘটনার দিন রাত ৩টার দিকে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ভালোভাবে চিকিৎসা নিতে দেয়নি। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েই তারা আমাকে আবার থানায় নিয়ে আসে। পরদিন সকাল ৯টার দিকে আমাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে নিজের অপরাধ ঢাকতে ১৫১ ধারায় আমার ও যুবলীগ নেতা রকির বিরুদ্ধে মামলা করে। এ মামলায় ২ মে আদালতের মাধ্যমে জামিন পেয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছি। বিষয়টি সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে ওসির বিচার দাবি করেন এই যুবলীগ নেতা।
পুলকের স্ত্রী শাহনাজ শারমিন সুচি বলেন, একজন পুলিশ কর্মকর্তা এমনভাবে মানুষকে মারতে পারেন না। তিনি আমার স্বামীর হাত ভেঙে দিয়েছেন।
জেলা যুবলীগের ক্রীড়া সম্পাদক খালিদ সিরাজ রকি বলেন, মেলার মধ্যে একটি দোকান নিয়ে ঝামেলা হয় ছোট ভাইদের। এটা শুনে আমি সেখানে যাই এবং যাওয়ার পরে সেই বিষয়টা আমি সমাধান করতে চাই। সেই সময় পুলিশ আমাদের সঙ্গে বাড়াবাড়ি করে। পুলক ভাই এলাকার বড় ভাই, তিনি এই ঝামেলার কথা শুনে মেলায় আসেন। পুলক ভাই যখন সেখানে উপস্থিত হন তখন পুলিশ পুলক ভাইয়ের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। পুলক ভাই জানতে চান কেন আমাকে উঠিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এতে পুলিশ ক্ষেপে যায়। পুলক ভাইকে উঠিয়ে নিয়ে থানার মধ্যে বেধড়ক পেটানো হয়।
এ বিষয়ে জেলা যুবলীগের সভাপতি আব্দুল মজিদ আপেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটি একটি পলিটিক্যাল বিষয়, এ বিষয়ে আমরা এসপি অফিস, ডিআইজি অফিস এবং সংসদ সদস্য বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ দত্ত সমীর বলেন, এ বিষয়ে কেন্দ্রে লিখিতভাবে জানিয়েছি। আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ডিআইজি বরাবর অভিযোগ দিয়েছি।
ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. মো. নাসিরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, রোগীর ফাইল দেখে মনে হচ্ছে কোনো আঘাতে তার বাম হাতের হাড় ফেটে গেছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা অভিযোগ তদন্ত করছি। রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওই রাতে আমাদের কাছে ফোন আসে কতিপয় লোক মদপান করে বৈশাখী মেলায় নারীদের সঙ্গে অশ্লীল আচরণ করছে। পরে সেখানে পুলিশ পাঠানো হলে দুষ্কৃতকারীরা পালিয়ে যায়। পথিমধ্যে মেলার আয়োজক কর্তৃপক্ষ ও সাধারণ জনগণের সহযোগিতায় রকি নামে একজনকে আটক করা হয়। উপস্থিত জনতা রকিকে কিলঘুষি মেরে পুলিশে তুলে দিলে তাকে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরবর্তীতে পালিয়ে যাওয়া আরেকজনকে ডিসি পার্কের সামনে থেকে জনগণ ও পুলিশ ধরতে সক্ষম হয়। সে পালিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তায় পড়ে গিয়ে আহত হয়। তাই সেখান থেকে তাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেই। পর দিন তাকে আমরা ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫১ ধারা মোতাবেক আদালতে সোপর্দ করি।
হাত ভেঙে দেওয়ার বিষয়ে ওসি বলেন, নির্যাতনে হাত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ মিথ্যা। কারণ তারা চেয়েছিল আসামিদের ছাড়িয়ে নিতে। থানায় পুলকের বিরুদ্ধে পাঁচটি ও রকির নামে ৯টি মামলা রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় মানুষকে জিম্মি করে চাঁদা আদায় ও পুলিশকে মারধরের একাধিক মামলা রয়েছে।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও-১ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
আরএআর