জমি বিক্রি করে শহীদদের স্মরণে ৫২ হাজার তালগাছ লাগালেন বৃদ্ধ
বৃদ্ধ খোরশেদ আলীর বয়স ৮০ বছর। বয়সের ভারে নুইয়ে পড়েছেন। পেশায় তিনি একজন পল্লী চিকিৎসক। মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি তার রয়েছে অগাধ শ্রদ্ধা। তাই খোরশেদ আলী মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত শহীদদের স্মরণে বিভিন্ন সড়কে ৫২ হাজার তালগাছের চারা রোপণ করেছেন। তার ইচ্ছা জীবনের শেষদিন পর্যন্ত যেন ১ লাখ তালগাছ লাগিয়ে যেতে পারেন।
শনিবার (১৪ মে) ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের দুই ধারে লাগানো গাছের পরিচর্যা করছেন তিনি। এভাবে গত ৯-১০ বছর ধরে বিভিন্ন উপজেলার সড়কে এ গাছগুলো লাগিয়েছেন তিনি। এই মহৎ কাজ করতে গিয়ে নিজের কৃষি জমি পর্যন্ত বিক্রি করেছেন তিনি। তবুও তিনি থেমে থাকেননি। নিজের টাকায় আঁটি কিনে বিভিন্ন সড়ক ও গ্রামীণ রাস্তার পাশে রেললাইনের ধারে বৃক্ষরোপণ করেন তিনি।
গাছ পরিচর্যার এক ফাঁকে বৃদ্ধ খোরশেদ আলীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই ইউনিয়নের পাহাড়ভাঙ্গা এলাকায় তার বাড়ি। স্ত্রী আর ৭ ছেলে ও ৩ মেয়ে নিয়ে তার সংসার। আয়ের উৎস বলতে কেবল নিজের অল্প কিছু কৃষি জমি আর পল্লী চিকিৎসা দিয়ে যতটুকু অর্থ উপার্জিত হয় ততটুকুই। এ দিয়েই চলে তার সংসার।
এ বয়সে এসেও এত হাজার হাজার তালগাছ কেন রোপণ করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে খোরশেদ আলী বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে যাদের আত্মত্যাগের জন্য আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি সেই সব বীর শহীদদের আত্মার শান্তি কামনায় আমি এই উদ্যোগ নিয়েছি। একই সঙ্গে মানুষ যাতে বজ্রপাত থেকে রক্ষা পায় তাই সড়কের দুই ধার দিয়ে এ পর্যন্ত ৫২ হাজার তালগাছের চারা রোপণ করেছি। তবে ইচ্ছে ১ লাখ গাছ রোপণ করা। প্রতিদিন মোটরসাইকেলে করে বিভিন্ন সড়কে গিয়ে ১০০টি করে গাছের পরিচর্যা করি। তবে গাছগুলো কিছু দুষ্টু প্রকৃতির লোক উপড়ে ফেলছে। গাছগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরকারি সহায়তা কামনা করেন এ বৃক্ষপ্রেমী।
ওই গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল আলিম বলেন, এই হুজুর দীর্ঘদিন ধরে অনেক গাছ লাগিয়েছেন। মানুষের উপকার করার জন্য তিনি এই গাছগুলো লাগিয়েছেন এবং নিজ খরচে তিনি এই কাজগুলো রোপণ করছেন। অনেক সময় তিনি লোক নিয়ে এই চারাগুলো রোপণ করেন। তিনি সাধারণত রাতের বেলায় চারা রোপণ করেন। কারণ দিনে চারা রোপণ করলে কেউ চারাগুলো নিয়ে যেতে পারে। সাধারণত রাত ১২টা থেকে ৩টার মধ্যে এই চারা রোপণ করেন তিনি।
একই গ্রামের আরেক বাসিন্দা সাগর আলী বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে নিজের টাকা দিয়ে এই চারা রোপণ করেন। এ নিয়ে তার পরিবারের মধ্যে অনেক সময় ঝগড়া হয়েছে আমরা শুনেছি। তিনি জমি বিক্রি করে এই চারা রোপণ করেন। তার এই মহৎ কাজের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে যেন তাকে সম্মাননা দেওয়া হয়।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুল হক বলেন, খোরশেদ আলী নিজ উদ্যোগে তালগাছের বীজ রোপণ করে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় তালগাছের ভূমিকা অনেক। ইউপি কার্যালয় থেকে তার গাছের রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে সহযোগিতা করা হবে।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মো. সামসুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা বিষয়টা জানতে পেরেছি। তিনি এই কাজ তার নিজের টাকা দিয়ে করেন আমরা চেষ্টা করব আমাদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করার। যাতে তিনি এই মহৎ কাজটি চালিয়ে যেতে পারেন।
আরকে